সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

এমবিএ পাস সজীব বানাচ্ছেন জৈব সার

আহমেদ নাসিম আনসারী
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

এমবিএ পাস সজীব বানাচ্ছেন জৈব সার

এমবিএ পাস মনিরুজ্জামান সজীব চাকরির আশায় না ঘুরে নিজ এলাকা প্রত্যন্ত পল্লীতেই গড়ে তুলেছেন একটি জৈব সার কারখানা। যার নাম দিয়েছেন হারুন অর্গানিক এগ্রো ফার্ম। এখান থেকে নিয়মিত জৈব সার উৎপাদন ও সরবরাহ করছেন তিনি। এই সার এখন ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এবং মাগুরা জেলাতেও যাচ্ছে,। রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামে ২০২০ সালে এই উদ্যোগ সজীব। দুই ধরনের জৈব সার তৈরি করছেন তিনি। এর একটি হলো ট্রাইকো কম্পোস্ট, আরেকটি হলো ভার্মি কম্পোস্ট।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন:  ময়মনসিংহে গাছের জন্য হাসপাতাল

মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে এই সার কারখানাতে ১২ জন শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের ভেতর ১০জন পুরুষ ও ২ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন।

কথা বলে আরও জানা যায়, হারুন অর্গানিক এগ্রো ফার্মে প্রতিমাসে ৫০ টন ট্রাইকো কম্পোষ্ট ও ৫ টন ভার্মি বা কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে বর্তমানে ১৫ টন ট্রাইকো কম্পোষ্ট ও ৩ টন কেঁচো কম্পোষ্ট উৎপাদন হচ্ছে। এই সার উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে গোবর। তবে তার নিজস্ব গরুর খামার না থাকায় বা এলাকায় স্থানীয়দের তেমন খামার না থাকায় ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন।
sarসরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জৈব সার উৎপাদনে অন্যান্য যেসব কাঁচামালের যোগান লাগে তার মধ্যে ট্রাইকো কম্পোষ্টে ট্রাইকো ডার্মা পাউডার, গরুর গোবর, প্রেস মাড-আখের গাদ, কলাগাছ, কচুরিপানা, ছাই, খৈল, চিটাগুড়, কাঠের গুড়া, সবজীর উচ্ছিষ্ট, ডিমের খোসা, নিম খৈইল, হাড়ের গুড়া, শিং কুচি, গাছের পাতা পচা, ব্যবহৃত চা পাতা ইত্যাদি অন্যতম। এগুলো একত্রিত করে পর্য়ায়ক্রমে শেডে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার বানানো হয়।

আর ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেঁচো কম্পোষ্টে গরুর গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানা লাগে। কেঁচো এগুলো খেয়ে যে মল ত্যাগ করে তাই উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার। এসব জৈবসারে পিএইচ, জৈব কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার, সালফার, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ম্যাগনেশিয়ামসহ রয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক উপাদান ।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: নিজে শেখার বয়সে অন্যদের নৃত্য শেখাচ্ছে শিশু অস্মিতা (ভিডিও)

শৈলকুপা কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ এই সারের রয়েছে নানা উপকারিতা। ফলন বৃদ্ধি ও গুনগত মান বাড়ায়, সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটির গঠন ও প্রকৃত গুন রক্ষা করে, মাটির উপকারী জীবানুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ায়, মাটিতে রস মজুদ রাখতে সহায়তা করে, ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না। জৈব সার ব্যবহারের ফলে আনুপাতিক হারে রাসায়নিক সারের মাত্রা কমানো যায়, মাটির ভেতরে বাতাস চলাচলে সহায্য করে, ফসলের সকল প্রকার খাদ্য যোগান দেয়। এই সার মাটিতে দেয়ার পর ৬ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত প্রভাব থাকে যা পরবর্তী ফসলের জন্যেও কাজে লাগে।
sarএসবের বিপরীতে রাসায়নিক সারের দাম বেশি, মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং ঝুঁকি বেশি, পরিবেশও ভারসাম্য হারায় বলেও জানান কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা ।

উদ্যোক্তা সজীব জানান, জৈবসার প্রতি শতকে সবজির জন্য ৫ কেজি, পিয়াজ, আলু, ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ৩ থেকে ৪ কেজি, মাছে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৬০ কেজি, ফল গাছে ৫ থেকে ৭ কেজি করে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও সব ফসলে সব সময় এই জৈব সার ব্যবহার করা যায় ।

>> আরও পড়ুন: কুমিল্লার পথে পথে নজরুল-নার্গিস-প্রমীলার উপাখ্যান

স্থানীয় কৃষক এবং শৈলকুপার বক্সীপুর বাজারের সার ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া জানান, তিনি নিয়মিত এখান থেকে সার কিনে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

ঝিনাইদহের পাশের জেলা মাগুরার সার ব্যবসায়ী মো. সোহরাব হোসেন এই এগ্রো ফার্ম থেকে সার কিনে থাকেন। তিনি জানান, কম মূল্যে পরিবেশ বান্ধব এবং নিরাপদ জৈব সার পেয়ে অনেক উপকৃত হচ্ছেন।
sarহারুন এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার রবিন হোসেন জানান, প্রতি কেজি জৈব সারের উৎপাদন খরচ গড়ে ১০ টাকার উপরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর শৈলকুপার কৃষি কর্মকর্তা ডক্টর মাহফুজুর রহমান জৈব সারের উৎপাদন-ব্যবহার ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রসঙ্গে জানান, শৈলকুপার প্রত্যন্ত পল্লীতে যে এগ্রো ফার্ম গড়ে উঠেছে তা আমাদের জন্য সুখবর।  

তিনি বলেন, উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান সজীবকে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর