গাছকে বলা হয় মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলকে শীতল রেখে ইকোলজ্যিকাল ভারসাম্য বজায় রাখে এটি। অনেক সময় দেখা যায়, গাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যায়। কিন্তু রোগাক্রান্ত গাছের চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারে না মানুষ। অথচ গাছেরও চিকিৎসা আছে।
গাছের চিকিৎসায় ব্যাতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন, বৃক্ষবিদ মো. রফিকুল ইসলাম টিটু। বৃক্ষপ্রেমী মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং তাদের সচেতন করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মাঠে শুরু হওয়া ফলদ বৃক্ষ মেলায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তার এভারগ্রীন নার্সারীর স্টলটি। সেখানে লেখা রয়েছে— ‘গাছের হাসপাতাল।’
সরেজমিনে দেখা যায়, নানা জাতের গাছ সাজানো রয়েছে স্টলটিতে। ছোট, বড় ও মাঝারি গাছগুলো কোনোটা টবে, কোনোটা ড্রামে, আবার কোনোটা ঝুলন্ত টবে রাখা হয়েছে। গাছের পাশাপাশি সাজানো রয়েছে ওষুধ। সেখানে রয়েছে, ইউরিয়া, পটাশিয়াম ও পিএসপির মিশ্রণে তৈরি করা গাছের সুষম খাবার এনপিকে। ভিটামিন, কীটনাশক, এপসম সল্ট, জৈবসার, পিপড়ার ওষুধসহ শতাধিক রকমের ওষুধ ও খাবার।
>> আরও পড়ুন: কুমিল্লার পথে পথে নজরুল-নার্গিস-প্রমীলার উপাখ্যান
বিজ্ঞাপন
গত ২০ আগস্ট থেকে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মাঠে শুরু হয়েছে এই ফলদ বৃক্ষ মেলা। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশেনের আয়োজনে ও নার্সারী মালিক সমিতির সহযোগীতায় এই মেলা চলবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বৃক্ষবিদ মো. রফিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘গাছেরও প্রাণ আছে, অনুভূতি আছে। মানুষ অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসার প্রয়োজন তেমন অসুস্থ গাছেরও চিকিৎসা প্রয়োজন। মানুষ প্রতিবছর অনেক গাছ রোপণ করছে, কিন্তু তা ঠিকমতো লালন পালন করা হয় না। পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো অযত্নে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। অথচ কেউ বলতে পারে না গাছগুলো কেনো মারা গেল। গাছ নষ্ট হওয়ার মূল কারণ সঠিক পরিচার্যা এবং চিকিৎসা না পাওয়া। সেটা মানুষের বুঝতে পারে না। তাই মানুষের চিকিৎসার মতো গাছেরও হাসপাতাল দরকার।’
>> আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জের এই আঙিনায় বেড়ে উঠেছিলেন কবিপত্নী প্রমীলা নজরুল
তিনি আরও বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন ছিল না। সাধারণ জ্বরে মানুষ মারা যেত। কালের পরিক্রমায় মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন আধুনিকায়ন হয়েছে। তেমনি উদ্ভব হচ্ছে গাছের চিকিৎসা ব্যবস্থাও। নার্সারিতে অসুস্থ গাছের পরিচর্যায় যে ধরণের সুফল পাই, সেগুলো আশপাশে ছড়িয়ে দেই। এতে সঠিক পরিচর্যা ও ঔষধ ব্যবহারে গাছগুলো বেঁচে যায়।’
মেলায় আসা দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের কৌতুহলী করে তুলেছে এই ‘গাছের হাসপাতাল’ লেখাটি। জানার আগ্রহে ছুটে আসছেন তারা। কেউ ছবি তুলছেন, আবার কোনো কোনো বৃক্ষপ্রেমী জেনে নিচ্ছেন, গাছের রোগ চেনার উপায় এবং ওষুধ ব্যবহারে নিয়ম। বৃক্ষবিদ মো. রফিকুল ইসলাম টিটুর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদও জানাচ্ছেন তারা।
প্রতিনিধি/এএ