আপনি কি মজাদার খাসির মাংসের তরকারি বা মসলাদার বিফ কাবাব খেতে ভালোবাসেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি একা নন। দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষের রসনাতৃপ্তির অন্যতম উপাদান লাল মাংস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশ্ন উঠেছে—লাল মাংস কি হৃদযন্ত্রের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর?
এই বিতর্কে নতুন করে আগুন দিয়েছে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনা গবেষণা। স্পেনের ফ্রান্সিসকো দে ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মিগুয়েল লোপেজ মোরেনোর নেতৃত্বে করা এই বিশ্লেষণে ৪৪টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যালোচনা করা হয়, যার সময়কাল ছিল চার দশকের বেশি।
বিজ্ঞাপন
গবেষণায় দেখা গেছে, মাংস শিল্পের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাগুলো প্রায় চারগুণ বেশি হারে লাল মাংসের পক্ষে ফলাফল দিয়েছে, যেখানে হৃদরোগের ঝুঁকিকে তেমনভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অপরদিকে, স্বতন্ত্র বা সরকারি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাগুলোতে লাল মাংসের কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

কোথায় লুকিয়ে আছে বিভ্রান্তি?
শিল্প-অনুষঙ্গযুক্ত গবেষণাগুলো সাধারণত লাল মাংসের তুলনা করেছে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বা অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে, যার ফলে লাল মাংস তুলনামূলকভাবে ‘ভালো’ দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন গবেষণাগুলো লাল মাংসের তুলনা করেছে সয়া, বাদাম, ডাল ও সবজির মতো হৃদ্বান্ধব খাবারের সঙ্গে, যার ফলে লাল মাংসের নেতিবাচক দিকগুলো সামনে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
হার্টের জন্য কী সত্যিই ক্ষতিকর?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন হেলথ-এর এক গবেষণায় ১.৪ মিলিয়ন অংশগ্রহণকারী নিয়ে পরিচালিত একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি ১৮% পর্যন্ত বাড়ে। এমনকি অপরিশোধিত লাল মাংসেও ৯% বেশি ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট (পরিপৃক্ত চর্বি) ও সোডিয়াম। সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে, আর পরিপৃক্ত চর্বি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায়—দুটিই হৃদরোগের প্রধান কারণ।

সমাধান কী?
তাহলে কি একেবারে লাল মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে? না, একেবারে নিষেধ নয়। লাল মাংসে জিঙ্ক, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি১২-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে, যা অনেকের খাদ্যতালিকায় ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তবে সমস্যা দেখা দেয় যখন এটি অতিরিক্ত বা ঘন ঘন খাওয়া হয়— বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত রূপে।
আরও পড়ুন: ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
সমাধান হলো মিতব্যয়ী খাওয়া এবং বিকল্পের দিকে ঝোঁকা। উদাহরণস্বরূপ, ডাল, সবজি বা ছোলার তরকারির মতো স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতেই প্রচলিত। এসব স্বাস্থ্যকর বিকল্প শুধু হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় না, বরং খাবারে বৈচিত্র্যও আনে।
শুধু খাদ্যই নয়, জীবনধারাও গুরুত্বপূর্ণ
অবশেষে, হৃদরোগ শুধু খাওয়াদাওয়ার ওপর নির্ভর করে না, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এই তিনটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে খাদ্যতালিকা সেই জায়গা, যা সবচেয়ে সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব।
এজেড

