মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছিলেন যে, তাদের দুই দেশ 'প্রতিদিনই একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ' হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরের শেষদিকে মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিন সালমান দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা উল্লেখও করেননি। তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন চুক্তি 'ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজন মেটাবে ও তাদের একটি ভালো জীবনের নিশ্চয়তা দিবে'।
বিজ্ঞাপন
তবে শনিবার থেকে হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের পর সৌদি আরব এখন প্রকাশ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলছে এবং তাদেরকে ফিলিস্তিনি জনগণের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেব্যারন সংস্থার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, হামাসের হামলা সৌদিদের একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। সেটি হচ্ছে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের ইস্যুটি শুধুই একটি 'সাবটপিক' অর্থাৎ উপ-বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এই হামলা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়ে পরিবর্তন আনবে।
আরও পড়ুন: এবার ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে মুহুর্মুহু রকেট হামলা হামাসের
আটলান্টিক কাউন্সিলের 'স্কোক্রফট মিডলইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের' পরিচালক জনাথন পানিকফ বলেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অদূর ভবিষ্যতে অগ্রগতি হবে, এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের অভিযানে গাজায় অনেকের মৃত্যু হলে এবং সেখানে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চললে সেটি সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের গবেষণা ফেলো হিউ লোভাট বলেন, তার বিশ্বাস 'আরব বিশ্বের জনগণের মতামত- যার বেশিরভাগই ইসরায়েলের প্রতিকূল- সেটি ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার কারণে আরও বাড়বে।'
এদিকে, ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে। তবে তারা হামাসের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেনি।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
শুধু আরব বিশ্বের চাপ নয়, সৌদি আরব ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগোবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার দিকেও নজর রাখবে। এ বছর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা দেখা গেলেও মিত্রদের প্রশ্নে এখনও দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের প্রতি সৌদি যুবরাজের সমর্থন
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে সৌদি আরব আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ২০১৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। ওই বছর সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং মার্কিনিদের তত্ত্বাবধানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণেরও অনুমতি আশা করছে সৌদি আরব।
আটলান্টিক কাউন্সিলের পানিকফের ধারণা, সৌদি আরবের বিশ্লেষকদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের কাছাকাছিও নয়। ফলে ইসরায়েলের মতো দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হলে সৌদি আরবে কত প্রাণহানি ও ধ্বংস হতে পারে, তা ভাবতে পারেন সৌদি বিশ্লেষকেরা। সে কারণে হয়ত সৌদি আরব আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ফিরতে পারে, বলে মনে করছেন তিনি।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
একে