ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ভেঙে যাওয়ার চার মাসেও মেরামত হয়নি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী উত্তরবন্দ এলাকায় নন্নী-বারোমারী দুই লেনের সড়কটি। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এই সড়কে চলাচলকারী প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, স্থলবন্দরে আসা-যাওয়া করা যাত্রী ও আশেপাশের তিনটি ইউনিয়নের কৃষকরা। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গ্রামের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করছে ছোট, মাঝারি ও ভারিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ফলে সেসব গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কগুলোও ভেঙে যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানায়, গেল বছরের ৫ অক্টোবর পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানির তোড়ে নন্নী-বারোমারী দুই লেন সড়ক ভেঙে যায়। দু’টি স্থানে বড় আকারের ভাঙনসহ সড়কের দুই পাশে প্রায় ৪শ মিটার ধসে গেছে। এতে ৩টি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কালভার্ট নির্মাণসহ সড়কগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নন্নী উত্তরবন্দ এলাকায় দুই লেনের সড়কের দু’টি স্থানে ভেঙে গেছে। গভীর খাদ তৈরি হয়েছে। সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। তবে স্থানীয়রা লোকজন পারাপারের জন্য একটি স্থানে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে। সাঁকোটি দিয়ে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে কোনোরকম হেঁটে পার হচ্ছে। সড়কের এই বেহাল অবস্থাতেও নাকুগাঁও স্থলবন্দর, বারোমারী মিশন, স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বারোমারী বাজার, নন্নী উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়, রওশন আরা একাডেমি, সার্ক আইডিয়াল স্কুল, নন্নী পোড়াগাঁও মৈত্রী কলেজ, নন্নী ইউনিয়ন পরিষদ, নন্নী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। এছাড়া নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অনেক গাড়ি এবং ইমিগ্রেশনের অনেক যাত্রী এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। তারা এখন ভিন্ন পথ দিয়ে যাতায়াত করছে।
শহীদ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান ঢাকা মেইলকে বলেন, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ভাঙা দু’টি জায়গায় দু’বার অটোরিকশা পাল্টাতে হয়। বারবার অটোরিকশায় চড়লে ভাড়াও দ্বিগুণ লাগছে। তাছাড়া সময়মতো ভাঙা পাড়ে রিকশা না পাওয়া গেলে হেঁটে যেতে হয়। তখন সময় বেশি লাগে। এতে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারছি না।
নন্নী পোড়াগাঁও মৈত্রী কলেজের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বলেন, আমরা বারোমারী থেকে আসি। অনেক দূরের পথ, আর যেদিন ভাঙা পাড়ে গাড়ি না থাকে সেদিন আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। হেঁটেই কলেজে যেতে হয়। তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
নন্নী উত্তরবন্দ ব্রিজপাড় বায়তুল সালাম মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা আবু সালিম বলেন, এ সড়ক হয়ে আমাদের বন্দর ও পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু গেল বন্যায় সড়কের দু’টি জায়গা ভেঙে গেলেও চার মাসেও ঠিক হয়নি। এখানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল উল্টে অনেকেই আহত হয়েছেন।
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রবিন মিয়া বলেন, এ সড়ক দিয়ে সহজেই বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা যেত। কিন্তু বন্যার কারণে রাস্তাটা ভেঙে গেলে পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করতে পারছে না। তাই দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বেশিরভাগ সময় নন্নী বাজার ও তিনানি বাজারের পাইকাররা খেতে এসে কিনে নেয়। কিন্তু পাইকাররা এখন এদিকে আসতেও পারে না, আমরাও বাজারে নিয়ে যেতে পারি না। তাই উৎপাদিত পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে পারছি না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সওজ শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কটির জন্য ইতোমধ্যেই বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রুত দু’টি কালভার্ট নির্মাণসহ নকশা করে ভাঙা অংশ সংস্কার করা হবে এবং দুই পাশের মাটি ভরাট করা হবে।
প্রতিনিধি/এফএ