শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হরেক স্বাদের আচারে সাজানো রুবিনার ‘রুবা’স স্পেশাল’

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

হরেক স্বাদের আচারে সাজানো রুবিনার ‘রুবা’স স্পেশাল’

খিচুড়ির সঙ্গে একটু আচার না হলে যেন অনেকের চলেই না। একসময় আচার বলতে কেবল, আম, চালতা, বরই বা জলপাইয়ের আচার চিনত মানুষ। তবে অনলাইন উদ্যোক্তাদের কারণে বর্তমানে হরেকরকমের আচার চেখে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন সবাই। আচার নিয়ে কাজ করেন এমনই একজন অনলাইন উদ্যোক্তা আয়েশা আক্তার রুবিনা। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আড্ডায় জীবনের নানা গল্প, ব্যবসা নিয়ে নানা অনুভূতি প্রকাশ করেন এই তরুণী।

রুবিনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল তার। প্রতিবছর স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনাও করতেন। 


বিজ্ঞাপন


acar

ছেলেবেলা বেশ আনন্দেই কেটেছে রুবিনার। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘অনেক অনেক মজার স্মৃতি আছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে আমি ছোটবেলায় অনেক গাছে উঠতাম। আমাদের নিজেদের অনেক বড় বাড়ি ছিল। পুরো বাড়িটার চারপাশে অনেক গাছপালা ছিল। বিশেষ করে আমি পেয়ারা গাছে উঠতাম। বলে রাখা ভালো পেয়ারা আমার অনেক পছন্দের ফল। একদিন সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার বন্ধুকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম এই কারণে যে তাকে দেখাব আমি অনেক উঁচু একটা ঢালে নিচ থেকে লাফ দিয়েই কীভাবে ঝুলতে পারি। যেই কথা সেই কাজ। লাফ ঠিকই দিয়েছিলাম কিন্তু সেই ঢাল আর ধরতে পারি নাই। ধপাস করে নিচে পড়েছিলাম আর সবাই হাসতে হাসতে শেষ। কী যে ব্যথা পেয়েছিলাম! কিন্তু ভাবটা এমন ছিল কিছুই হয় নাই।সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে।’

আরও পড়ুন- 
একাকিত্ব ছেড়ে গয়না ব্যবসায়ী অন্যা

বোঝা গেল দস্যিপনায় শৈশব কাটিয়েছেন এই তরুণী। শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় এবং উত্তরা হাই-স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন রুবিনা। আজিমপুরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে শেষ করেছন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পড়েছেন শিল্পকলা এবং সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগে। 


বিজ্ঞাপন


acar

বর্তমানে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে রুবিনা। প্ল্যান করে এই পথে আসা হয়নি। রুবিনা বলেন, ‘আমি সবসময় বন্ধুদের বাসায় গেলে বাসায় যে আচার বানাতাম খাওয়ার জন্য সেগুলো বক্সে করে নিয়ে যেতাম। একদিন এক বন্ধুর বাসায় আচার নিয়ে গেলাম। তার বাসায় সবাই খেয়ে খুব প্রশংসা করল। পরদিন বন্ধু ফোন দিয়ে বলল তুই এটাকে কাজে লাগাতে পারিস। অনলাইনে একটা পেইজ খুলে ফেল। সেইটাই মাথায় ঢুকে যায়। এভাবেই অনলাইন ব্যবসায় আসা।

নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রুবা’স স্পেশাল’ রাখেন এই নারী উদ্যোক্তা। শুরুটা ২০১৮ সালে। তবে পড়াশোনার কারণে খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না। যদি বর্তমানে তার পুরোটা সময় কাটে ব্যবসা ঘিরেই। 

acar

কী নিয়ে কাজ করেন? প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে রুবিনা বলেন, ‘মূলত আচার আর পেইন্টিং নিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথমদিকে পেইন্টিং এর মাত্রা একটু বেশি ছিল। কিন্তু সময়ের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাত্রাটা কমিয়ে দিয়েছি। কারণ পারিশ্রমিক অনুযায়ী আশানুরূপ মূল্যায়নের অভাব। আমি মূলত গ্লাস পেইন্ট এবং আগুনে পুড়িয়ে কাঠে ডিজাইন করি। নিজের ডিজাইনের পাশাপাশি কাস্টমাইজড ডিজাইন ও করে থাকি।’

আরও পড়ুন- 
ছবিতে জীবন ও প্রকৃতির গল্প বলেন আশরাফুল ইসলাম শিমুল

‘তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আচারটাই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। সিজনাল ফল থেকে শুরু করে মোটামুটি সব ধরনের আচার বানিয়ে থাকি। সারা বছরব্যাপী আচারের চাহিদা আছে। সেই সঙ্গে দেশের বাইরেও নিজ উদ্যোগে অনেকেই আমার আচার নিয়ে যায়। কাতার, দুবাই, জার্মানি, সৌদি আরব, আমেরিকা, ইতালি, লন্ডনসহ নানা দেশে আমার আচার নিয়ে গেছে অনেকে’—যোগ করেন তিনি। 

acar

২৫০০ টাকা মূলধনে কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে মাসিক আয় ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে থাকে। মাঝেমধ্যে এর চেয়ে কিছুটা কম বা বেশিও হয়ে থাকে। পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং কাজের পরিধির ওপর আয় নির্ভর করে। 

আরও পড়ুন- 
ক্রেতার নাগালে ব্র্যান্ডের লিপস্টিক তুলে দিতেই জেসমিনের পথচলা

ক্রেতাদের থেকে নানা অভিজ্ঞতা পেয়েছেন রুবিনা। তেমনই এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘একজন কাস্টমর যিনি দেশের বাইরে থাকেন তিনি একবার ম্যাসেজ দেন। ম্যাসেজটা ছিল, ‘আপু গতকাল দেশ ছেড়ে এসেছি। এই পড়ন্ত বিকেলে জানালায় বিষণ্ণ মন নিয়ে বসে আছি। খুব কষ্ট লাগছে। দেশের কথা মনে পড়ছে আর আপনার চালতার আচারটা খাচ্ছি। বুঝতে পারছি এত মজার আচারটা একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে। চাইলেই আর খেতে পারব না।’ এই ম্যাসেজটা পড়ার পর সেই মুহূর্তে আমার চোখে পানি চলে আসছিল।।দেশের খাবারের স্বাদ মানুষকে সহজেই দেশকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’

acar

ব্যবসায় পরিবারের পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন রুবিনা। মা-বাবা দুজনেই সব পরিস্থিতিতে পাশে থাকেন। নিজের উদ্যোগকে দেশ ও দেশের বাইরে সব যায়গায় দেখতে চান এই তরুণী। শুধু অনলাইনে নয়, অফলাইনে বাজারজাতকরণের স্বপ্ন দেখেন। দেশের প্রতিটি শপে যেন তার আচার থাকে এইটাই এখন তার একমাত্র লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে রুবিনা। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর