আজ ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হচ্ছে শোক দিবস। দিনটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৮৫ সাল থেকে। ওই বছরের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের ছাদ ধসে পড়ে ৪০ জনের অধিক শিক্ষার্থী নিহত হন। সেই শোক বয়ে বেড়ানোর মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে আরেকটি ট্রাজেডির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জরাজীর্ণ অবস্থায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। যেকোনো সময় এই হলে ঘটতে পারে জগন্নাথ হলের মতো করুণ ট্রাজেডি। অনেক বছর ধরেই হলটির এই দুরাবস্থা। তবু কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি আরেকটি অক্টোবর ট্রাজেডির অপেক্ষায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ!
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা স্থানে ফাটল, কোনো কোনো জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ছে। সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, পুরো হলেই এমন চিত্র। ফাটলগুলোতে প্রায়ই সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়। করা হয় চুনকাম। কিন্তু এতে খুব একটা ফল পাওয়া যায় না।
হল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে বুয়েটের একদল গবেষক এই হলকে থাকার অনুপযোগী বলে রিপোর্ট দেয়। ইতোমধ্যে কেটে গেছে ১০ বছর। তবু নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ।
বিজ্ঞাপন
হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র মুইনুদ্দিন গাউস ঢাকা মেইলকে বলেন, হলের প্রায় প্রতিটি রুমের কোনো না কোনো স্থানে ছোট-বড় ফাটল। বিশাল বিশাল জায়গাজুড়ে পলেস্তারা খসে পড়ে আছে। তাছাড়া বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া মূল দালানটির কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছর এই হলে নবীন শিক্ষার্থীকে অ্যালটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। হলের সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকে, না জানি কখন ভেঙে পড়ে। এই ভাঙা জিনিসকে যতই মেরামত করবেন, সেটা ফলপ্রসূ হবে না।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ইমন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিভিন্ন সময় হুট করেই ফাটল ধরা অংশ থেকে প্লাস্টার খুলে পড়ে যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। গেমস রুমে গেমস খেলাকালীন আমার ঠিক কয়েক ফুট পেছনে অনেক বড় একটি প্লাস্টার খুলে পড়ে যায়। একটুর জন্যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাই৷ মুহসীন হলে প্রায়ই এমন প্লাস্টার খুলে পড়তে দেখা যায়। তাছাড়া পেপাররুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল রয়ে গেছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বিষয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নাজমুল আহসান মোবাইলে ঢাকা মেইলকে বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ হলটি একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ক্র্যাক বা ফাটল রয়েছে। এমনকি আমাদের যে মিলনায়তনটি সেটি ২০১৭ সাল থেকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে বসবাসের অযোগ্য বিবেচনা করে। সব মিলিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে হল পরিচালনা করতে।
উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি ব্যবস্থার কথা ভাবছি। সেটি হলো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে শিক্ষার্থীদের অ্যালটমেন্ট না দেওয়া। এভাবে আমরা পাঁচ বছরে পুরো হলটি খালি করতে পারব। সলিমুল্লাহ হলে যেটি চলছে।
প্রাধ্যক্ষ বলেন, এরপর এটিকে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। কারণ বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টার দিলেও রডগুলো একেবারেই ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে সেগুলো টিকে থাকছে না। আবার নির্মাণ করে বসবাস করার উপযোগী না করলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই থাকতে হবে, যেটি কোনোভাবে কাম্য নয়।
আরএ/জেবি