শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বৈষম্য বাড়ছে

হাবীব ইমন
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩, ০৩:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বৈষম্য বাড়ছে
ছবি : ঢাকা মেইল

অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান। তাঁর পেশাজীবন শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে। এরপর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে। সংস্থাটির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের মূল লেখক টিমের অন্যতম সদস্য তিনি। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিসহ নানা বিষয় নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবীব ইমন। 

ঢাকা মেইল : স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?


বিজ্ঞাপন


সেলিম জাহান : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৫২ বছর চলে গেল। অর্থনীতির দিক থেকে আমি মনে করি, বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে। মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপের মাঝ দিয়ে যাত্রা শুরু করে। আমাদের এটাও মনে আছে, কিছু লোক বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছে। সেই জায়গা থেকে আজ বাংলাদেশের যে অর্জন, আমার মনে হয় তা অভূতপূর্ব। সে অর্জন আমরা উদযাপন করে থাকি। যেমন কয়েকটা কথা বলি, যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৯৯০ সালে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ছিল, আজ সেটা ৩৫০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০-৩০০ ডলার থেকে আজ ২১০০ ডলার, অর্থাৎ সাতগুণ হয়ে গেছে। দারিদ্র্যের হার আমরা ১৯৯০-এ প্রায় ৪৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নিয়ে এসেছি। এ তালিকা আমি দীর্ঘ করতে চাই না, কিন্তু নানা ক্ষেত্রে বিশেষত অর্থনীতির নানান সূচকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের অগ্রগতি ও অর্জন বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি ভারতের তুলনায় বহু ক্ষেত্রে বেশি। যেমন আমাদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭৩ বছর, ভারতে সেটা ৬৯ বছর, পাকিস্তানে ৬৭ বছর। অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশু মৃত্যুহার আমরা ৩০ এ নামিয়ে আনতে পেরেছি। ভারতে এখনও ৩৫, পাকিস্তানে ৬৭।

এত অর্জনের মধ্যেও আমাদের কতগুলো নেতিবাচক দিক আছে, সেগুলো তুলে ধরা দরকার। আমরা দেখতে পারছি এসব অর্জনের সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। যার ফলে বৈষম্য ও অসাম্য বেড়ে গেছে।

মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপের মাঝ দিয়ে যাত্রা শুরু করে। আমাদের এটাও মনে আছে, কিছু লোক বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছে। সেই জায়গা থেকে আজ বাংলাদেশের যে অর্জন, আমার মনে হয় তা অভূতপূর্ব।

ঢাকা মেইল : কেন এই বৈষম্য? বৈষম্য বৃদ্ধি পেলই বা কেন?


বিজ্ঞাপন


সেলিম জাহান : আমি শুধু আয় বা সম্পদের বৈষম্য দেখি না, সূচকেরও বৈষম্য দেখি। যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুদের সুযোগ একরকম নয়। এখানে তিনটা ধারা প্রচলিত আছে। খুব বিত্তবানদের জন্য যে বিদ্যালয়গুলো আছে, সেখানে যে শিশুরা যাচ্ছে, আর মফস্বল শহরে সাধারণ সরকারি বা বেসরকারি বিদ্যালয়ে যে শিশুটি যাচ্ছে, তারা একই সুযোগ পাচ্ছে না। সেটা আমরা কোভিডের সময় বেশি দেখেছি। বিশেষত ঢাকা শহরে কম্পিউটার বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে শিশুরা দূর থেকেও শিক্ষালাভ করতে পেরেছে, গ্রামে সেটা সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তিন রকমের ব্যবস্থা আছে- একটা সরকারি হাসপাতাল, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একটা বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আরেকটা হচ্ছে শুধুই বিত্তবানদের জন্য, যারা বাইরে গিয়ে সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক থেকে স্বাস্থ্য সুবিধা পাচ্ছেন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার, সেখানে বৈষম্য বেড়ে চলছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে চিৎকার কেন হচ্ছে না, আন্দোলন কেন হচ্ছে না? আমার মনে হয়, আয় যখন বেড়েছে, তখন নিম্নশ্রেণিতে যারা আছেন, দরিদ্র মানুষ, তাদের আয়ও কিছুটা বেড়েছে, তাদের ভোগ কিছুটা বেড়েছে। যার জন্য বৈষম্যের যে জ্বালা, যে প্রভাব সেটা ঠিক এখন পর্যন্ত মানুষকে তার পিঠ দেয়ালে ঠেকতে দেয়নি। এ জন্য আমার মনে হয়, এর বিরুদ্ধে যে ধরনের আন্দোলন, সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল, সেটা হচ্ছে না।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্জনের সঙ্গে অন্য কতগুলো ব্যাপারও উল্লেখ করতে চাই। সেটা হচ্ছে-আমাদের অর্থনৈতিক অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জনশক্তি রফতানি। সেই সঙ্গে পোশাক শিল্পের রফতানি। এটা নিয়ে আমরা গর্ব করি, অর্থনীতি চালনার ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা আছে। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে আমাদের অর্থনীতি দুটো খাতের ওপর নির্ভর করে, আর যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো রকম পরিবর্তনের ফলে এ দুটো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং এর মধ্যে একটা ভঙ্গুরতা আছে। সে ভঙ্গুরতা আমরা অনেক সময় দেখি না। ধরা যাক, আগামীতে যদি পোশাক শিল্পের পতন হয়, যেটা আমরা কোভিডকালেও দেখেছি। কিংবা জনশক্তি রফতানি যদি কমে আসে, যারা আমদানি করছে তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে, তাহলে কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে।

তৃতীয়ত, আমাদের একটা ঝোঁক আছে, বিশাল বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা। যেটার হয়তো চমক দেওয়ার ব্যাপার আছে। এই যে বিশাল বিশাল প্রকল্প আমরা গ্রহণ করছি, তার অনেকগুলোই কিন্তু ঋণ নিয়ে করছি। এ ঋণ তো আমাদের ফেরত দিতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার বর্তমানে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে। সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ অস্থির অর্থনীতির বিশ্বে যদি এ জাতীয় প্রকল্প গ্রহণ করি, যেগুলো হয়তো মর্যাদাপূর্ণ, কিন্তু অর্থনীতিতে-উন্নয়নে তাদের ভূমিকা কি সেটা এখনও আমরা জানি না। এই দিকটা আমাদের দেখা দরকার।

সুতরাং অর্থনীতির দিক থেকে যদি মূল্যায়ন করি, তাহলে বলব উন্নতি অনেক হয়েছে, অর্জন অনেক হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে একটা ভঙ্গুরতা রয়েছে, অসাম্য রয়েছে। সেই সঙ্গে আমার মনে হয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের চেয়ে বহুক্ষেত্রে অনুন্নয়নমূলক প্রকল্প হয়েছে।

রাজনীতির ক্ষেত্রে অর্জনের কথা যদি বলি, তাহলে বলব, বাংলাদেশের অর্থনীতির দিক, রাজনীতির দিক, সাংস্কৃতিক দিক একই গতিতে চলেনি। অর্থনীতি দিক থেকে যেসব অর্জন, যেসব অগ্রগতি হয়েছে, রাজনীতির দিক থেকে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সেই স্থবিরতার অনেক দিক আছে। রাজনীতির দিক থেকে যে ধরনের উল্লম্ফন হওয়ার দরকার ছিল, যে ধরনের সহনশীলতা প্রয়োজন ছিল, যে ধরনের প্রজ্ঞার দরকার ছিল, সেটা কিন্তু হয়নি। ফলে দেখতে পাচ্ছি যে রাজনৈতিক দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। রাজনীতির দিক থেকে যে ধরনের পরিশীলতা দরকার ছিল, যে ধরনের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রয়োজন ছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভেতর ও বাইরে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

সেই সঙ্গে আরেকটা বিষয় মনে রাখা দরকার, জনগণ কিন্তু রাজনীতির ব্যাপারে নিস্পৃহ। অথচ যদি একাত্তরের দিকে, এর পরের দিকে তাকাই, আমাদের জনগণ রাজনীতির দিক থেকে অত্যন্ত সোচ্চার, অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। এবং এটা বিভিন্ন শ্রেণির দিক থেকে। যারা শিক্ষিত শ্রেণি, তারা তো ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু যারা একেবারে দরিদ্র শ্রেণি তাদেরও একটা মত ছিল, সক্রিয়তা ছিল। তারা নিজের মতো করে রাজনীতির বিষয়ে মতামত রাখতে পারতো। সেই জনগোষ্ঠী আজ রাজনীতির ব্যাপারে একেবারে মাথা ঘামাচ্ছেন না। নির্বাচন হচ্ছে কিনা, কোন দল ক্ষমতায় আসছে, তাদের রাজনৈতিক মতামতটা কি- এ সম্পর্কে তারা নিস্পৃহ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রের জন্ম, ৫২ বছর পর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনীতির ব্যাপারে এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা দেখা যায়, এতে আমি ভীষণ শঙ্কিত।

অর্থনীতির দিক থেকে যদি মূল্যায়ন করি, তাহলে বলব উন্নতি অনেক হয়েছে, অর্জন অনেক হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে একটা ভঙ্গুরতা রয়েছে, অসাম্য রয়েছে। সেই সঙ্গে আমার মনে হয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের চেয়ে বহুক্ষেত্রে অনুন্নয়নমূলক প্রকল্প হয়েছে।

রাজনীতির থেকে একটা কথা বলা খুব দরকার। রাজনৈতিক সহনশীলতা দরকার, পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানো দরকার। সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমি মনে করি অতীতে আমরা মতভেদ থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে, বিতর্কের মাধ্যমে আমরা তা সমাধান করেছি। আজ বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলাদলি বা রাজনৈতিক যে ব্যাপারগুলো সেখানে সমাধানের জন্য আমরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে না গিয়ে অস্ত্রের মাধ্যমে সমাধান চাচ্ছি।

সুতরাং আমি মনে করি সন্ত্রাস অনেকটা আমাদের সংস্কৃতির মতো হয়ে গেছে। সহিংসতা আমাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা দেশের ৫২ বছরে তার রাজনৈতিক অঙ্গনের এ পরিস্থিতি থেকে বুঝতে হবে রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার যে পরিপক্কতা আশা করেছিলাম সেটা মোটেও হয়নি। সেই সঙ্গে বলা দরকার, রাজনীতির দিক থেকে যে মূল্যবোধ, চার নীতি গ্রহণ করে যে বাংলাদেশের জন্ম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেগুলো চালিকাশক্তি, সেগুলো আমরা নষ্ট করে দিয়েছি।

ঢাকা মেইল : বাংলাদেশে ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে কি বলবেন?

সেলিম জাহান : ধর্মনিরপেক্ষতার যে কথাটি রয়েছে, সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করা হয়েছে। যখন একটি ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করা হয়, তখন যারা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী তাদের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিভাজন চলে আসে। রাষ্ট্র তখন ধর্মীয় সংখ্যাগুরুকেই নানান দিক থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। যার যার ধর্ম সে ব্যক্তিগতভাবে পালন করবে।

সমাজতন্ত্রের কথা যখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তখন সামাজিক ন্যায্যতার কথা বলেছেন। আজ সব শ্রেণির নাগরিকের সামাজিক ন্যায্যতা নেই। রাজনীতির দিক থেকে যে অবস্থা, ৫২ বছর পর এটা প্রত্যাশিত না।

বাংলাদেশের সংস্কৃতি সবসময় ধর্মের ওপর নির্ভর করেনি। আমাদের সংস্কৃতির দুটো দিক ছিল। এর কিছু কিছু আচার, কিছু কিছু ধর্মের ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। যে যার ধর্ম পালন করেছে, ধর্মের মধ্যে যে আচরণগুলো রয়েছে, সেগুলো মানুষ করেছে। কিন্তু ধর্মের বাইরে বাঙালি হিসেবে বা বাঙালি জাতি হিসেবে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, কতগুলো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আমাদের ছিল, সেটাকে আমরা ধর্মের বাইরে রেখেছি। যার কারণে পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে আসছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পালা-পার্বণ, আামাদের যাত্রাগান, দেশজ সংস্কৃতির মধ্যেও আমরা ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালিত্ব দেখতে পারছি।

ঢাকা মেইল : বাঙালি ও বাংলাদেশি বিতর্ক নিয়ে যদি কিছু বলেন—

সেলিম জাহান : আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি—এ ধরনের বিতর্ক জাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা অর্থহীন বিতর্ক। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, সেই নাগরিকত্বের ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশি। কিন্তু জাতিসত্ত্বার দিক থেকে আমরা বাঙালি। এটার মধ্যে কোনো রকমের বিভেদ নেই, কোনো রকমের দন্দ্ব নেই। একজন চাকমা জাতিসত্ত্বার দিক থেকে চাকমা, তিনিও বাংলাদেশি। আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার, এই যে বাংলাদেশি বা নাগরিকত্বের যে আত্মপরিচয় সেটা তো বদলানো যায়। আজকে যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিক মরক্কোর নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, তিনি মরক্কের নাগরিক। তাই বলে তিনি আরব হয়ে যাননি। তিনি সেই বাঙালিই থাকবেন। এই যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে, এটা অনেকটা ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতির কারণে হয়েছে। আমরা ক্রমশ মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতির দিকে চলে যাচ্ছি। এটা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে নানাভাবে নেতিবাচক অবস্থানে এসে গেছে। বহু বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, আবার অনেক বিষয়কে মুসলমানের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের মূল্যবোধের ভিত্তিতে ৫২ বছরে যতখানি এগোনোর দরকার ছিল, বহুক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে গেছি।

চলবে ...

/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর