শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করায় ব্যাংকারদের মধ্যে অসন্তোষ

এইচ রহমান
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করায় ব্যাংকারদের মধ্যে অসন্তোষ

নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২৪ সাল থেকেই কার্যকর হবে এই নিয়ম। এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষুব্ধ ব্যাংক কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ বিষয়ে অনেকে লেখালেখি করছেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্টও করেছেন অনেক ব্যাংকার। এমনকি ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার যৌক্তিকতা দেখছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। নিজেদের আয় বাড়াতে আইবিবি এ ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এতে মেধা বাড়াতে গিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। যাদের ডিগ্রি নেই তাদের কাজ বাদ দিয়ে নতুন করে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। ব্যাংকগুলো তো মেধাহীনদের দিয়ে চলছে না। এতদিন যেহেতু সমস্যা হয়নি, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেউ মানতে চাইছেন না। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেকের পদোন্নতি আটকে যাবে। ফলে কর্মকর্তারা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এ কারণে ব্যাংক খাতের কাজের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা কোনো ভালো ফল নিয়ে আসবে না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: জীবনযাত্রার মানে লাগাম, হাত পড়েছে সঞ্চয়পত্রে

গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা পাসকে বাধ্যতামূলক করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকের চাকরিতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অথবা সমতুল্য পদের ওপর যেকোনো পদে পদোন্নতি পেতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস ছাড়া কোনো ব্যাংকার পদোন্নতিরযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকের কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সাল থেকে কার্যকরের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলেন ব্যাংকাররা। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের সময়টা একদম কম। এটা আরও দুই থেকে তিন বছর পর কার্যকর করা উচিত ছিল।
আইবিবির সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আইবিবির বোর্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। সুতরাং কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্যই বাধ্যতামূলক করেছে।’

>> আরও পড়ুন: রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নানা তৎপরতা


বিজ্ঞাপন


গত বছরের ২১ ডিসেম্বর আইবিবির কাউন্সিল সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা সিনিয়র অফিসারের পরের পদে পদোন্নতিতে দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করা হোক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে আইবিবি বলেছে, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় আয় কম হয়েছে। তাই আয় বাড়াতে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়ির অফিসার অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব স্তরের পদের জন্য পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা (জেএআইবিবি ও ডিএআইবিবি) বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইবিবির মহাসচিব লাইলা বিলকিস আরা ঢাকা মেইলকে বলেন, আইবিবির কাউন্সিল সভায় ব্যাংকারদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী তারা কাজ করেছে।

>> আরও পড়ুন: ‘এক মাসের বেতন দিয়ে ১৫ দিন চলতেই কষ্ট হচ্ছে’

তবে আইবিবির এ ধরনের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, এ ধরনের নির্দেশনা এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া। কারণ ব্যাংকে অনেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ব্যাংকে কিছু বাড়তি কাজ করেন। তাদের পক্ষে তো এই কোর্স করা সম্ভব নয়। এছাড়া আইবিবিতে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলোর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। অনেক বিষয় আছে, যেগুলো বাস্তবভাবে প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং ডিপ্লোমার পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি খুবই বাজে অবস্থা। এখানে যার পাস করার কথা তিনি ফেল করেন, যার ফেল করার কথা তিনি পাস করেন। অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করে আসা অনেক ব্যাংকারও ডিপ্লোমা পরীক্ষায় এসে অর্থনীতি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা ব্যাংকাররাও হিসাববিজ্ঞানে অকৃতকার্য হচ্ছেন। এ কারণে পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

পরীক্ষার সিলেবাস ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে লাইলা বিলকিস আরা ঢাকা মেইলকে বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সব পরীক্ষায় অংশ নেন না। একটি-দুটি পরীক্ষা দেন। এজন্য সব বিষয়ে পাসের হার এত কম। তবে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার ৪০ শতাংশের মতো। বাধ্যতামূলক না থাকায় ব্যাংকাররা এ পরীক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না।

>> আরও পড়ুন: নতুন বছরে আশা দেখাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

লাইলা বিলকিস বলেন, আমরা প্রতি বছর সিলেবাস হালনাগাদ করছি। একেক পরীক্ষক একেকভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। এজন্য মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা হেরফের থাকতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করি ভালো ব্যাংকারদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, গত সাত বছর একটি বিষয়ে ১৩ বার পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারছি না। এখানে পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি সবচেয়ে বাজে। প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যাংকার সঠিক মূল্যায়নের অভাবে পাস করতে পারেন না। তাই কারও কারও এক বিষয়ে পাস করতেই সাত থেকে আট বছর লেগে যায়।

অপর একজন ব্যাংকার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে যোগ দিই। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় প্রথম পাঁচজনের মধ্যে ছিলাম। নিজ উদ্যোগে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় অংশ নিই। প্রথম পর্বে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় পর্ব শেষ করতে পারছি না। তাই এখন হালে ছেড়ে দিয়েছি।

এইচআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর