শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

একাকিত্ব ছেড়ে গয়না ব্যবসায়ী অন্যা

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

একাকিত্ব ছেড়ে গয়না ব্যবসায়ী অন্যা

কেউ নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। কেউবা পর্দার আড়ালে থাকাটাই প্রাধান্য দেন বেশি। দ্বিতীয় দলের একজন আগাথা অন্যা মন্ডল। পেশায় একজন শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে একজন উদ্যোক্তাও। পড়াশোনা আর ব্যবসা দুটোকেই সমানতালে সামলে যাচ্ছেন এই তরুণী। 

ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন অন্যা। পুরোনো বাড়ির শৈল্পিক নকশা সবসময় তাকে টানতো। ছোটবেলার স্বপ্নকেই বাস্তবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।


বিজ্ঞাপন


girlস্বপ্নকে ধীরে ধীরে বাস্তবের রূপ দিতে ভালোবাসেন অন্যা। হোক তা পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে। ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ খুললেও পুরোদমে কাজে নামের ২০১৭ সালে। এই দুই বছরে ধীরে ধীরে অনলাইন ব্যবসা জগত বুঝেন, নিজের কাজ গোছান। অন্যার অনলাইন প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কাদম্বরী’। নামটা শুনেই কেমন যেন একটা পুরোনো দিনের ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৌদির নাম বলেই হয়তো। 

এই নাম কেন বেছে নিলেন, জানতে চাইলে অন্যা বলেন, ‘টিনএজে বই পড়ার সময় কাদম্বরী দেবীর চরিত্র খুব ইউনিক ও ক্লাসি লেগেছিল। জ্ঞানদানন্দিনী বা ঠাকুর বাড়ির অন্য মেয়েদের মতো পর্দার সামনে না এলেও তিনি প্রচণ্ড ক্লাসি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে আমি নিজেও পর্দার সামনে আসতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। সেখান থেকেই কাদম্বরী নাম রাখা হয়।’

girlপ্রতিষ্ঠানের নামে নিজের ছায়া হয়তো রাখতে চেয়েছেন অন্যা। তার জন্যই এই নামকরণ। কাদম্বরীতে কী পাওয়া যায়? অন্যা উত্তর দেন, ‘প্রথম থেকেই কাদম্বরী হ্যান্ডক্রাফটেড ও ইমপোর্টেড জুয়েলারি বিক্রি করে। আমাদের বিক্রির তালিকায় নিজস্ব ডিজাইনের দেশী কারিগরদের জুয়েলারি, আফগান ভিন্টেজ জুয়েলারি কিংবা ইন্ডিয়ান জাংক জুয়েলারি- মোটামুটি সব ধরনেরই এন্টিক জুয়েলারি পাওয়া যায়।’

নাম আর পণ্য দুটোতেই দারুণ সমন্বয় রেখেছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা জগতে এলেন কী করে? অন্যা বলেন, ‘ভার্সিটি জীবনের শুরুটা মন মতো ছিল না। স্কুল কলেজের ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো জীবন থেকে হুট করে একটু ছাঁচে ফেলা পরিবেশে এসে মানাতে খুব সমস্যা হচ্ছিল। তার সঙ্গে হোমসিকনেস তো আছেই। ভার্সিটিতে একাকিত্ব আর ডিপ্রেশন থেকে রেহাই পেতে পেপার ক্রাফটিং শুরু করি। সেখান থেকে দেখা গেল প্রচুর বক্স, কার্ড, বুকমার্ক জমে গেল।’


বিজ্ঞাপন


girl‘পেপার ক্রাফটিংয়ে ওয়েস্টেজ প্রচুর জমে যায়, তাতে আশেপাশের মানুষের অসুবিধে। তাই সব মিলিয়ে কী মনে করে এক গাদা জুয়েলারি ক্রাফটিংয়ের ম্যাটেরিয়াল কিনে আনি। নতুন দেখে হোলসেলাররা তখন ইচ্ছে মতো ঠকায় বৈ কি। কিন্তু নতুন কিছুর আশায় ওসব গোণায় ধরিনি। সেসব ম্যাটেরিয়াল দিয়ে টুকটাক গয়না বানানো শুরু করি। কি মনে করে একটা গ্রুপও খুলে ফেললাম, যেখানে আমার সব স্কুল কলেজের বান্ধবীদের এড করি। প্রথম দিকে ব্যবসার প্রোডাক্ট বাড়াতে হাতে তৈরি গয়নার পাশাপাশি চায়নিজ ছোট গয়না আনি। একদম আনকমন ও স্টুডেন্ট বাজেট ফ্রেন্ডলি হওয়ায় বান্ধবীরা সেগুলো লুফে নেয়। তারা তাদের মিচুয়্যাল ফ্রেন্ডদেরও গ্রুপে ইনভাইট করে। এভাবেই শুরুটা হয়। এরপর আদতে আমাকে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’- যোগ করেন অন্যা 

পণ্যের ক্ষেত্রে ট্রেন্ডের চেয়ে ভিন্নতাকে বেশি প্রাধান্য দেন এই উদ্যোক্তা। চেষ্টা করেন আনকমন জিনিস বিক্রি করতে। আর্থিক দিক বিবেচনায় বিভিন্ন দামের পণ্য রাখেন। গুণমান আর উপস্থাপনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তিনি। 

girl৫ হাজার টাকা মূলধনে ব্যবসা শুরু করেছিলেন অন্যা। বর্তমানে বেশ ভালোই লাভ পান মাস শেষে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতার সঙ্গে সমন্বয়কে অবশ্যই জরুরী মনে করেন তিনি। অন্যা বলেন, ‘কাদম্বরী সবসময়ই ক্রেতা সর্বস্ব। আমি সবসময়ই বলি, যখন আমি ব্যবসা শুরু করি আমার ক্রেতারাই আমাকে শূন্য থেকে এই জায়গায় এনেছে। আমি আজ যা, আমার ক্রেতাদের সাপোর্টের জন্যেই। কারণ ব্যবসা শুরুর আগে আমার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড বা নেটওয়ার্কিং কিছুই ছিল না। আমার ক্রেতারা আমায় ভরসা করে অর্ডার করেন দেখেই আমরা আজ এত বড় একটা টিম। ভাল-মন্দ অভিজ্ঞতা প্রতিদিনই হয়। ভালটা মনে রেখে মন্দ থেকে শুধু শিক্ষাটা নিয়ে ভুলে যাই।’

ঢাকার বাইরে বাস করেন অন্যা। ব্যবসার প্রায় সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ায় বেশ কাঠপোড় পোহাতে হয় তাকে। কারিগর, ইম্পোর্টার, ডেলিভারি কোম্পানি সামলাতে হয় ধৈর্য ধরে। নিজের পরিশ্রমের কথা বলতে গিয়ে অন্যা বলেন, ‘মাঝে মাঝে এত কাহিল লাগে যে সত্যি বলতে প্রায় প্রতিদিনই ইচ্ছে করে ব্যবসা ছেড়ে দিতে। কিন্তু দিনশেষে পার্সেল পেয়ে কাস্টমারের ভালবাসাসিক্ত ম্যাসেজ, পাবলিক প্ল্যাটফর্মে ইউনিক জুয়েলারির সাজেশন চেয়ে পোস্ট দিলে যখন দেখি পেজের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না এমন অজস্র মানুষ আমাদের সাজেস্ট করছেন, তখন মনে হয় এই মানুষগুলোকে আরেকটু ভালো সেবা দিতে হলেও ব্যবসা যদ্দিন পারি চালিয়ে যাব।

girlভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? জানতে চাইলে অন্যা বলেন, ‘আপাতত নিজের দেশি পণ্যকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চাই। ক্ষুদ্র পরিসরে এখন মাঝেমধ্যে দেশের বাইরে কাদম্বরীর পণ্য গেলেও সেটাকে বড় আকারে নিয়ে যেতে চাই।’

সেকেলে গয়নাগুলোকে আবার নতুন রূপে ফিরিয়ে আনছেন অন্যা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যে মিশে থাকা নকশাগুলো পৃথিবীজুড়ে সবাই চিনবে এমনটাই প্রত্যাশা তার।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর