এক দশকে নওগাঁ শহরে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু রাস্তাঘাট রয়েছে আগের মতোই। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা ও সিএনজিচালিত টমটম। যার ফল হচ্ছে তীব্র যানজট, যা এখন শহরের নিত্যদিনের চিত্র। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিপাকে পড়ছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সকাল থেকে থেকে রাত পর্যন্ত শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাটার মোড়, ব্রিজ মোড়, লিটন ব্রিজের ওপর, তাজের মোড় ও ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।
শহরের রাস্তায় চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা ও সিএনজিচালিত টমটমগুলোর রেজিস্ট্রেশন তো দূরের কথা, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানা, যেখানে-সেখানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠা-নামানোর ফলেই নিত্যদিনের এই যানজট বলে মনে করেন নওগাঁর সচেতন মহল।
শহরের বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বলেন, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত টমটম আর রিকশা সংখ্যা বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনের সংখ্যা। ফলে যানজটের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
নওগাঁ পৌরসভার হিসাব মতে, শহরের আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে ইজিবাইক চলাচলের জন্য লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরো প্রায় পনের হাজার। এছাড়া মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় দশ হাজার। পৌর কর্তৃপক্ষ ও সড়ক বিভাগ বলছে, যানজট নিরসনে চার লেনের রাস্তা নির্মাণসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাটার মোড়, ব্রিজ মোড়, লিটন ব্রিজের ওপর, তাজের মোড় ও ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এছাড়াও কাঁচাবাজার হয়ে গোস্তহাটির মোড়েও যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এতে যেমন মানুষ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, ঠিক তেমনি ব্যাঘাত ঘটছে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে। আর এসবের কারণ হিসেবে দেখা যায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ট্রাফিক আইন না মানা, যেখানে সেখানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠা-নামা।
এছাড়াও এসব সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত দখল করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পরিচালনা করেন। গোস্তহাটির মোড় থেকে মিষ্টিপট্টি, চুরিপট্টি, তুলাপট্টি, কাপড়পট্টি অপরদিকে আটাপট্টি ও ডাবপট্টিতে স্থায়ী দোকানীরা তাদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে মালামাল রাখে। এতে যান চলাচলসহ পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
রানীনগর উপজেলা থেকে শহরে ব্যক্তিগত কাজ এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ, মানুষ অনেক ব্যস্ত। রাস্তায় এত যানজট, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে।
আরেক পথযাত্রী নারগিস বেগম বলেন, সকালে রাস্তায় যানজট বেশি থাকে। বাচ্চাদের নিয়ে সময়মতো স্কুলে যেতে পারি না। শহরের ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে চলে গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, শহরের মেইন রাস্তা ছোট। কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহন ও অব্যবস্থাপনার কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, নওগাঁ শহরের যানজট নিরসনে চার লেনের সড়ক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমবে যাবে। চার লেনের ১৬ কিলোমিটার এই রাস্তা শুরু হবে শহরের ঢাকা মোড় থেকে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি লিটন ব্রিজ হয়ে নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের চৌমাশিয়ায় গিয়ে শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, এই মেগা প্রকল্পে থাকবে চারটি ফুটওভার ব্রিজ, ১০টি মিনি বাসস্টপ, ১৪টি কালভার্ট, ফুটপাত ও উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সড়ক কাঠামো ব্যবস্থা। বর্তমান যে রাস্তা আছে তা প্রশস্ত করে ৮০ ফুট করা হবে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন পেলেই বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
প্রতিনিধি/এইচই