ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার। কাতারের মধ্যস্থতায় চারদিনের যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি অনুমোদন করেছে দুই পক্ষ। তবে চুক্তিতে পৌঁছালেও এটি বাস্তবায়ন করতে বেশকিছু পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, যেহেতু দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, এখন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে বেশ কয়েকটি পর্যায় পার করতে হবে। এর মানে হলো চুক্তিতে পৌঁছালেও গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা এখনই বন্ধ হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী?
যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার ভোটের বিষয়টি কাতারে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর কাতার থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো ইসরায়েলি এই চুক্তির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে। এই সময়ের মধ্যে, গাজার বন্দী বা ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের কেউই মুক্তি পাবে না।
আরও পড়ুন: যেসব শর্ত মেনে যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল
আপিলের এই সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পরে সম্ভবত বন্দীদের প্রথম বিনিময় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ইরসায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের রাজনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে যে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত গাজার ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ছিটমহলের উত্তর অংশে ফিরে যেতে পারবে না।
যা জানিয়েছে ইসরায়েল
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ইসরায়েলের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, আগামী চার দিনের মধ্যে ৫০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। দৈনিক এক ডজন করে জিম্মি মুক্তি পাবেন।
চুক্তি অনুযায়ী, এসব জিম্মিদের কয়েক ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে। প্রতি ১০ জন জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৩০ ফিলিস্তিনি মুক্তির শর্তারোপ করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তিতে স্থলভাগে চার থেকে পাঁচ দিনের সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এই তালিকায় ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুরা থাকবেন।
আরও পড়ুন: গাজায় ৭২ ঘণ্টায় ৬০ ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি ১০০ থেকে ৩০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আগামী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে চ্যানেল ১২। প্রাথমিকভাবে ৫০ জিম্মির মুক্তি দেওয়া হবে। যা আরও বাড়তে পারে।
যা বলেছে হামাস
এই চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলকে মানতে হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বেশকিছু শর্ত। টেলিগ্রামে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় গাজা উপত্যকার সব এলাকায় সামরিক যান চলাচল বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। চিকিৎসা ও জ্বালানিসহ শতশত মানবিক সহায়তার ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকালীন চার দিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ৬ ঘণ্টা ড্রোন উড়ানো বন্ধ থাকবে।
ওই বিবৃতিতে হামাস আরও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন গাজা উপত্যকার সমস্ত অঞ্চলে কাউকে আক্রমণ বা গ্রেফতার না করতে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া সালাহ আল-দ্বীন স্ট্রিটে চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার শর্তও দিয়েছে হামাস।
বিধ্বস্ত গাজা
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার। আহতদের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া নিখোঁজের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। নিখোঁজদের বেশিরভাগই ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে ৮৩টি মসজিদ। তিনটি গির্জাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ৪৩ হাজারের বেশি আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজা উপত্যকার ৬০ শতাংশ আবাসিক ইউনিট।
আরও পড়ুন: ফুটবলার হতে চেয়েছিল আসিফ, পা কেড়ে নিল ইসরায়েল
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে ২৫টি হাসপাতাল এবং ৫২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষেবার বাইরে চলে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ৫৫টি অ্যাম্বুলেন্সকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। গাজা প্রশাসন সেখানে চলমান নৃশংসতার জন্য ইসরায়েল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করেছে।
সূত্র: আল জাজিরা, আনাদুলু এজেন্সি
একে