মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

একাকিত্বের অনুভূতি বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি, দাবি সমীক্ষার

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

একাকিত্বের অনুভূতি বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি, দাবি সমীক্ষার

ছেলেবেলায় সমাজবিজ্ঞান বইয়ে পড়েছেন নিশ্চয়ই- ‘মানুষ সামাজিক জীব, সে একাকী বাস করতে পারে না’। আসলে পথ চলতে সবারই সঙ্গী লাগে। মনের কথা বলা কিংবা গল্প করার একজন মানুষ থাকতে হয়। কিন্তু ব্যস্ততায় পরিপূর্ণ জীবনে এখন কারোরই অন্যের জন্য সময় নেই। আর তাই একাকিত্ব হচ্ছে অনেকের সঙ্গী। এই একাকিত্বের অনুভূতির প্রভাব থাকে দীর্ঘদিন। এমনটাই বলছে সমীক্ষা। 

সাম্প্রতিক এই সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে, একাকিত্বের অনুভূতির কারণে অবসাদ বাড়ছে বহু গুণে। এই সমস্যা নাকি বর্তমানে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় একাকিত্ব বোধ নিয়ে এত হইচই ছিল না। তখনও মানসিক যন্ত্রণা মানুষের সঙ্গী হতো ঠিকই কিন্তু তার প্রকাশভঙ্গি ছিল অন্যরকম। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। 


বিজ্ঞাপন


lonelyness2

আগে প্রবীণদের মধ্যে একাকিত্ববোধ দেখা গেলেও এখন কমবয়সীরাও জানাচ্ছেন তারা ভীষণ একা। বিশ্ব ডিজিটাল হওয়ায় সমাজের মানুষ এখন অনেকটা স্বেচ্ছায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মুখোমুখি বসে চায়ের আড্ডা বদলে গেছে গ্রুপ ভিডিও কলে। মন খুলে গল্প করা হয়ে গেছে অমাবস্যার চাঁদ। আর এসবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে শরীরেও। 

সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, একাকিত্বের বোধ যদি মাত্রাছাড়া হয়ে যায়, তাহলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ‘বায়োলজিক্যাল সাইকোলজি’ বিজ্ঞান পত্রিকায় এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, একা থাকাটা সমস্যার নয়। কিন্তু যারা চারপাশে অসংখ্য মানুষ থাকার পরও নিজেদের নিঃসঙ্গ মনে করেন কিংবা পারিপার্শ্বিক কারণে নিজেদের আলাদা করে নেন তারা অবসাদ ও হতাশার কারণে নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম। 


বিজ্ঞাপন


lonelyness3

৯৭ জনের ওপর উক্ত সমীক্ষাটি চালানো হয়, এই ব্যক্তিদের বয়স ১৭ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য ভালো এবং অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। তাদের টানা কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে তাদের খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, নেশার মাত্রাও কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও দেখা যায়, যারা সবসময়ে মনে করেন যে তাদের কেউ নেই বা তারা একা এবং বিষয়টি নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও অবসাদেও ভোগেন, তাদের হৃৎস্পন্দন মাঝেমধ্যেই অনিয়মিত হয়ে যায়। স্নায়ুর চাপও বাড়ে। ভবিষ্যতে তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

অবসাদের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক

অবসাদ আর মানসিক চাপ বাড়লে দেহের কর্টিজল হরমোন ক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা বা একা থাকার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘স্ট্রেস কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’ বলা হয়। 

lonelyness4

ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে এই রোগ হয় না। পুরোটাই মনের ব্যাপার। মনের ওপর চাপ, ভয়, আতঙ্ক হার্টের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। ফলে রক্তচাপের হেরফের হয়। এই রোগ বাসা বাঁধে ধীরে ধীরে, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আচমকাই। শুরুটা হয় বুকে ব্যথা দিয়ে।

সমীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, মানসিক যন্ত্রণা যখন বাড়ে তখন মনে হয় বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে, বুক ধড়ফড় করছে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। এসময় শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়। 

lonelyness5

একাকিত্বের বোধ দূর করা সহজ বিষয় নয়। এজন্য নিজের ভালোলাগাগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করলে এবং সবসময়েই এমন ভাবনা মাথায় এলে, দেরি না করে মনোবিদের পরামর্শ নিন। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর