বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

তিরানার শখের অনলাইন দোকান ‘তিরুয়ানা’

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২২, ০১:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

তিরানার শখের অনলাইন দোকান ‘তিরুয়ানা’

জীবন দুইভাবে পার করে মানুষ। কেউ যেভাবে চলছে চলুক নিয়ম মেনে চলে। কেউবা নিজের ইচ্ছামতো জীবনকে সাজায়। মুমতাহীনা মাহবুব তিরানা দ্বিতীয় দলের মানুষ। তাইতো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক শেষ করে শখের দোকান খুলেছেন অনলাইনে। গয়না বানিয়ে আর প্রাণীদের ভালোবেসে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। 

হাতে বানানো গয়নার অনলাইন প্রতিষ্ঠান তিরুয়ানার কর্ণধার তিরানা। কীভাবে ব্যবসাজীবনে এলেন তিনি? কী পণ্য নিয়ে কাজ করেন? তার জীবনের শুরুর দিনগুলোই বা কেমন ছিল? সব নিয়ে আড্ডা হয় এই তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে। 


বিজ্ঞাপন


tiru

প্রথমেই শুনতে চাই ছেলেবেলার কথা। এক গাল হেসে তিরানা বলেন, ‘জন্মের শুরুটাই ছিল মজার। আমার জন্ম নরমাল ডেলিভারিতে। অনেক মোটা বাচ্চা ছিলাম। জন্মানোর কাজে সাহায্য করতে এসেছিলেন এক নার্স। তিনি নাকি বলেছিলেন বাচ্চা এতো মোটা কেন! মা যে কয়টা জামা বানিয়ে রেখেছিল একটাও নাকি গায়ে লাগে নাই। প্রায় সাড়ে ছয় কেজির বাচ্চা ছিলাম জন্মের সময়। এমন মজার ঘটনা দিয়েই আমার জীবনের শুরু।’

>> আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে পোশাক দেন নারী উদ্যোক্তা সচি

তিরানার পড়াশোনা ঢাকা, কুমিল্লা মিলিয়ে। শুরু আর শেষটা ঢাকায়। মাঝে কয়েকবছর কাটিয়েছেন কুমিল্লায়। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে ব্যবসা করেই সময় পার করছেন তিনি। তবে কর্মজীবনের শুরুটা ছিল লেখালেখির মাধ্যমে। বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে ফিচার রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


tiru

অনলাইন ব্যবসায়ে কীভাবে এলেন, জানতে চাই তিরানার কাছে। তিনি বলেন, ‘অনলাইন উদ্যোক্তা হবো সেটা আসলে ভাবনায় ছিলই না। এমনি নিজের একটা দোকানের খুব শখ ছিল অনেকদিনের। তারপর বছরখানেকের চিন্তার ফল হিসেবে সাধের দোকানের শুরুটা অনলাইনেই করলাম আরকি।’

‘আম্মু খুব দারুণ গয়না বানাত এক সময়। মজার বিষয় হচ্ছে আম্মুকে দেখে তখন কখনো নিজের আগ্রহ হয় নাই এই কাজে, তবে হ্যাঁ কাজ দেখতাম। ঠিক গয়নাই কেন বেছে নিলাম বানাবো বলে, এটার উত্তর মনে হয় নাই। তবে গয়নাগাটি বানাতে শুরু করার পর বুঝলাম যে কাজটা আমি বেশ ভালোবাসি। পেজ খোলার আগে প্রায় বছরখানেক আমি এমনিই কাজ করতাম টুকটাক। ম্যাটারিয়াল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা, বিভিন্ন জিনিস চেনা, ব্যবহার করা ইত্যাদি কাজে সময় দিলাম। নিজেকে সময় দিলাম এটা বুঝতে যে আমি আসলে সত্যিই কাজটা নিয়ে আগাবো কিনা। পরিচিত মানুষরা গয়না কিনলো তখন আমার কাছ থেকে। তারপর যখন সিদ্ধান্ত নিলাম পেজ চালু করার, ততদিনে আমি বেশ খানিকটা অভিজ্ঞ বলা যায়। তাই পেজ খুলে প্রাথমিকভাবে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি’- যোগ করেন তিনি। 

tiru

নিজের কাজটি ভালোবেসেই করেন এই উদ্যোক্তা। মনের মতো জিনিসের আয়োজনে সাজানো পণ্যে প্রতিষ্ঠানটির নামও দিয়েছেন তাই নিজের নাম তিরানার সঙ্গে মিলিয়ে। তিরুয়ানার যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে পহেলা মে তে। 

কী কী পাওয়া যায় তিরুয়ানায়? তিরানা জানান, ভালোবেসে বানানো হরেক রকম গয়না মেলে তার শখের দোকানে। হালকা, ছিমছাম, ইজি টু ক্যারি আর একইসঙ্গে দৃষ্টিনন্দন গয়না তৈরি করেন তিনি। 

tiru

তিরানা বলেন, ‘ক্যাজুয়াল ইউজের গয়না নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করার ইচ্ছা ছিল আমার। তিরুয়ানা শুরু করার আরও একটি মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তা, নানা রকম প্রাকৃতিক পাথর ইত্যাদি উপাদানকে স্বল্পদামের গয়নায় নিয়া আসা যাতে অনেকেই সহজে কিনতে পারেন, সংগ্রহে রাখতে পারেন। সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তিরুয়ানায় এসব দামি রত্ন-পাথরের বাজেট ফ্রেন্ডলি গয়নাগুলো সবসময় গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় থাকে। তাছাড়া কর্ডের নিত্য ব্যবহার্য হালকা গয়নাগাটির চাহিদা তো সারা বছরই লেগে থাকে! কর্ডের পায়েলের বিশাল সংগ্রহকে আমার সিগনেচার কালেকশন বলা যায়।’

>> আরও পড়ুন: পৃথিবীকে ফ্রেমে বন্দি করতে চান তারেক মাহমুদ

গয়না নিয়ে বর্তমানে অনেক নারীই কাজ করছেন। তাহলে তিরুয়ানার বিশেষত্ব কী? জানতে চাইলে এই তরুণী বলেন, ‘হালকা কিন্তু চোখে পড়ার মতন গয়নার সংগ্রহ আছে আমার প্রতিষ্ঠানে, আর সেটাকেই তিরুয়ানার বিশেষত্ব বলা যায়। অনেক বেশি ভারী গয়না করাই হয় না বলতে গেলে। আমার ফেস্টিভ মুডের গয়নাগাটিতেও থাকে বেশ ছিমছাম লুক। বলা যায়, তিরুয়ানায় এমন সব গয়না তৈরি হয় যা সাধারণের মাঝেই অনন্য।’

tiru

নিজের ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট তিরানা। একদিকে শখের কাজটি করতে পারেন মাসজুড়ে। অন্যদিকে, ঠিকমতো সময় দিলে ভালো আয়ও সম্ভব। তিরুয়ানায় বেশিরভাগই রিপিট ক্লায়েন্ট। কারণ তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো, তাদের সাথে তিরানার বোঝাপড়া ভালো। এখনও অব্দি কোনো প্রকার বুস্টিং ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি। অনেক ক্রেতারাই খুশিমনে পেজ প্রোমোট করে দেন। বিষয়টিতে বেশ ইতিবাচক মনে করেন তিরানা। 

কাজের ক্ষেত্রে পরিবারের পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘হালাল যেকোনো উপার্জনকেই তারা ভালো চোখে দেখে। তবে ব্যবসার পাশাপাশি একটা চাকরি করলে খুশি হতো, এই আরকি!’

tiru

শুরুতেই বলেছিলাম গয়না বানিয়ে আর প্রাণীদের ভালোবেসে জীবন কাটাচ্ছেন তিরানা। নিজের পোষা বিড়াল ছাড়াও এলাকার কুকুরদের কাছে তিনি বিশ্বস্তের মানুষ। নিজের পোষ্য বিড়াল টসটসি ছিল তিরানার ভীষণ প্রিয়। তার শরীরের ওপর গয়না ছড়িয়ে অসংখ্য ছবিও তুলেছিলেন। সেই প্রিয় প্রাণীটির মৃত্যুর পর ভীষণ ভেঙে পড়েন তিরানা। বন্ধ করে দেন কাজকর্ম। 

>> আরও পড়ুন: পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে মুনের ক্যালিগ্রাফি আঁকা

তিরানা বলেন, ‘আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী বিড়াল টসটসি মারা যাবার পরে খুব খারাপ সময় কাটিয়েছি। ব্যবসা বন্ধ করে দেবো ভাবছিলাম। কাজ করার সময়টায় ও সাথে থাকতো, তাই ওকে ছাড়া পারছিলাম না। এক মাসের বেশি সময় কাজ বন্ধ রেখে জোর করেই আবার শুরু করি। তাছাড়া আমার নিয়মিত গ্রাহক যারা, তারা আমাকে খুব মনোবল দিয়ে গেছেন ওই সময়টায়। তারা আমাকে বোঝাতেন যাতে উদ্যোগটা বন্ধ না করি, বিরতি দিয়ে হলেও ফিরে আসি, তাদের কথা ফেলা সম্ভব ছিল না।’

tiru

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিরানা বলেন, ‘সামর্থ্য হলে কাজের পরিধি বাড়াতে চাই। তিরুয়ানাকে ছোট্ট দোকানই রাখতে চাই যেহেতু আমার হাতের কাজ। অন্যান্য পণ্য নিয়ে একটু বড় পরিসরে নতুন উদ্যোগ শুরু করার ইচ্ছা রাখি আল্লাহ চাইলে।’

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর