ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ কথা কে না জানে? কিন্তু ধূমপায়ীরা এ কথা গোণায় ধরেন না। বাজে এই অভ্যাস চালিয়েই যান। কেউ কেউ একসময় এই পথ ছাড়তে চান। কিন্তু মুখে বলা সহজ হলেও ধূমপান ছাড়া মোটেও সহজ কাজ নয়। ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সারাক্ষণ মন আনচান করতে থাকে। কেউ সংযম করতে ধরে রাখতে পারেন, কেউ পারেন না।
জানেন কি, ধূমপান ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিট পর থেকেই শরীরে পরিবর্তন দেখা দেয়? ধূমপান ছাড়ায় কতক্ষণ পর শরীরে কী ঘটে? চলুন জানা যাক-
বিজ্ঞাপন

ধূমপান ছাড়ার ২০ মিনিট পর
ধূমপান ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিট পর থেকেই সুফল পেতে শুরু করে শরীর। স্বাভাবিক হতে শুরু করে নাড়ির স্পন্দন এবং রক্তচাপ। হাত ও পায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
ধূমপান ছাড়ার ৮ ঘণ্টা পর
টানা আট ঘণ্টা ধূমপান না করলে রক্তে মিশে থাকা নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা অর্ধেকে নেমে আসে। কার্বন মনোক্সাইড সিগারেটে মজুত থাকা একটি রাসায়নিক, যার প্রভাবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে। সরাসরি মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এই রাসায়নিকের মাত্রা যত কমে, অক্সিজেনের মাত্রা তত স্বাভাবিক হতে থাকে।

ধূমপান ছাড়ার ১২ ঘণ্টা পর
একটানা ১২ ঘণ্টা ধূমপান না করলে শরীরে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের কাজ সহজ হয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেনের জোগান দিতে হৃদপিণ্ডকে আর বেশি কষ্ট করতে হয় না।
ধূমপান ছাড়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর
একটানা ২৪ ঘণ্টা ধূমপান না করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি হয় স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তির। শরীরে সাফাই অভিযান শুরু হয়ে যায়। ফুসফুসে জমে থাকা কফ, চটচটে পদার্থ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। শরীরে আর নিকোটিন থাকে না।

এসময় ধূমপানের ইচ্ছে আরও বেশি করে জাগতে পারে। উৎকণ্ঠা অনুভব করতে পারেন, মাথা ঘুরতে পারে, ক্লান্তও বোধ করতে পারেন। অ্যাজমার সমস্যা থাকলে সেটিও বাড়তে পারে। তবে এসময় দুর্বল হওয়া যাবে না। দিন তিনেকের মধ্যে এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারবেন।
ধূমপান ছাড়ার ৩ মাস থেকে ১ বছর পর
একটানা তিন থেকে নয় মাস ধূমপান না করলে শ্বাসপ্রশ্বাসের উন্নতি হবে। দূর হবে কাশির সমস্যা। আগের মতো আর ঘন ঘন সর্দি-কাশি হবে না। বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এক বছর ধূমপান না করলে, আগের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক হয়ে যাবে।

ধূমপান ছাড়ার ৫ বছর পর
পাঁচ বছর ধূমপান না করলে কমবে স্ট্রোক, সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে। ধূমপান ছাড়ার মুহূর্ত থেকে এক বছর সময়কাল পর্যন্ত মুখের ক্যানসার, গলার ক্যানসার, খাদ্যনালীর ক্যানসার, মূত্রাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি অর্ধেক হয়ে যাবে কমে।
আরও পড়ুন- যেসব খাবার ধূমপানের আসক্তি কমায়
ধূমপান ছাড়ার ১০ থেকে ১৫ বছর পর
টানা ১০ বছর যদি ধূমপান না করেন তাহলে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে অর্ধেক হয়ে যাবে। কমবে স্বরযন্ত্রের ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও। আর যদি ১৫ বছর ধূমপান না করে থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি এতটাই কমবে যেন কখনো ধূমপান করেনইনি।

তাই সুস্থ থাকতে যত দ্রুত ধূমপানের অভ্যাস ছাড়তে পারবেন, ততই মঙ্গল। মনকে শক্ত করে আজই এই বদ অভ্যাসে ইতি টানুন।
এনএম

