ধসে পড়েছে আশুগঞ্জে নির্মাণাধীন আধুনিক রাইস স্টিল সাইলেরার দু’টি টাওয়ার (সি এইচ টাওয়ার)।
রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় টাওয়ার দু’টি ধসে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্মাণাধীন টাওয়ারের অনেক কাজ বাকি থাকায় একটি অপরটির ওপর হেলে পড়ায় অপরটি ধসে পড়ে। ধসে পড়া টাওয়ারের স্থলে নতুন টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এদিকে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ চলমান এবং টাওয়ার ধসে পড়ার বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধুনিক এ স্টিল সাইলো বিনে রক্ষিত চাল বিন থেকে মেঘনা নদীতে স্থাপিত জেটিতে নৌযানে পরিবহনের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কনভেয়র ব্রিজ থাকবে। এ কনবেয়র ব্রিজটি ৬টি টাওয়ারের ওপর স্থাপন করা হবে। রোববার সন্ধ্যায় ঝড়ে নির্মাণাধীন এ কনভেয়র ব্রিজের একটি টাওয়ার পাশের অপরটি ওপর হেলে পড়ে। এতে একটি টাওয়ার ধসে সম্পূর্ণভাবে মাটিতে পড়ে। টাওয়ার হেলে পড়ায় পুরাতন সাইলোর দেয়াল ঘেঁষে তৈরি করা প্রকল্পের টিনের গুদামঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তমা কনট্রাকশন’ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম বলেন, টাওয়ারগুলো নির্মাণাধীন এবং অনেক কাজ বাকি। তাই ঝড়ে পড়ে গেছে। পড়ে যাওয়া টাওয়ারের বিভিন্ন মালামাল সরানো হচ্ছে এবং এটি নতুন করে আবার তৈরি করা হবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান। তবে টাওয়ার ধসে পড়ার বিষয়টির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, দেশের খাদ্য মজুদ পর্যাপ্ত ও মজবুত করতে দেশের কয়েকটি স্থানে প্রায় ৩৬‘শ কোটি (৩৫ হাজার ৬৪৯ কোটি ৪ লাখ) টাকা ব্যয়ে ৮টি আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খাদ্য-মন্ত্রণালয়। অর্ন্তভুক্ত এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি (৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা) ব্যয়ে আশুগঞ্জের পুরাতন কংক্রিট সাইলোর পাশে মেঘনা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো।
জানা গেছে, প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তমা কনট্রাকশন’ এর সঙ্গে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল চুক্তি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। একই বছর প্রকল্পের নির্মাণ কাজও শুরু হয় এবং ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের টানাপোড়ন ও সরকারের পট পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ৪ দফা বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ মেয়াদে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৭৮-৮০ ভাগ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার প্রকল্প কাজ পরিদর্শন করেন। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
আধুনিক এ রাইস সাইলোর বৈশিষ্ট্য হলো এটি ৩০টি স্টিল সাইলো বিনে গঠিত এবং প্রতিটি বিনের ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার টন। এতে কীটনাশক ছাড়া স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে চালের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে চালের গুণগত মান বজায় রেখে ৩ বছর চাল সংরক্ষণ সম্ভব হবে। চাল প্যাকেট ও বস্তাবন্দি করতে এতে রয়েছে ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং ও চেইন কনভেয়িং সিস্টেম, যা প্রতি ঘণ্টায় স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ৫০ কেজির ৮০০ এবং ৫ কেজির ৯ হাজার ৬০০ প্যাকেট তৈরি করতে সক্ষম। নদীপথে চাল পরিবহনে ঘণ্টায় ১২০ টন স্পিডে লোডিং কার্যক্রম সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের আওতায় চাল রক্ষণের পাশাপাশি এখন নির্মিত হচ্ছে অফিস স্টাফ ডরমিটরি বিল্ডিং, অফিসার্স ডরমিটরি, ইন্সপেকশন বাংলো, আনসার ব্যারাক, এমটি গানী বেগ গোডাউন, স্ক্রেপ গোডাউন, ওয়ার্কশপ কাম স্টোর, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ট্রাক পার্কিং এরিয়া ও অভ্যন্তরীণ সড়ক ইত্যাদি।
প্রতিনিধি/এসএস