রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

৭৫ ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকায়, মৃত্যু বেশি বাইরে

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

৭৫ ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকায়, মৃত্যু বেশি বাইরে

টানা কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও সারাদেশ আতঙ্ক তৈরি করেছে ডেঙ্গু। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগটি, সেই সঙ্গে ঘটচ্ছে প্রাণহানিও। শুরুতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বছরের মাঝামাঝিতে এসে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে ভাইরাসঘটিত রোগটির। স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টাতেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন ভয়ানক রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু।

মশাবাহিত রোগটি সাধারণত নগরকেন্দ্রিক। যেমন: রাজধানী ঢাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের শতকরা ৭৫ ভাগের বেশি রোগী ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। আর বাকি রোগীরা ঢাকা মহানগরের বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে মৃত্যুর ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। রোগীর সংখ্যা ঢাকা মহানগরের মোট তিন ভাগের একভাগ হলেও মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চল।


বিজ্ঞাপন


Dengueস্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগের তথ্যমতে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১৮ হাজার ৬৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকার ৫০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ১২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চার হাজার ৫১৭ জন। এদিকে, মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৬৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জন ঢাকায় এবং ৩২ জন দেশের অন্যান্য স্থানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

আক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছরে জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২০, এপ্রিলে ২৩ এবং মে মাসে ১৬৩ জন রোগী। প্রথম পাঁচ মাসে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে জুন মাসে হঠাৎ করেই ডেঙ্গু চিত্রে পরিবর্তন আসে। এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭৩৭ জন, আর মারা যায় একজন। জুলাই মাসে ভর্তি হয় এক হাজার ৫৭১ জন, আগস্টে তিন হাজার ৫২১ জন, সেপ্টেম্বরে নয় হাজার ৯১১ জন এবং অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্যন্ত দুই হাজার ৫৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন যথাক্রমে ৯, ১১, ৩৪ এবং ৮ জন। 

রোগী কম থাকলেও মৃত্যু বেশি ঢাকার বাইরে

আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীতে রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মোট ভর্তি রোগীর শতকরা ৭৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুর ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ ঘটেছে রাজধানীতে। যা হাসপাতালে ভর্তি রোগী শতকরা দশমিক ২২ শতাংশ। অপরদিকে এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীদের ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিলেও মোট মৃত্যুর ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ সেখানে ঘটেছে। যা মোট ভর্তি রোগী বিবেচনায় শতকরা দশমিক ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে রোগীর কম সংখ্যা অনেক কম হলেও মৃত্যু হার তিন গুণেরও বেশি।


বিজ্ঞাপন


Dengueআবার ঢাকার বাইরের মৃতদের বেশিরভাগই মারা গেছে চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলায়। বিভাগটিতে মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারেই মারা গেছেন ২০ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরে চারজন এবং জেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে সারাদেশের মধ্যে ঢাকার পর কক্সবাজারেই বেশিসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এলাকাটিকে ডেঙ্গুর অন্যতম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাথমিক অবস্থায় প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও বর্তমানে অন্যান্য এলাকাতেও এর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। 

এদিকে চট্টগ্রাম ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় একজন এবং বরিশাল বিভাগে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ডেঙ্গু যে ঢাকার বাইরে ছড়াচ্ছে না, আমরা তা বলতে পারছি না। কারণ ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত সুবিধার ঘাটতি আছে। অনেকে জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করছে না। ফলে অনেক রোগীর বিষয়ে আমরা জানতেই পারছি না। তবে আমরা এই রোগীদের ভবিষ্যতে পাবো। যখন পুনরায় স্ট্রেইন দ্বারা তারা আক্রান্ত হবে তখন তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তখন এটা শুধু ঢাকার সমস্যা থাকবে না। যেমন এবার কক্সবাজারে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে।’ 

ঢাকার বাইরে অধিক মৃত্যুর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম প্রধান কারণ পর্যাপ্ত অসচেতনতা ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি। এছাড়া সঠিক তথ্যটিও উঠে আসছে না। ফলে আমরা ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতির সঠিক চিত্রটা পাচ্ছি না। অর্থাৎ ডেঙ্গু ঢাকার বাইরেও ছড়াচ্ছে। এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার আওতায় না আসায় এসব রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে।’

Dengueরাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওয়ান আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের আসলে একদম সঠিক পরিসংখ্যানটি দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে রোগীর সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক নয়। যারা মারা যাচ্ছেন, সেই সংখ্যাটি নির্ভর করে কী ধরনের রিপোর্ট হচ্ছে তার ওপর। এটিকে সার্ভিলেন্স বলে। আমাদের এখানে তা পুরোপুরি জানা যায় না। আমরা যে সংখ্যাটি পাই তা সম্ভাব্য সংখ্যা। রোগটিতে যে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটি তার প্রমাণ।’

মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মৃতের সংখ্যাটি হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন শুধু তাদের মধ্য থেকে পাওয়া যাচ্ছে। যারা হাসপাতালে আসেনি তাদের তথ্যটি এখানে সম্পূর্ণভাবে নেই। এছাড়া ঢাকার বাইরের রোগীরা দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। বেশিরভাগ মৃত রোগী একদম ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালে আসছে ফলে তাদের বাঁচানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এই রোগীগুলো মারা যাওয়ার কথা নয়। কারণ ডেঙ্গু চিকিৎসায় শুধু ফ্লুইড লাগে। এছাড়া তেমন কিছু লাগে না। এটি বাংলাদেশে সব সময়, সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। অর্থাৎ মৃত্যুর প্রধান কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করা এবং হাসপাতালে দেরিতে আসা।’

এমএইচ/জেবি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর