শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নড়াইলে কৃষিতে তিন ভাইয়ের সাফল্য, প্রতি মাসে আয় লাখ টাকা

মো. হাবিবুর রহমান, নড়াইল
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভাধীন ঘোষপাড়ার তরুণ উদ্যোক্তা রমজান খান (২২) মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও কৃষিতে চমক দেখিয়েছেন। প্রায় সাত বছর আগে কৃষি খামার গড়ে তোলেন তিনি। প্রথমে শসা চাষাবাদের মধ্যদিয়ে কৃষি কাজে যুক্ত হন তিনি। এ কাজে কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় ইউটিউব দেখে পরবর্তীতে মালচিং পদ্ধতিতে শসার পাশাপাশি আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষাবাদ শুরু করেন রমজান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রমজানকে। এই কৃষি খামারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রমজানের আপন বড় দুই ভাইও। যাদের মধ্যে প্রবাসী এক ভাইও আছেন। এই কৃষি খামার থেকে খরচ বাদেই প্রতি মাসে আয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা।

thumbnail_IMG_20241218_131324


বিজ্ঞাপন


নড়াইলে কৃষি কাজে তিন ভাইয়ের সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। চাকরির পেছনে না ছুটে তিন ভাই তাদের বাড়ির পাশের ক্ষেতে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। ফলে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন তারা। তাদের এই সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন অনেক বেকার যুবক।

thumbnail_IMG_20241218_130320

রমজান বলেন, এ বছর শুরুতে ১৮০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছি। গত ১২ বছরের মধ্যে টমেটোর দাম সর্বোচ্চ পেয়েছি। এছাড়া ‘সাথী ফসল’ হিসেবে টমেটোর সঙ্গে বাঁধাকপির চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। পাশের দু’টি জমিতে বেগুন ও মরিচ আবাদ হয়েছে। তিনটি জমি মিলে বর্তমানে ৫০ শতকে চাষাবাদ করছি। আমাদের তিন ভাইয়ের এই কৃষি খামারে আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভালো ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারা সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

আরও পড়ুন

দিনাজপুরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির: সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত

কৃষি একটি ভালো ব্যবসা উল্লেখ করে সফল কৃষি উদ্যোক্তা রমজান তরুণদের উদ্দেশে বলেন, অনেক শিক্ষিত তরুণ বা বেকার যুবক চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে ধারদেনা ও ঋণের টাকায় বিদেশ যেতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। অথচ তাদের কৃষি জমি থাকতেও সেইদিকে একটুও খেয়াল করেন না।

thumbnail_IMG_20250211_124953

রমজানের বড় ভাই ওয়েস খান (৪২) বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষ করে লাভবান হয়েছি। তবে, আমাদের সমাজের অনেকে চায়ের দোকানে বসে অলস সময় কাটালেও বাস্তবে কিছুই করেন না। অথচ ভালো কিছু করার মধ্যে কত যে আনন্দ, তা আমরা তিন ভাই বাস্তবে উপভোগ করি। টাটকা সবজিগুলো বাজারে নিলে আগেভাগে বিক্রি হয়ে যায়।

thumbnail_IMG_20241218_122823

আরেক ভাই এলাহি খান (৩৫) বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর বিদেশে ছিলাম। এরপর দেশে এসে ছোট ভাই রমজানের সঙ্গে কৃষি কাজে যোগ দিয়েছি। বিদেশে কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে ক্ষেতখামারে কম কষ্টে অনেক ভালো আছি। সব ফসলের ফলনও ভালো পাচ্ছি।

thumbnail_IMG_20250211_124700

একটি বীজ কোম্পানির কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, রমজানদের ক্ষেতে বাহুবলি টমেটো, প্রীতম ও সুপার হট বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। এই জাতগুলো এখানকার মাটি ও আবহাওয়ায় উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

thumbnail_IMG_20241218_132145

পাশের সালামাবাদ ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের জব্বার তালুকদার (২৬) বলেন, রমজানসহ তিন ভাইয়ের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকও এ ধরনের কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। আমিও একজন স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হতে চাই। রমজানদের কৃষি খামার দেখে খুব লেগেছে। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে এখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

thumbnail_IMG_20241218_125449

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার জানান, রমজানদের তিন ভাইয়ের সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখানে নিয়মিত বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে গুরুত্বারোপ করা হয়। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় এইসব ক্ষেত-খামারে সরাসরি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে কৃষি বিভাগ সব সময় সহযোগিতা করে থাকে। কালিয়া তথা নড়াইল জেলা থেকে উৎপাদিত সবজি হোক শতভাগ বিষমুক্ত, কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনায় আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন