নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রেলওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে পাওয়া যাবে। তবে নিয়ম ভেঙে স্টেশন মাস্টার আতাউর অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করে অফলাইনে টিকিট কেটে কালোবাজারে ছেড়ে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে অতিরিক্ত দুটি বগি (এক্সট্রা-৪ ও এক্সট্রা-৫) সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কেবিন ও অন্যটি শোভন শ্রেণির। ওই দুই বগির ৯০টি টিকিট রেলওয়ের অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কাউন্টার থেকেও অফলাইন বিক্রি করা হচ্ছে না। তবে ৪-৫ গুণ দামে কালোবাজারে ওই দুই বগির অফলাইন টিকিট পাওয়া যাচ্ছে অহরহ।
স্টেশন মাস্টারের দাবি, রেলওয়ের ডিজি, ডিডি, জিএম, সিসিএম, এসপি, ডিজিএফআই সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ওই দুই বগির টিকিট বরাদ্দ থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই নির্দিষ্ট লোকজনকে টিকিট দেওয়া হয়। সাধারণ যাত্রীদের জন্য ওই দুই বগির টিকিট উন্মুক্ত নয়।
তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, কর্মকর্তাদের জন্য কোন বগি বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি এবং নির্দিষ্ট কাউকে টিকিট দেওয়ার জন্য কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৮টায় মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের ওই দুই বগি ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সাধারণ যাত্রীর হাতে অফলাইনে কাটা টিকিট রয়েছে। অতিরিক্ত দাম দিয়ে বাইরে থেকে টিকিট কিনেছেন বলে জানান তারা।
ট্রেনের যাত্রী তাকসিম ও ইয়াকুব হাসান বলেন, অনলাইনে টিকিট পাইনি। কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া যায়নি। কিন্তু কালোবাজারে অনেক গুণ বেশি দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাদের অধিক দামে অফলাইন টিকিট কিনতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে থাকার কথা থাকলেও, অনেকেই অফলাইনে টিকিট পাচ্ছেন। স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোহাই দেন। দুটি বগি নতুন সংযোজন করে সেগুলোর টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়নি। অফলাইনে বিক্রি করলেও সাধারণ জনগণকে তা দেওয়া হচ্ছে না। রাতের বেলা কালোবাজারে এসব টিকিট ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, পরে যাত্রীদের কাছে ৪-৫ গুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মিয়া বলেন, টিকিট কালোবাজারি করার কারণে স্টেশন মাস্টারের বিচার হওয়া উচিত। যাত্রীদের ঠকিয়ে তিনি কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করছেন এবং নিজের অপকর্ম ঢাকতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোহাই দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে মোহনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আতাউর রহমান প্রথমে বলেন, আগামী ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনের সকল টিকিট অনলাইনে কাটতে হবে। অফলাইনে কোন টিকিট নেই। কাউন্টার থেকে আমরা কোন টিকিট দিচ্ছি না। পরে ট্রেন ঘুরে ওই দুটি বগিতে সকল যাত্রীর কাছেই অফলাইনের টিকিট পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, রেলের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডিডি), জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), সিসিএম, ডিজিএফআইসহ বড় বড় কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্য ওই দুই বগির টিকিট বরাদ্দ থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে এসব টিকিট বিতরণ করা হয়। ওই টিকিট সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।
বিষয়টি অবহিত হলে রেলের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘মোহনগঞ্জ বা নেত্রকোনায় আমার পরিবার বা কোন আত্মীয়স্বজন থাকে না। বিশেষ লোকজনকে টিকিট দেওয়া বা বগি সংরক্ষিত রাখার কোন নির্দেশনা স্টেশন মাস্টারকে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং স্টেশন মাস্টার আতাউর রহমানকে ঢাকায় ডেকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আতাউর রহমান ২০২২ সালে জেলার ঠাকুরাকোনা স্টেশনের দায়িত্বে থাকাকালে ট্রেনের বগি কেটে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
প্রতিনিধি/একেবি