শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পার্সিয়ান ক্যাট: আদুরে স্বভাব, বিলাসী লুকে মজেছে তরুণ প্রজন্ম

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

persian cat

বন্ধুসুলভ, আদুরে স্বভাবের একটি প্রাণী বিড়াল। খুব সহজেই যে পোষ মানে। মনিবের ঘরকে নিজের ঘর বানিয়ে ফেলে। সামান্য আদর-যত্ন আর সময়মতো খাবারই এদের চাহিদা। পোষা প্রাণীর তালিকায় তাই বিড়ালের অবস্থান বেশ উপরে। শখের বসে অনেকেই বিড়াল পোষেন। কেউ একটি, কেউবা একাধিক। বিড়ালপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পার্সিয়ান ক্যাট। বিদেশি এই বিড়াল দেখতে যেমন আদুরে, স্বভাবেও শান্ত। 

পার্সিয়ান প্রজাতির বিড়াল বিচিত্র রংয়ের এবং বিভিন্ন ধরনের নকশাদার লোমবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এর মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাসও আছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে পার্সিয়ান ক্যাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকে তাই এই বিড়াল নিয়ে জানতে চান। কোথায় থেকে এলো পার্সিয়ান ক্যাট? এদের স্বভাব কেমন হয়? পার্সিয়ান ক্যাটের যত্ন কীভাবে নিতে হয়? এরা খায় কী?— সব প্রশ্নের জবাব জানুন এই প্রতিবেদনে। 


বিজ্ঞাপন


persian_cat1

পার্সিয়ান বিড়াল কোন দেশের? এর ইতিহাস কী? 

যেকোনো প্রজাতির বিড়াল কোথায় জন্ম নিয়েছে, কীভাবে দেশে এলো তা নিয়ে নানা তত্ত্ব চলতে থাকে। পার্সিয়ান বিড়ালের ক্ষেত্রে এই কৌতূহল যেন একটু বেশি। নামকরণের কারণে বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন এই বিড়ালের জন্মস্থান পার্সিয়া বা পারস্য বা বর্তমান ইরানে। যদিও এর পাকাপোক্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি। 

জন্ম যেখানেই হোক, ইউরোপে পার্সিয়ান ক্যাটের আগমন ঘটে পিয়োত্রো দেল্লা ভালে নামের পর্যটকের হাত ধরে। ইতিহাস বলে, ১৬২০ সাল নাগাদ পিয়েত্রো এশিয়া, আফ্রিকার কিছু এলাকা এবং পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে ইতালিতে পৌঁছান। সঙ্গে নিয়ে আসেন তার পোষা বিড়ালটিকে। তাই ধারণা করা হয়, ইরান না হলে পার্সিয়ান ক্যাটের আদি বাসস্থান আফ্রিকা, এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের কোনো এলাকাই হবে। 


বিজ্ঞাপন


persian_cat3

পার্সিয়ান ক্যাটের জনপ্রিয়তা: 

ইউরোপে আসার পর থেকেই মূলত এই বিড়ালের জনপ্রিয়তার শুরু হয়। ক্রমশ পোষ্য হিসেবে মানুষ এই প্রজাতির বিড়ালকে পছন্দ করেন। পরবর্তীতে ইউরোপ থেকে বিড়ালের প্রজাতিটি পৌঁছে যায় আমেরিকাতেও। 

পার্সিয়ান ক্যাটের প্রথম প্রদর্শনী: 

বর্তমানে বিড়াল নিয়ে অনেক প্রদর্শনী হয়। বিশেষ করে পার্সিয়ান ক্যাট নিয়ে। পোষা প্রাণীটিকে নানা পোশাক আর গয়নায় সাজিয়ে প্রদর্শনীতে নিয়ে যান মনিবরা। তবে এই রেওয়াজ খুব বেশি পুরনো নয়। পিয়েত্রোর হাত ধরে ইউরোপে আসা পার্সিয়ান ক্যাটের প্রথম প্রদর্শনী হয় লন্ডনে। তাও সেই ইউরোপে এই বিড়ালের আগমনের ২৫০ বছর পরের ঘটনা। 

persian_cat4

বিড়ালের প্রথম প্রদর্শনীতে মূল আকর্ষণ ছিল পার্সিয়ান ক্যাটকে ঘিরে। এছাড়াও ছিল সায়ামিজ, স্কটিস ওয়াইল্ড ক্যাট জাতের বিড়াল। ১৮৭১ সালে ক্রিস্টাল প্যালেসের সেই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ২০০০ দর্শক। এই প্রদর্শনীর পরে ইউরোপ জুড়ে পার্সিয়ান বিড়ালের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকে।

পার্সিয়ান ক্যাটের আমেরিকা আগমন: 

বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পার্সিয়ান বিড়াল আমেরিকায় পৌঁছায়। মার্জার-প্রেমীরা ইউরোপ থেকে এই প্রজাতির বিড়াল আমেরিকায় নিয়ে যান। আমেরিকা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জনপ্রিয় হয়ে যায় এটি। বর্তমানে আমেরিকায় যত পোষ্য বিড়াল আছে তার সিংহভাগই পার্সিয়ান ক্যাট। 

persian_cat5

বিখ্যাত ব্যক্তিদের যত পার্সিয়ান ক্যাট: 

বিড়ালের জগতে পার্সিয়ান এতটাই জনপ্রিয় যে বহু নামকরা ব্যক্তি, সেলিব্রেটিদের পোষ্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সে। এক্ষেত্রে সবার আগে উঠে আসবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলর নাম। পুরো জীবনে প্রায় ৬০টি বিড়াল পুষেছিলেন তিনি। এর মধ্যে অধিকাংশই পার্সিয়ান প্রজাতির। তবে এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল একটি বিড়াল। বিশালাকার সেই পার্সিয়ান বিড়ালের নাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল রেখেছিলেন “মিস্টার বিসমার্ক”।

মেরিলিন মনরোর পোষ্য পার্সিয়ান বিড়ালও ছিল বেশ জনপ্রিয়। তার নাম ছিল “মিতসোউ”। আমেরিকার বিখ্যাত লেখক রেমন্ড চ্যান্ডলার নাকি নিজের সব উপন্যাস প্রথমে পড়ে শোনাতেন তার পোষ্য বিড়ালকেই। সেই পার্সিয়ান বিড়ালটির নাম ছিল “টাকি”। 

persian-cat7

ভারতেও বহু সেলিব্রিটি পার্সিয়ান ক্যাট পোষেন। এই তালিকায় রয়েছেন আলিয়া ভাট থেকে শুরু করে জ্যাকলিন ফার্নান্দেজের মতো অনেকেই। আলিয়ার পোষ্য দুই পার্সিয়ান বিড়ালের নাম “শিবা” এবং “পিকা”। জ্যাকলিনের পোষ্যর নাম “মিউ মিউ”। শিল্পা শেঠি নিজে একজন প্রাণীঅধিকার রক্ষা কর্মী। তারও একটি পার্সিয়ান ক্যাট রয়েছে। এই তালিকায় আছেন মনীষা কৈরালাও। 

পার্সিয়ান বিড়াল কেন এত জনপ্রিয়? 

পার্সিয়ান প্রজাতির বিড়ালগুলো দীর্ঘ লোমযুক্ত এবং গোলাকার মুখমন্ডল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এরা হৃষ্টপুষ্ট কিন্তু খাটো কান বিশিষ্ট হয়। কানের শেষপ্রান্ত প্রায়শই গোলাকার খাঁজযুক্ত থাকে। এরা শান্ত স্বভাবের হয় তাই এদের লালন করা সহজ। 

persian_cat6

পার্সিয়ান ক্যাট সাধারণত একজন বা দুইজন মানুষের সাথে অথবা অন্য কোনো প্রাণীর সাথে জোড় বেঁধে নেয়। এরা মনিব বা পরিবারের সদস্যদের বিরক্ত করে না। এদেরকে শিশুদের সাথে রাখা নিরাপদ। সাধারণত পার্সিয়ান ক্যাট ১২ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। এসব কারণেই পোষাপ্রাণীর মালিকদের কাছে এ বিড়াল একটি প্রিয় পছন্দের প্রাণী। 

পার্সিয়ান বিড়ালের প্রজাতি: 

‘ডল ফেস’, ‘পেকে-ফেস’, ‘এক্সটিক শর্টহেয়ার’ এবং ‘টিকাপ’— সাধারণত চারটি প্রজাতির বিড়াল দেখা যায়। এর মধ্যে পুতুলের মতো মুখ বিশিষ্ট পার্সিয়ান বিড়াল অর্থাৎ ডল ফেস এর কদর বেশি। দামের দিক থেকেও এই প্রজাতিটির স্থান বেশ উঁচুতে।

পার্সিয়ান ক্যাটের দাম কত? 

প্রজাতি অনুযায়ী পার্সিয়ান ক্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়। যত উন্নত প্রজাতি, তত দাম বেশি। এই প্রজাতির বিড়াল কিনতে গেলে ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজেট রাখতে হবে। ভালোমানের একটি পার্সিয়ান ক্যাট কিনতে ১৫-২০ হাজার বাজেট রাখা ভালো। শরীরের আকার, লোমের মান, চোখের মণির রং, স্বভাব— ইত্যাদির ওপর দাম নির্ভর করে।

persian_cat8

পার্সিয়ান ক্যাটের লালন-পালন: 

১. গোসল: সাধারণত এই প্রজাতির বিড়ালকে মাসে এক বার গোসল করালেই চলে। এরা লোমের জন্য বেশি জনপ্রিয়। তাই আলাদা করে লোমের যত্ন নিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পর পর লোম পরিষ্কার, ট্রিম করতে হবে। তাদের জন্য আলাদা শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করাই ভালো। গোসল করানোর পর এই বিড়ালের লোম হেয়ার ড্রায়ারের সাহায্যে দ্রুত শুকিয়ে নেওয়া উত্তম। কেননা ঘন লোম শুকাতে সময় বেশি লাগে। ফলে এদের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। 

২. খাবার: মাছ খেতে ভালোবাসে পার্সিয়ান ক্যাট। তবে কাঁটা বেছে দিতে হবে। নয়তো গলায় বিঁধতে পারে। টুনা, স্যামনের মতো সামুদ্রিক মাছ এদের প্রিয়। টিনজাত খাবার খেতেও ভালোবাসে পার্সিয়ান বিড়াল। এ ছাড়াও হাড় ছাড়া মুরগি সেদ্ধ করে তাদের দিতে পারেন। পার্সিয়ান ক্যাটের জন্য আলাদা খাবার বাটি বা পাত্র রাখতে হবে। এদের খিদে পেলেও ডাইনিং টেবিলে হামলা চালাবে না। নির্ধারিত পাত্রে খাবার দিলে তবেই খাবে।

persian_cat9

৩. চিকিৎসা: পার্সিয়ান প্রজাতির বিড়ালের প্রথম ও প্রধান সমস্যা হলো চোখ। কারণে-অকারণে সারাক্ষণ চোখ থেকে পানি পড়ার সমস্যা দেখা যায় এদের। নাকও বন্ধ থাকে প্রায় সময়েই। মানুষের মতোই চট করে ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির সমস্যা দেখা যায় কোনও কোনও প্রজাতির মধ্যে। তেমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা না দিলেও বছরে অন্তত দুইবার এদের পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি। পার্সিয়ান ক্যাটকে বছরে একবার রেবিসের টিকা দিতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ে কৃমির ঔষধ ডাক্তার দ্বারা খাওয়াতে হবে।

৪. টয়লেট: পার্সিয়ান বিড়াল তাদের নির্ধারিত টয়লেট ছাড়া অন্য কোথাও টয়লেট করে না। এদের জন্য বড় প্ল্যাস্টিক গামলা কিনে সেইটার মধ্যে ক্যাট লিটার (এক ধরনের ক্যামিকাল সমৃদ্ধ বস্তু) দিয়ে রাখতে হবে। একটি বিড়ালের জন্য মাসে ৫-৭ কেজির মতো ক্যাট লিটার লাগে। 

persian_cat10

পার্সিয়ান ক্যাট মানুষ ঘেঁষা, আদুরে স্বভাবের হয়। তাই তাকে দিনের বড় সময় আগলে রাখতে পারবেন, ঠিকমতো যত্নআত্তি করতে পারবেন— এমনটা নিশ্চিত করেই পার্সিয়ান ক্যাট কিনুন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর