রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নবান্ন উৎসবে জামাইদের নিয়ে ‘মাছের মেলা’

জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

অগ্রাহয়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে জয়পুরহাটের কালাইয়ের নতুন ধান ঘরে ওঠার আনন্দে মেয়ে-জামাই, বিয়াই-বিয়ানসহ কাছের আত্মীয়দের নিয়ে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন কৃষকরা।

পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে স্বজনদের নিয়ে পালন করেন কৃষকের কাঙ্খিত নবান্ন উৎসব। জামাইদের উদ্যোগে বসে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা।


বিজ্ঞাপন


এই দিনকে ঘিরে পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে ভোর ৪টা থেকে দিনব্যাপী চলে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনা-বেচার উৎসব। এই দিনটির অপেক্ষার প্রহর গুনেন এ উপজেলার লোকজন।

thumbnail_20241117_072703

ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রাহয়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ জেলায় একমাত্র পাঁচশিরা বাজারেই বসে বৃহৎ মাছের মেলা।

রোববার ভোররাত থেকেই মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের ঢল। মেলায় নদী, দীঘি ও পুকুরের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছে ছিল ভরপুর। মাঠ থেকে নতুন ফসল কৃষকদের ঘরে উঠলেই এই দিনে আয়োজন করেন নবান্ন উৎসবের। অনুষ্ঠানে জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ানসহ কাছের আত্মীয়-স্বজনরা যোগ দেন। এইদিনে প্রতিযোগিতা করে মেলা থেকে জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যান। প্রতিটি দোকানে সাজানো ছিল দেশীয় জাতের রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেটসহ নানা ধরনের মাছ।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

ঘোড়াঘাটে ৫০ বছরের ‘নবান্ন মেলা’ অনুষ্ঠিত

এবার মেলায় সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায় এবং ১৯ কেজি ওজনের একটি সিলভারকাপ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ আগে থেকে মেলার জন্য প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। এ উপলক্ষে দুদিনব্যাপী এলাকায় মাইকে প্রচারও করেন তারা।

thumbnail_20241117_073248

মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা বসে। নতুন ধান কাটার উৎসবে কৃষকদের প্রস্ততকৃত চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে এ নবান্ন উৎসব পালিত হয়। এদিনে মেয়ে-জামাই ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করেন কৃষকরা।  যথারীতি অনুষ্ঠান পালন করতে জামাই-মেয়ে, বিয়াই-বিয়ান ও আত্মীয়-স্বজনরা আসেন বাড়িতে। পাড়া-মহল্লায় জেগে ওঠে উৎসবের আমেজ। পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় ও চিনির ক্ষীর সঙ্গে খই ও মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

এ উপলক্ষে মাছের মেলা বসেছে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা কয়েকদিন আগে থেকে তাদের আড়ত ঘরে এলাকার বিভিন্ন দীঘি, পুকুর, নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাজীবীরা উচ্চ মূল্যে মাছগুলো কিনে নেন। রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেটসহ ৩ কেজি থেকে ৩০ কেজি ওজনের মাছের সমাগম চখে পড়েছে মেলায়। ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিও ছিল চখে পড়ার মতো। ক্রয়-বিক্রয়ও হয়েছে প্রচুর। সাধ্যমত সবাই মাছ ক্রয় করেছেন।

thumbnail_20241117_073119

মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, মেলায় পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, মৃগেল ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি এবং চিতল মাছ ১৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। মাঝারি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার চাপে এবার মাছ বিক্রি হয়েছে বেশি। দাম ছিল স্বাভাবিক। লাভ হয়েছে মোটামুটি।

মেলায় মাছ কিনতে এসেছে বগুড়ার মোকামতলা থেকে আগত পৌরশহরের আঁওড়া মহল্লার জামাই বেলাল হোসেন বলেন, নবান্ন উৎসবে শ্বশুর প্রতিবছরই দাওয়াত করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। প্রথা অনুযায়ী এ মেলা জামাই-মেয়ে উপলক্ষে আয়োজন করা হয়, সে কারণে মাছ একটা কিনতেই হয়। এবার ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তারপরও ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জে নাচে-গানে নবান্ন উৎসব উদযাপন

হাতিয়ার গ্রামের কৃষক রানা মিয়া বলেন, এই দিনের অপেক্ষায় মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনরা চেয়ে থাকে। কষ্ট হলেও তাদের জন্য আয়োজন করতে হয়। মেলাতে এসেছি মাছ কিনতে। ১৩ হাজার টাকায় ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। বাড়ির সবাই খুশি হবে।

ইজারাদার আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতিবছর এই দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এলাকায় মাইকে প্রচার করে। প্রচুর মাছ আমদানি যেমন হয় তেমনি বিক্রিও হয়।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, মেলায় ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছে। বড় বড় মাছ দেখে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় ১ থেকে সোয়া কোটি টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস বিভাগ চাষিদের সব সময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে। আগামীতে এই মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী। 

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর