শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নানা তৎপরতা

এইচ রহমান
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নানা তৎপরতা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে গত প্রায় এক বছর ধরে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করেও অনেক ক্ষেত্রে বাজারের লাগাম টেনে ধরে রাখতে পারছে না। এই অবস্থায় জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যে আসছে পবিত্র রমজান মাস। মার্চের শেষ দিকে শুরু হবে রোজা। প্রতি বছর এই রোজাকে ঘিরে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। এবার বাজারের অস্থিরতা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এজন্য সরকার আগেভাগে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। রমজানে যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ সিন্ডিকেটের পণ্যের মজুদ ঠেকাতে কয়েকটি সংস্থাকে মাঠে নামাবে সরকার। অবৈধ মজুদদারদের তালিকা ধরে অভিযান চালাবে বিশেষ টিম।


বিজ্ঞাপন


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর রমজানে অবৈধভাবে পণ্য মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গ্রাহকদের থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এবছর সরকার আগে থেকেই এসবের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি রাখবে, যেন বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে। বাজারের অস্থিরতা দূর করতে প্রায় প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হবে। মানুষের যেন কোনো ভোগান্তি না হয় এবং কেউ যাতে বাড়তি দাম রাখতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

সূত্রটি আরও জানায়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, কৃষি বিপণন অধিদফতর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং টিমসহ আরও কয়েকটি সংস্থা মাঠে থাকবে। সংস্থাগুলো খুচরা বাজার থেকে শুরু করে দেশের পাইকারি মোকামগুলোয় অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটতে না পারে।

RR2


বিজ্ঞাপন


অবশ্য গত বছরও রমজানের আগে সরকারের কয়েকটি সংস্থাকে বাজার তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে খুব একটা সুফল মেলেনি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যথারীতি নানা অজুহাতে ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করেছে।

এবার এমন এক পরিস্থিতিতে বাজার তদারকির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যখন বাজারে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও ডালসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। রমজানে এই পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই এসব পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রোজা সামনে রেখে এলসিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যাতে পণ্যর ঘাটতি না থাকে। অন্যদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বিশেষ নজরদারি রাখবে। অবৈধভাবে পণ্য মজুদ করে কেউ যেন বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে সে লক্ষ্যে মাঠে একাধিক সংস্থা কাজ করবে।’

মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা  থাকে ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে চার লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে তিন লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। মসুর ডালের চাহিদা থাকে পাঁচ টনের মতো। কেবল রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। যার ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।

বছরে ছোলার চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টন। যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। অর্থাৎ বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ দরকার পড়ে। কেবল রোজায় চাহিদা থাকে প্রায় পাঁচ লাখ টন। 

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘রমজানে বাজার নজরদারি ভালো উদ্যোগ। এখানে অবৈধ ব্যবসায়ীদের অর্থাৎ যারা পণ্য মজুদ করে তাদের নামমাত্র জরিমানা না করে কঠোর শাস্তির নিশ্চিত করতে হবে। যেন কেউ মজুদ করতে সাহস না করে। ইতোমধ্যে বাজারে বহু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।’

RR22

এদিকে রোজার মাসকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও আট হাজার টন মসুর ডাল কিনছে সরকার। গেল বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই দুটি ক্রয় প্রস্তাবসহ মোট ১৫টি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।

সভাশেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, মোট ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কেনা হচ্ছে। প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৭৬ টাকা ৮৮ পয়সা, যা আগের কেনাকাটার সময় ছিল ১৭৭ টাকা। মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি তেল সরবরাহ করবে।

সাঈদ মাহবুর জানান, প্রতি কেজি ৯১ টাকা ৬০ পয়সা করে টিসিবির জন্য আট হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব পাস হয়েছে। মোট দাম পড়বে ৭৩ কোটি ২৯ লাখ ৩২০ টাকা। তুরস্কের একটি কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টের কাছ থেকে কেনা হয়েছে এই মসুর ডাল।

রমজান সামনে রেখে টিসিবির সরবরাহ করা পণ্যের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, 'কমানোর সুযোগ নেই। প্রতি মাসেই টিসিবির জন্য পণ্য কিনতে হচ্ছে। রমজান সামনে রেখে একটু বেশি কিনতে হচ্ছে।'

এইচআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর