বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণেই ‘ডেঙ্গুর হটস্পট’ কক্সবাজার!

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণেই ‘ডেঙ্গুর হটস্পট’ কক্সবাজার!

মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের তাণ্ডব দেখছে দেশবাসী। প্রায় প্রতিদিনই একের পর এক রেকর্ড গড়ছে রোগটি। প্রাথমিক অবস্থায় শুধু রাজধানী ঢাকায় রোগী পাওয়া গেলেও এখন সারাদেশেই ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। রাজধানীর সাথে পাল্লা দিয়ে রোগী বাড়ছে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। রাজধানীর বাইরে মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকই হয়েছে জেলাটিতে। ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কক্সবাজার।  

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের তথ্যমতে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৩৬ হাজার ১৩১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকার ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪ হাজার ৮৫৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১১ হাজার ২৭৮ জন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের ৭৯ জন ঢাকায় এবং ৫৫ জন দেশের অন্যান্য স্থানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৮ জনই চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ২৩ জনই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্তরায় অতিরিক্ত পরীক্ষা ব্যয়

সরকারি তথ্যমতে, কক্সবাজারে মোট এক হাজার ৫৬২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে ১৫ হাজারের অধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নাগরিক। ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্টরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এবং শহরের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে ড্রেন নালা বন্ধ ও খানা-খন্দতে জমে থাকা পানিকে দায়ী করেছেন।

dd2


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মমিনুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গত চার মাসে জেলার ডেঙ্গুর সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়েছে। এটি মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ছড়িয়েছে। সেখানে প্রায় ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা আক্রান্ত ছিল। আর কক্সবাজার জেলায় ১৫ হাজারের অধিক। এর মধ্যে শুধু সদর হাসপাতালে এক হাজার ২০০ এর অধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তারমধ্যে ২২ জন মারা গেছেন।’

আরও পড়ুন: ‘বেসামাল’ ডেঙ্গু: দেরিতে হাসপাতালে আসায় বাড়ছে মৃত্যু

ডেঙ্গু মোকাবেলায় হাসপাতালের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল। আমাদের চিকিৎসক-নার্স এবং ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেলাইনের পর্যাপ্ত মজুদ ছিল। আমরা সরকারি মাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকেও সরবরাহ পেয়েছি। আমাদের এখনও প্রয়োজনীয় মজুদ রয়েছে। আমাদের ডেডিকেটেড চিকিৎসক ও নার্সের টিম ছিল। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদ আলাদা ডেঙ্গু জোন করেছি। সেখানে তাদের সার্বক্ষণিক মশারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন এক রোগী থেকে অন্য রোগীতে ডেঙ্গু না ছড়ায়। রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রোগী ম্যানেজমেন্টের গাইডলাইন রয়েছে। আমরা সেই গাইডলাইন মেনেই কাজ করছি। এই মাসে মৃত্যুর ও ভর্তির হার কম। আগামী মাসের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও কমে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’

dd3

মশাবাহিত রোগটির ব্যাপক প্রদুর্ভাবের কারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হয়তো ডেঙ্গু প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা হয়তো মশারি ব্যবহার করে না। যদিও তাদের মশারি দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পে ঘন বসতি রয়েছে। তাছাড়া মশা জন্মানোর জন্য পানি জমে থাকাসহ যে ধরনের পরিবেশ থাকে, সেটাও হয়তো সেখানে ছিল। যে জন্য এমনটি হয়েছে। আর পৌর এলাকায়ও বেশ কিছু প্রভাবক ছিল। যেমন: কক্সবাজার শহরে সড়কগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। সেখানে অনেক খানা-খন্দ রয়েছে। অনেক স্থানে নালাগুলো বন্ধ হয়ে ছিল। সেখানে অনেক সময় পানি জমে থাকতো। এসব কারণে সম্ভবত বেশি ছড়িয়েছে।’

আরও পড়ুন: ৭৫ ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকায়, মৃত্যু বেশি বাইরে

ভবিষ্যতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মমিনুর বলেন, ‘আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যারা পরিচালনা করেন। সে সব প্রতিষ্ঠান সেখানে কাজ করে তাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। যারা সেখানে বসবাস করে তাদেরও সচেতন হতে হবে। আর কক্সবাজার শহরে যে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো আগামী বছরের মধ্যে যেন দ্রুত শেষ হয় ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

এমএইচ/জেবি 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর