ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বিভিন্ন আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে বোমা ফেলেই চলেছে। এর মাধ্যমে হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে একই পরিবারের কয়েক ডজন লোককে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পরও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। আজ থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে একই পরিবারের কয়েক ডজন লোককে হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রত্যাশিত চুক্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবারও ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি: এরপর কী ঘটবে?
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বুধবার লন্ডন সফরে গিয়ে বলেছেন যে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের ৫২ সদস্য নিহত হয়েছে। জাবালিয়ায় কাদৌরা পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার কাছে নামের তালিকা আছে। দাদা থেকে নাতি-নাতনি পর্যন্ত তারা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
দক্ষিণ গাজায় আল জাজিরার তারেক আবু আজজুম বলেছেন যে, মানবিক বিরতির ঘোষণার পরও বুধবার ভারী হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় খান ইউনিসের একটি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এই এলাকাকে আশ্রয় নেয়ার জন্য নিরাপদ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছিল।
বিজ্ঞাপন
গাজায় নির্বিচারে হামলার দেড় মাস পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। বুধবার এ বিষয়ে জানায় হামাস ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য অস্পষ্ট রয়ে গেছে। তবে জানা গেছে, গাজায় হামাসের হাতে থাকা ৫০ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিমিয়ে কারাগারে থাকা অন্তত ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। চারদিনের যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় মানবিক ত্রাণ পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: গাজায় ৭২ ঘণ্টায় ৬০ ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তিটিকে 'সঠিক দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি যোগ করেছেন যে দুর্ভোগ শেষ করতে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
চুক্তিটি বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেটি এখন পিছিয়ে শুক্রবার থেকে কার্যকর হতে পারে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলছে, জিম্মি চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে, শুক্রবারের আগে এটি বাস্তবায়িত হবে না।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবরের আকস্মিক হামলায় ১৪০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েল। তবে সম্প্রতি সেই সংখ্যা কমিয়ে ১২০০ করা হয়েছে। এছাড়া হামাস ইসরায়েল থেকে ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে বলে জানায় নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এরপর থেকে গাজায় ও পশ্চিম তীরে নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। গাজার আবাসিক এলাকা, স্কুল, হাসপাতাল, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদাম, খাবারের দোকানসহ কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যায়নি। এখন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬০০টিরও বেশি শিশু। নিহত বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী।
আরও পড়ুন: ফুটবলার হতে চেয়েছিল আসিফ, পা কেড়ে নিল ইসরায়েল
জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের মানবিক গোষ্ঠীগুলো গাজায় মহাবিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছে। গাজার তিনপাশ দখল করেছে ইসরায়েল। একপাশে রয়েছে মিশর। হামলার পর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে সেখানকার ২৩ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং পানির ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, যুদ্ধে সাময়িক বিরতির অর্থ যুদ্ধের সমাপ্তি নয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক রেকর্ডবার্তায় বলেন, 'আমরা যুদ্ধে রয়েছি এবং আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না আমরা আমাদের সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করি। হামাসকে ধ্বংস করা, আমাদের সমস্ত জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে গাজার কোনো সত্তা ইসরায়েলকে হুমকি দিতে না পারে।
আরও পড়ুন: এক টেবিলে আরব ও মুসলিম বিশ্ব, কী পেল ফিলিস্তিনিরা?
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, চুক্তির বাস্তবায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যার জন্য সময় লাগতে পারে।
আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তারা আশা করেন এটি ভবিষ্যতে আরও চুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
একে