সবুজ পাতার ভিড়ে মাথা নিচু করে আছে লাল রঙা ফুল। সাধারণ ফুল থেকে কিছুটা ভিন্ন। রেণুর গুচ্ছ মনে হয়। ফুলের নামটা হয়তো জানেন না আপনি। কিন্তু দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। কিছুক্ষণ ভেবেই মনে পড়ল ফিডার বা বোতল পরিষ্কার করার ব্রাশের কথা। এই ফুল দেখতে যেন সেই ব্রাশের মতোই। জেনে অবাক হবেন, সত্যিই এই ফুলটির নাম ‘বোতল ব্রাশ’।
বিজ্ঞাপন
চিরহরিৎ গুল্ম বোতল ব্রাশ। এর ফুলগুলো দেখতে ভীষণ উজ্জ্বল লাল রঙের আর রেশমি কোমল। ফুলের অগ্রভাগ আর নিচে থাকে সবুজ পাতা। এই গাছটির কাঠ ০.৫ মিটার থেকে ৫ মিটার হয়ে থাকে। মাঝারি ঝাড় জাতীয় এই বৃক্ষ ৬ থেকে ১০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। ফুল ফোটার উপযুক্ত সময় বসন্ত। হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ রয়েছে ফুলের।
বোতল ব্রাশ গাছের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। দেশটির নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এর দেখা মেলে বেশি। বিশেষ করে পূর্ব উপকূলে। স্যাঁতস্যাঁতে বা ভেজা মাটিতে এই গাছ বেশি জন্মে। বোতল ব্রাশের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। গুল্মটি কাদামাটি, দোআঁশ এবং বালির মাটিতে বৃদ্ধি পায়। মাটি মাঝারিভাবে উর্বর, আর্দ্র কিন্তু ভালো নিষ্কাশনযুক্ত হতে হয়।
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ার অসাধারণ এই চীর সবুজ ঝোপাকৃতির গাছটি ৪০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়ু পায়। এই দীর্ঘায়ু পেয়েও বোতল ব্রাশ গাছ লম্বায় খুব বেশি উঁচু হতে পারে না। তাছাড়া এর বৃদ্ধির গতি খুবই মন্থর। বাংলাদেশে মূলত শৌখিন বৃক্ষ হিসেবেই এর পরিচিতি।
বোতল ব্রাশ গাছের সরু ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ ভাবে ফুল ফুটে। বড্ড নিখুঁত এই ফুল। কেননা প্রতিটি একক ফুলেই পুরুষ ও মহিলা অংশ থাকে। সারা বছরে কয়েকবার ফুল ফোটে। বেশিরভাগ লাল ফুল দেখা গেলেও এই ফুল কিন্তু লেমন বা হালকা সুবজাভ সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। ফুল ফুটলে ছোট পাখি এবং মৌমাছি আকর্ষিত হয়। ফুল শেষে ছোট ছোট ফল হয়। যাতে অসংখ্য বীজ থাকে। বীজ বা কলম থেকে চারা হয়। বন্যপ্রাণীরা এই ফল খায়।
জ্যামাইকায়, ক্বাথ গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, ডায়রিয়া এবং ত্বকের সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবে বোতল ব্রাশের ‘গরম চা’ ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক হিসেবে এই ফুল ব্যবহার করত। বোতল ব্রাশ ফুলের তেল ঘরকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করা হয়। এটি ঘরে শান্তির পরিবেশ নিয়ে আসে।
বোতল ব্রাশ ফুলের তেমন কোনো ওষুধি গুনাগুণ নেন। বরং এই ফুলের রেণু বাতাসের মাধ্যমে নাকের ভেতর গিয়ে অ্যাজমা রোগীদের হাঁচি–কাশির উদ্রেক বাড়িয়ে দেয়। তাই এঁকে ক্ষতিকর গাছ বলেও মনে করেন অনেকে।
এনএম