ম্রো ভাষায়— ‘সাংচিয়া তেকরা-সাংচিয়া শুনতারা কিম।’ বাংলায় অনুবাদ করলে হয়— ‘গল্প বলা বা গল্প শোনার ঘর’ বা ‘পাঠাগার।’
শুক্রবার (৫ আগস্ট) বেলা ১১টায় জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে রামরি পাড়ায় জুম বাগানে ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াঙ ঙান ম্রো’র উদ্যোগে এমন একটি ঘর উদ্বোধন করা হয়েছে।
>> আরও পড়ুন: বান্দরবানের পথে পথে তৃঞ্চার্তদের জন্য চেহ্ রাইঃ ঘর
বিজ্ঞাপন
ঘরটির মঙ্গল ও উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনার মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন করেন ক্রামা ধর্মের ধর্মীয়গুরু লংঙি ম্রো।
চিম্বুক পাহাড় এলাকায় প্রথম পাঠাগার প্রতিষ্ঠাতা লেখক ও গবেষক ইয়াং ঙান ম্রো জানান, তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল এটি। তিনি যখন খুব ছোট ছিলেন মা-বাবারা অবসর সময়ে বিভিন্ন গল্প বলে শোনাতেন। তখন তারা মুখে মুখে অনেক গল্প বলতেন। সেই গল্পগুলো লিখিত আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছেন তিনি।
ইয়াং ঙান ম্রোর বিশ্বাস, ‘এই পাঠাগার তৈরী করার ফলে তার প্রয়াত মা-বাবার আত্মা শান্তি পাবে, এলাকার মানুষেরও মঙ্গল হবে।’
‘বর্তমানে ছোটপরিসরে শুরু করলেও আগামীতে ঘরটি বড় করার ইচ্ছে আছে’ বলেও জানালেন তিনি। বলেন, রামরি পাড়ার আশে পাশে প্রাইমারি স্কুল ও ছাত্রাবাস আছে। সেখান থেকে ম্রো ছাত্র-ছাত্রীরা বন্ধের সময় এখানে এসে বই পড়বে।
>> আরও পড়ুন: পাহাড়ের আখ ক্ষেতে জনপ্রিয় হচ্ছে সাথীফসল
ম্রো জনগোষ্ঠীর যে সকল ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে। তারা ছুটি পেলে এই পাঠাগারে এসে নিজেদের সুখ দুঃখের আলাপ হবে। সংস্কৃতি, ইতিহাস, এতিহ্য নিয়ে নিজেদের জীবনের গল্প করবে। জ্ঞান বিনিময় হবে। ধীরে ধীরে ম্রো সমাজ জ্ঞান বিজ্ঞানে সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে বলেও আশা করেন তিনি।
>> আরও পড়ুন: রসে ভরা রাঙামাটির ‘হানিকুইন’
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে রোয়াংছড়ি কলেজের প্রভাষক অমর বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে জুমবাগানে গল্প বলা ও গল্প শোনার ঘরটি খুবই ভালো উদ্যোগ। ম্রো সমাজের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, ঐতিহ্য লিখিত রুপ না থাকার কারণে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। যেগুলো হারিয়ে গেছে, তা পুনরুদ্ধার করে আরও যে সমস্ত রুপ কথার গল্প, সংস্কৃতি,ইতিহাস, ঐতিহ্য লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা যায়, সেগুলো ম্রো সমাজের তরুণ প্রজন্ম চর্চার সুযোগ পাবে।’ তিনি বিভিন্ন লেখকের ১৭টি বই উপহার প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রথম আলো বান্দরবান প্রতিনিধি সাংবাদিক বুদ্ধজ্যাতি চাকমা, এসএ টিভি’র বান্দরবান প্রতিনিধি উসিথোয়াই মারমা, রুইপো পাড়া সরকারী প্রাথমি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মেনচং ম্রো, চিম্বুক পাহাড়ের ড্রাগণ মাষ্টার খ্যাত তোয়ো ম্রো,সাংবাদিক মংহাইসিং মারমা প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ম্রো ভাষার লেখক ও গবেষক ইয়াঙ ঙান ম্রো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্য ভাষা ও পালি বিভাগ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স শেষ করে ম্রো ভাষাও জাতিগোষ্ঠি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। এযাবৎ তার ম্রো ভাষার ব্যাকরণসহ ১৯টি ও বাংলায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিনিধি/এএ
ঢাকা মেইলে সারাদেশের বিশেষ প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন।

