শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

রোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম

রোগীর চাপ বাড়ছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে অধিকাংশ সময় সাতশর উপরে রোগী ভর্তি থাকে। কখনো কখনো তা হাজারের কাছাকাছি চলে যায় বলে জানা গেছে। এতে সেবা দিতে হিমশিম খান চিকিৎসক ও নার্সরা। কখনো কখনো রাতে রোগীর এত বেশি চাপ থাকে যে রাতে কর্মরত নার্সরা খাওয়ারও সুযোগ পান না। বিশেষ করে হাসপাতালটির শিশু, ডেঙ্গু ও মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সদের অনেক কষ্ট করতে হয়।

জানা গেছে, দিনের বেলা রোগীর চাপ কম থাকলেও রাতে চাপ বেড়ে যায়। এসময় হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেও কোনো রিলিজ হয় না। রাতের শিফট চালু হয় রাত ৮টা থেকে। চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। তাই যারা রাতের শিফটে ডিউটি করতে আসেন তাদের অনেককেই সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে হয়। তাই রাতের খাবার খেয়ে আসতে পারেন না। এজন্য অনেকেই খাবার নিয়ে আসেন। কিন্তু রোগীর চাপে অনেক সময় খাবার খাওয়ারও সুযোগ হয়ে ওঠে না বলে জানালেন অনেকে।


বিজ্ঞাপন


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুগদা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে কর্মরতা একজন নার্স বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে রোগীর অনেক বেশি চাপ। বিশেষ করে নাইট শিফটে অনেক কষ্ট হয়। ১৩০-১৪০ পেসেন্টের বিপরীতে নার্স থাকে মাত্র ৩-৪ জন। নাইট শিফট থাকলে আমরা সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে রওয়ানা দেই। সাথে খাবার নিয়ে আসি। কিন্তু রোগীর এত বেশি চাপ থাকে অনেক সময় রাতে খাওয়ার সুযোগ পাই না। কখনো কখনো রাতের খাবার থেকে ১-২টা বেজে যায়। তিনি আরও জানান, ৬০ জনের বেড ক্যাপাসিটি এই ওয়ার্ডে ১০ জনের উপরে রোগী থাকে। কখনো কখনো দেড়শ ছাড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন: এক সপ্তাহেই ছুঁয়েছে মাসের রোগী

dengue

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত আরেকজন নার্সও একই ধরনের কথা বললেন। তিনি বললেন, একজন রোগীর কাজ করতে গেলে পাশে থেকে আরেক রোগীর স্বজনরা ডাকাডাকি করে। বলে আমাদেরটা আগে করে দেন। সেখানে গেলে আরেকজন ডাকাডাকি করে।

এদিকে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে সাতসর ওপরে রোগী থাকে। কখনো তা ৮০০-৯০০ কখনো বা হাজারের কাছাকাছি চলে যায়। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দেখা গেছে, মূল ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগী ওয়ার্ডের বাইরেও ফ্লোরিং করে রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের বাইরে লিফটের গোড়া থেকে নিয়ে সিঁড়ির কাছেও শোয়ানো হয়েছে রোগীদের। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে যেমন রোগী বের হচ্ছে আরেকদিকে ভর্তি হচ্ছে।

অপরদিকে সারাদেশেই দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, খিলগাঁও, মান্ডা, মতিঝিল এলাকার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন মুগদা মেডিকেলে।

আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দীতে রোগীর চাপ কম, বেড খালি

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতিদিন অনেক রোগী আসছে আবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। আমাদের এখানে ৮ নভেম্বর সকালের হিসেবে ৭৪৮ জন রোগী ভর্তি আছে। ডেঙ্গু সিট ক্যাপাসিটি আছে ২০০। আমাদের এখানে ওষুধ, লজিস্টিক কিংবা বেডের অভাব নেই। শুধু চিকিৎসকের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ১২০-১৩০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করতে হলে আমাদের আরও ৫-১০ জন চিকিৎসক দরকার। আরও কিছু নার্স দরকার। যারা সার্বক্ষণিক রোগীদের দেখাশোনা করতে পারবে। আমাদের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা মেডিসিন ওয়ার্ডেও কাজ করে। তাদের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। এই চিকিৎসক সংকট না হলে আমাদের এখানে কোনো সমস্যা হবে না।

dengue

চলতি বছরের মে মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই আক্রান্ত আগের মাসগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে এসে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

আরও পড়ুন: ঢামেক হাসপাতালের ফ্লোর-বারান্দাতেও রোগী

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯১১ জন। ওই মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। এবছর ডেঙ্গু জ্বরে এখন পর্যন্ত ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অক্টোবরে মারা গেছেন ৮৬ জন। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে মারা গেছেন ৩৪ জন। আগস্টে মারা গেছেন ১১ জন। গত জুন মাসে একজন ও জুলাইয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া চলতি বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ৬২৩ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ১২ হাজার ৮ জন ডেঙ্গু রোগী।

এছাড়াও চলতি বছরের ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ১০৫ জন।

টিএই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর