চা-টা, কেক-টেক, ফল-টল—এমন অনেক শব্দই আমরা রোজ বলে থাকি। এমনই একটি শব্দগুচ্ছ কচু-ঘেচু। চা, কেক বা ফলের সঙ্গে থাকা টা, টেক, টেল এসব শব্দের যেমন কোনো অস্তিত্ব নেই, তেমনি ঘেচু শব্দেরও অস্তিত্ব নেই বলেই জানেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু জানলে অবাক হবেন কচুর মতোই রয়েছে ঘেচুও। কী সেটি? এর কাজই বা কী? এই শব্দটি দ্বারা কী বোঝায়? সব প্রশ্নের উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে-
ঘেচু কী?
বিজ্ঞাপন
ঘেচু একটি কচু জাতীয় উদ্ভিদ। মূলত ঘেচু বলতে ছোট কচুকে বোঝানো হয়। ব্যঙ্গাত্মকভাবে শব্দটি ব্যবহার করা ‘কিছুই না’ বোঝাতে। এই যেমন, ‘তুমি আমার ঘেচু করবে’। যাই হোক, উদ্ভিদ ঘেচুর কাছে ফিরে আসি। এটি একটি জলজ উদ্ভিদ। বর্ষাকালেই বেশি জন্মে। অপেক্ষাকৃত কম পানিযুক্ত ক্ষেতে ভালো হয়। অর্থাৎ বর্ষায় যেসব জমিতে পানি জমে আর শাপলা-শালুকের মতো জলজ উদ্ভিদ জন্মে, সেখানে ঘেচু গাছ জন্মে।
আবদ্ধ পানি যখন বর্ষা শেষে শুকিয়ে যায় তখন ফসলি জমিতে এই ঘেচু সহজেই পাওয়া যায়। গ্রাম্য শিশু বা নারীরা তা তুলে খায়। কেউ শখের বসে, কেউ অভাবে পড়ে।
সাধারণত এটি পানিতেই পুরোপুরি ডুবে থাকে। জলজ এই উদ্ভিদ দেখতে শ্যাওলার মতো বলে এটি পাতা শ্যাওলা নামেও পরিচিত। গ্রাম বাংলা বা চাষাবাদের সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে তারা নিশ্চয়ই এই গাছটি দেখেছেন। কিন্তু এই গাছকেই যে ঘেচু বলা হয় তা অনেকেই জানতেন না।
ফসলের ক্ষেতে এটি জন্মালে তা আগাছা হিসেবে তুলে ফেলা হয়। এই গাছে সাদা ফুল হয়। ডুবন্ত গাছের ফুলগুলো সাধারণত পানির ওপরেই থাকে এবং দেখতে সুন্দর লাগে।
ঘেচুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্ভিক্ষ
সাধারণত ঘেচুকে জলজ আগাছা বলা হয়। এর গোড়ায় চিনাবাদামের মতো মূল হয়। এই মূলই ঘেচু। ইংরেজিতে যাকে Aponogeton Crispus bulb বলা হয়। গাছের গোড়ায় থাকা ছোট আকারের কচুর মতো মূল যদি মাটির তলায় থেকে যায় তাহলে সেখান থেকে কিছুদিন পর আবার গাছ হয়।
এই ঘেচুমূল সাধারণত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। তবে অভাব অনটন আর দুর্ভিক্ষের সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ খাওয়ার মতো যখন কিছুই থাকে না, বিশেষত দুর্ভিক্ষের সময় কঠিন খাদ্যাভাব হলে ঘেচুকে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ। আমাদের দেশেও যুদ্ধপরবর্তী দুর্ভিক্ষের সময় অনেকে ঘেচু খেয়ে খিদা মেটান। ইতিহাস বলে, দুর্ভিক্ষের এক পর্যায়ে এই ঘেচুও শেষ হয়ে যায়। তখন খাবারের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন অসংখ্য মানুষ।
ঘেচু কীভাবে খাওয়া হয়?
পানিতে লবণ মিশিয়ে তাতে ঘেচু সেদ্ধ করে আলুর মতো খাওয়া যায়। এর স্বাদ পানসে। অনেকে সেদ্ধ ঘেচু বেটে লবণ-মরিচ-পেঁয়াজ মিশিয়ে রুটি বা চাপটি বানিয়েও খেয়ে থাকেন। আবার এটি পুড়িয়েও খাওয়া যায়। তবে এই খাবারটি মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া মোটেও উচিত নয়। বেশি ঘেচু খেলে তা পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে। দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা।
ঘেচুর অন্য ব্যবহার
ঘেচু গাছের একটি প্রজাতি শৌখিন অ্যাকুরিয়ামের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি পানি ডিসলভড অক্সিজেন (ডিও) এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। পানিতে বিভিন্ন অণুজীব, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনযাপনের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন পানিতে দ্রবীভূত থাকা প্রয়োজন তাকে ঐ পানির ‘ডিও’ বলা হয়। এর আদর্শ মান হলো ৪-৬ পিপিএম। এর মান যদি ২-৩ পিপিএম এর কম হয় তাহলে ঐ পানিকে দূষিত পানি বলা হয়।
এনএম