আম্মা আমাকে মিতু বলেই ডাকেন। বিয়ের পর একদিন অভিমান নিয়ে আব্বু-আম্মুকে বললাম, “আমার শাশুড়ি আমাকে বউমা, বউ বলেন না। নাম ধরেই ডাকে।” উত্তরে আব্বু-আম্মু বললেন, “মা শা আল্লাহ৷ এতে তো তোর খুশি হওয়ার কথা। বউমা তো সম্পর্ক। তুই আমাদের মেয়ে। আমরা কি তোকে মেয়ে বলে ডাকি? তাইলে ভাব মানুষটা তোকে কত আপন ভাবেন যে নাম ধরে ডাকে।”
আমি বুঝলাম সত্যিই তো। আম্মা আমাকে কত্ত আপন ভাবেন। “বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ” বেশ পুরনো ক্যাচালের বিষয়। এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা আমার অনেক দিনের। তবে এখন আর আলহামদুলিল্লাহ চিন্তা নেই। কারণ আমি জানি, গর্ভে ধারণ না করলেও আম্মা আমাকে তার মেয়ে থেকে কোনো অংশে কম ভালোবাসেন না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- মা কে ঘিরে যত অনুভূতি
অক্টোবরে আব্বা-আম্মা ঢাকায় এসেছিলেন। সাধারণত অফিসে পরার জামা-কাপড় আমরা পরার পর বালতিতে জমিয়ে রাখি। কারণ বুয়া খালি শুক্রবারেই আসেন। সেদিন ধুয়ে দেন। একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি বালতি খালি। বারান্দায় দেখি জামা-কাপড় মেলা। আম্মাকে জিজ্ঞেস করার পর বলতেছেন, “কোনো কাজ নাই তো, তাই ধুয়ে দিছি”।
ভাত বেড়ে দেওয়ারও পরও কোনো বেলা আম্মা ভাত খাওয়া শুরু করেন নাই। আমি আসার পর একসঙ্গে খেয়েছেন। আম্মার সঙ্গে এই ১ বছরে আমার কখনো ঝগড়া হয়নি। উল্টো আমি আম্মুকে যেভাবে ঝাড়ি মেরে কথা বলি, সেভাবেই আম্মাকে বহুবার ঝাড়ি দিয়েছি। অভিমান করে কথা বলেছি। আম্মা জবাবে খালি হাসেন আর বলেন- ঠিকই তো, ঠিকই তো।
আরও পড়ুন- আমি সব কিছু বাদ দিয়ে ভালো মা হতে পারিনি
পুত্রবধূকে আপন করে নিতে বোধহয় এমন ছোটোখাটো বিষয়গুলো যথেষ্ট। এএসপি পলাশের মায়ের অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ সামনে আসছে দুদিন ধরে। সদ্য পুত্র হারানো মা বেশ কনফিডেন্ট নিয়ে ছেলের বউয়ের বদনাম করে যাচ্ছেন। উনাকে দেখেই রীতিমত ভয় লাগছে।
আমার শাশুড়িকে কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে, “আমার বউমা খুব বালা” বলবেন— এতটুকু আমি এতদিনে বুঝে গেছি। বাড়িতে গেলে আমি আম্মা ন্যাওটা হয়ে যাই। আম্মার পাশে পাশে থাকতে চেষ্টা করি। কারণ সেখানকার কিছুই আমি বুঝি না। আম্মা আমাকে গাইড করেন, আমি সেই অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি। (পিএস হিসেবে সর্বক্ষণ রুমি তো আছেই)
সিলেট অঞ্চলের মানুষ এলাকার বাইরে বিয়েতে ভীষণ অনাগ্রহী। আমার শাশুড়ি আম্মা সবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে পছন্দ করে বউমা করেছেন। তার সম্মান এই এক বছরে কতটা রাখতে পেরেছি জানি না। তবে আমি সারাজীবন আম্মার মেনি বিড়াল হয়ে পায়ের কাছে আদর খুঁজে যেতে চাই।
আম্মাকে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা। আমার শাশুড়ি আম্মার মতো যদি সবার শাশুড়ি হতো তাহলে এই সমাজের অনেক মেয়েই কান্না ছাড়া ঘুমাতে পারতো। ডিভোর্সের কথা ভাবতো না। একটু স্বস্তি নিয়ে সংসারটা করতে পারতো।