কফি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক পানীয়র নাম। অনেকের সকাল শুরু হয় এক কাপ কফিতে চুমুক দিয়ে। ‘কফি না খাওয়া পর্যন্ত মনে হয় কী যেন বাদ পড়ল। ব্যস্তজীবনে কফি না হলে যেন দিনই সার্থক হয় না’—বলছিলেন কফিপ্রেমী জহির উদ্দিন বাবর। কফি ভালোবাসেন এমন ব্যক্তিদের প্রায় সবারই এমন মত।
আজকের দিনটি কফিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ একটি দিন বলা চলে। কেননা আজ পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক কফি দিবস। শত ব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি মানসিক প্রশান্তি মেলাতে এই পানীয়র জুড়ি নেই। বাঙালি আড্ডায় চা-নাশতার পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে কফিও। পড়া বা কাজের ফাঁকে, সিনেমা দেখতে দেখতে কিংবা আয়েশি সন্ধ্যায় অনেকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন এক কাপ কফি।
বিজ্ঞাপন
জানলে অবাক হবেন, পৃথিবীজুড়ে প্রতিদিন ২২৫ কোটি কাপ কফি খাওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে কফি উৎপন্ন হয়। বর্তমানে আমাদের দেশেও এই বীজ উৎপন্ন হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও নীলফামারীর কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন কফি চাষে।
ঠান্ডা আর গরম দুইভাবেই কফি পান করা যায়। কেউবা এমনি পান করেন। কেউ আবার মেশান দুধ ও চিনি। কফির বিভিন্ন ধরনও রয়েছে। কীভাবে এই পানীয়র জন্ম হয়েছিল? মানুষ কীভাবে গ্রহণ করেছিল কফিকে?
বিজ্ঞাপন
পৃথিবীর প্রথম বানানো কফির সঙ্গে ছিল ছাগলের সংযোগ
কফি সম্পর্কে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। ঘটনা ৯ম শতাব্দীর। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চল। সেখানে খালিদ নামের এক আরব বাসিন্দা ছাগল চরাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখেন ছাগলগুলো অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি দুরন্ত আর চঞ্চল হয়ে উঠেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করেন তারা লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে।
আরও পড়ুন- এভাবে কফি পানে এক সপ্তাহেই কমবে ওজন
ধর্মপ্রাণ খালিদ সেই ফলটি নিয়ে তখনই চলে যান স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। কাঁচা খাওয়া অসম্ভব হওয়ায় ইমাম আগুনে ছুড়ে দিলেন ফলগুলোকে। কারণ তিনি প্রথমে এগুলোকে শয়তানের প্রলোভন বলে মনে করেছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই পোড়া ফলগুলো থেকে সুঘ্রাণ বের হতে শুরু করে।
ইমামের ছাত্ররা ঠিক করলেন ফলগুলো সেদ্ধ করে খেয়ে দেখবেন। এরপর এক কড়াই গরম পানিতে বীজগুলো সেদ্ধ করা হলো। এভাবেই পৃথিবীর প্রথম কফি বানানো হয়। ইমাম ও তার শিষ্যরা অবাক হয়ে খেয়াল করলেন এই পানীয় খেয়ে তারা রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে থাকতে পারছেন। প্রার্থনার জন্য যা বেশ কার্যকরী মনে হলো তাদের কাছে। তাই খুব দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল গরম পানীয়টির সুনাম।
আরও পড়ুন- কফি পানের উপকারিতা
একসময় আরবের বাইরের লোকজন একে ‘আরবের ওয়াইন’ বলত। মক্কায় হজের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর যখন লাখো মুসলিমের সমাবেশ হতো, তখন ইথিওপিয়া থেকে বণিকরা কফির বীজ নিয়ে আসত। হজে আগত বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা বেশ আগ্রহ সহকারে এটি পান করতেন। কেননা কফি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের রাত জেগে ইবাদত করার পেছনে দারুণ ভূমিকা রাখত।
বর্তমানে কফি বেশ জনপ্রিয় হলেও শুরুর দিকে এই পানীয় নিয়ে নানা ধর্মের মানুষের সন্দেহের শেষ ছিল না। ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা কফির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন শুরুতে। তারা একে ‘ড্রিংক অব দ্য ডেভিল’, অর্থাৎ শয়তানের পানীয় বলতেন।
২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কফি সংস্থা (আইসিও) ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক কফি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ইতালিতে দিবসটি উদযাপিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর কফিপ্রেমীরা কফি পানের মাধ্যমে দিবসটি কাটান।
কফি উপকারি ও সতেজ অনুভূতি দিলেও খালি পেটে এটি পান করা একদমই উচিত নয়। এতে অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে। দেখা দিতে পারে গা গোলানো বা বমি ভাব। কফি পানের উৎকৃষ্ট সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা। তবে রাতের খাবার খাওয়ার পর কফি পান না করাই ভালো। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তথ্যসূত্র: নেসক্যাফে ডট কম, উইকিপিডিয়া
এনএম