বিড়াল একটি নিরীহ প্রাণী। উন্নত দেশগুলোর মতো বর্তমানে বাংলাদেশেও অনেকে বিড়াল পালন করেন। অনেকে তাদের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য বিড়াল পুষে থাকেন। এটিকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেন।
নিরীহ এই প্রাণীকে পালনের সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি কষ্টে আছে কি না। অনেক সময় বিড়াল অতিরিক্ত মিঁয়াও মিঁয়াও করে। এটি নিছক ডাক নয়। এর পিছনেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চলুন জেনে নিই বিড়ালের অতিরিক্ত মিঁয়াও মিঁয়াও করার কারণগুলো-
বিজ্ঞাপন

বিড়াল কেন মিঁয়াও মিঁয়াও শব্দ করে?
বিড়ালছানা ও প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের ডাকার ধরণ এক নয়। বিড়াল ছোটবেলায় যেই কারণে ডাকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাকার ধরণ ও কারণ পাল্টে যায়। বিড়ালছানার যখন ঠান্ডা, ভয় ও ক্ষুধা লাগে তখন সে আশ্রয় ও খাবারের জন্য মায়ের কাছে মিঁয়াও মিঁয়াও করে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালরা চিৎকার, হিসিং এবং গর্জনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। কিছু বিড়াল শুধু তাদের নিজেদের কণ্ঠস্বর শুনতে পছন্দ করে। কেউ আবার মালিককে কিছু বুঝানোর জন্য মিঁয়াও শব্দ করে। যদি আপনার বিড়ালটি অতিরিক্ত মিঁয়াও করে তবে বুঝতে হবে সে আপনাকে কিছু বুঝাতে চাচ্ছে। হয়তো আপনার বিড়ালটি কোনো সমস্যায় আছে।
বিড়াল অতিরিক্ত ডাকে কেন?
বিজ্ঞাপন
বিড়াল বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত ডাকাডাকি করে। আপনি যদি বিড়াল পুষে থাকেন তাহলে কারণগুলো জেনে নেওয়া উচিত।

অসুস্থতা
অসুস্থতার কারণে আপনার বিড়ালটি অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে পারে। বিড়াল রোগাক্রান্ত হলে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ব্যথা অনুভব করে। যার কারণে সে অতিরিক্ত মিঁয়াও করে। শরীরে থাইরয়েড বা কিডনির সমস্যা হলেও বিড়াল কান্নাকাটি করে।
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য
বিড়াল চায় তার মালিক তাকে আদর করুক, তার সাথে খেলা করুক, কথা বলুক। তারা একা থাকতে চায় না। যার কারণে অতিরিক্ত ডাকাডাকি করে। সে যদি অযথা ডাকাডাকি করে তাহলে তার ডাকে সাড়া কম দিন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন। অতিরিক্ত কম ডাকা আবার অসুস্থতার লক্ষণ।

খাবারের জন্য
খাওয়ার সময় হলে কিছু বিড়াল অযথাই উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করে। খাবার না পেলে কামড় দিতে চায়। এটি বাজে অভ্যাস। এমনটি করলে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে খাবার দিবেন না। প্রশ্রয় পেলে সে আরও বেশি করে এমনটি করবে। এই অভ্যাসটি থামানোর জন্য তাকে স্বয়ংক্রিয় ফিডার কিনে দিন যা খাওয়ার সময় নিজে থেকেই খুলে যায়। এটির ব্যবহারে বিড়াল অহেতুক চিৎকার করবে না।
অভিবাদন জানাতে
অনেক সময় মালিক বাড়িতে ফিরলে বা মালিককে দেখলে বিড়ালটি খুশি হয়ে অতিরিক্ত মিঁয়াও করে। এটি আসলে তার আনন্দ প্রকাশের একটি মাধ্যম।

একাকীত্ব বোধ করলে
বিড়াল যদি বাসায় বন্দী অবস্থায় রেখে যান তাহলেও সে অতিরিক্ত ডাকাডাকি করতে পারে। তাকে কিছু খেলনা কিনে দিন যা নিয়ে সে ব্যস্ত থাকবে।
বার্ধক্যজনিত কারণে
আপনার বিড়ালটি যদি বার্ধক্যে ভুগে তাহলে কোনো কারণ ছাড়াই সে রাতে কান্নাকাটি করতে পারে। তখন এটি নানা ধরণের মানসিক বিভ্রান্তিতে পড়ে। এমনটা হলে তাকে পশুচিকিৎসক দেখান।

মানসিক চাপ
অনেকসময় বিড়াল বিভিন্ন কারণে চাপ অনুভব করে। বাড়িতে নতুন বাচ্চা বা পোষা কোনো প্রাণীর আগমন, বাড়ি পরিবর্তন, অচেনা পরিবেশ, প্রিয় কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা অথবা মৃত্যু ইত্যাদি কারণে বিড়ালটি মানসিক চাপে ভুগে। খুঁজে বের করুন কোন জিনিসটি তাকে কষ্ট দিচ্ছে, যার ফলে সে অতিরিক্ত মিঁয়াও করছে।
প্রজনন করতে চাইলে
প্রাপ্ত বয়স্ক বিড়ালরা একে অপরের সাথে মিলনের জন্যও অতিরিক্ত চিৎকার করে। তারা বিপরীত লিঙ্গের উপস্থিতিতে উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং অতিরিক্ত মিঁয়াও করে।

জেনে রাখা জরুরি
বিড়াল অতিরিক্ত ডাকাডাকি করলে অবহেলা করবেন না। হয়তো সে খাবার পাচ্ছে না, রুমে বন্দী আছে অথবা তার পানির পাত্র খালি আছে। তাই অবহেলা না করে তার প্রতি এসব বিষয়ে সদয় হোন।
বিড়াল বেশি ডাকাডাকি করলে তাকে শাস্তি দিবেন না। মারলে, ধমক দিলে বা পানি ছুড়ে মারলে কিন্তু তারা আরও ক্ষেপে যেতে পারে। এই কাজগুলোর কারণে আপনার পোষ্যটি আপনাকে অপছন্দ করতে পারে।
যদি আপনার বিড়ালটি শুধু শুধুই মিঁয়াও করে তবে তাকে শান্ত করতে হাল ছেড়ে দিবেন না। তার ডাকাডাকিতে গুরুত্ব কম দিন, শান্ত ব্যবহার করুন। তাহলে সে নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যাবে।
এসবিএ/এনএম

