প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে বিশেষ একটি দিন, জন্মদিন। আর জন্মদিন মানেই আনন্দ উল্লাস। বিশেষ দিনটির কথা বললেই চলে আসে কেকের কথা। কেক কাটা কী আর জন্মদিন জমে! আকার ছোট হোক কিংবা বড়, জন্মদিনে কেক না কাটলে যে দিনটি সঠিকভাবে উদযাপনই হয় না।
কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে জন্মদিনে কেন কেন কাটা হয়? এই কেক কাটার রীতিই বা এলো কীভাবে? এর সঙ্গে কিন্তু ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আজ চলুন তা জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

বহুবছর আগে রাজা-বাদশাহদের সময় থেকেই জন্মদিনে বেশ বড় উৎসব পালন করা হতো। এর পেছনে ছিল অদ্ভুত এক বিশ্বাস। ধারণা করা হতো, নামিদামি মানুষদের পেছনে সবসময় দুষ্ট আত্মা কিংবা অশুভ শক্তি ঘোরাফেরা করে। অন্যদিকে জন্মদিনকে ধরা হতো জীবনের নতুন বছরের সূচনা। তাই নতুন বছরে রাজা-মহারাজার যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যেই শয়তান তাড়াতে পালন করা হতো জন্মদিনের অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন- বড়দিনে কেক কাটার রীতি এলো যেভাবে
জন্মদিনকে কেন্দ্র করে কেক কাটার প্রচলন শুরু হয় তখন থেকেই। তবে ইতিহাসে লিখিতভাবে জন্মদিনের কথা প্রথম জানা যায় বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায় থেকে।
বিজ্ঞাপন

সেসময়ে গ্রিকরা প্রায় চাঁদের মতো দেখতে গোলাকৃতির কেক বানাত। চাঁদের দেবী আর্তেমিসের জন্য সেই বিশেষ কেক বানানো হতো। মধ্যযুগে জার্মানরা যিশুর জন্মদিন উদযাপনের জন্য ময়দা দিয়ে এমনভাবে কেক তৈরি করত যে দেখে মনে হতো শিশু যিশুকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন- কেক বানানো শিখছেন? মাথায় রাখুন এসব বিষয়
এরপর ধীরে ধীরে একসময় ছোট শিশুদের জন্মদিন পালন করা শুরু হয়। এই উৎসবকে বলা হতো কিন্ডারফেস্ট। তারা মনে করত, এর মাধ্যমে তাদের সন্তানের পবিত্র আত্মাকে দুষ্ট আত্মা থেকে রক্ষা করা যাবে।

তবে কেক কেটেই যে সব দেশে জন্মদিন পালন করা হতো তা নয়। দেশভিত্তিক জন্মদিন পালনের ভিন্নতা ছিল। রাশিয়ায় জন্মদিনে ফলের তৈরি পাই (এক ধরনের পিঠা) অতিথিদের দেওয়া হতো। কোরিয়ায় খাওয়ানো হতো স্যুপ। বর্তমানে অবশ্য সবদেশেই কেক কেটে জন্মদিন পালন করা হয়।
কেক কেটে জন্মদিন পালনের কথা বলতে গেলেই মোমবাতির কথা। মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন আমরা জন্মদিনে কেকের ওপর মোমবাতি জ্বালাই? কেনই বা সেটি ফু দিয়ে নিভিয়ে উৎসব করি? এর সঙ্গেও ইতিহাসের সংযোগ রয়েছে।

প্রাচীনকালে গ্রিকদের দেবী আর্তেমিসের জন্মদিনের কেকটা যেন চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করে, তার জন্য কেকের গায়ে অনেকগুলো জ্বলন্ত মোমবাতি বসিয়ে দেওয়া হতো। তারা ভাবতেন, আর্তেমিস তাদের কেকটাকে ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছেন। এরপর সবাই মিলে প্রার্থনা করে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দিতেন। আর ভাবতেন সেই মোমবাতির ধোঁয়া তাদের প্রার্থনা নিয়ে দেবতার কাছে চলে যাচ্ছে।
তারা ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে কেকের চারপাশটা সাজিয়ে দিতেন। মাঝখানে থাকত একটা বড় মোমবাতি। এই বড় মোমবাতিতে আবার ১২টি দাগ টানা থাকতো। মূলত দাগগুলো দিয়ে বছরের ১২ মাস বোঝানো হয়তো। বিষয়টিকে তারা লাইট অব লাইফ বলতেন।

সেখান থেকেই ধীরে ধীরে জন্মদিনের কেকে মোমবাতি জ্বালানোর প্রচলন শুরু হয়। এখন প্রায় সব দেশেই জন্মদিন পালনে কেকের ওপর মোমবাতি জ্বালানো হয়।
এনএম

