অন্য উপজেলা থেকে ভ্যান ভাড়া করে শ্বশুর, দেবর, চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আক্তারের বিরুদ্ধে।
তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে এসব অনিয়মের সত্যতাও পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম হলে এ ঘটনা।
জানা যায়, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী ১৫০ জন পাট ও বীজ চাষিকে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও ঠাকুরগাঁও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
১৫০ জনের প্রশিক্ষণ হলেও উপস্থিত ছিলেন ৯২ জন চাষি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন পার্শ্ববতী পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। অথচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ উপজেলার বাসিন্দা হতে হবে।
বিজ্ঞাপন
খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা চাষিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে ভ্যানে চড়ে চলে যায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অন্য উপজেলার চাষিরা। ফাঁকা হয়ে যায় অডিটরিয়াম হল। পরে বিষয়টি অবগত করা হয় উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল পীরগঞ্জের কয়েকজন চাষি। খবর পেয়ে এসে দেখি সবাই অপরিচিত। জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার তাদের ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সবাই কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন হবেন। উনার শ্বশুরও ছিলেন। তারা আমাকে দেখে দ্রুত চলে যায়।
পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল ঢাকা মেইলকে জানান, আমাকে ফোন দিয়ে পাট কর্মকর্তা ২ জন চাষিকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে বলেছিল। ১৫০ জন প্রশিক্ষর্ণাথী হলে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জনের সুযোগ পাওয়ার কথা। শুনেছি আমার ওই দু’জন চাষি ফেরত এসেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি, অনারিয়ামও পায়নি।
বিকেল ৪টার পর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একপাশে বসে আছেন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার। অন্যপাশে ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকার মাস্টাররোল দেখে চাষিদের ৫০০ টাকা সম্মানী দিচ্ছেন। কয়েকজনকে দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সম্মানী দেওয়া।
আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার সাংবাদিকদের জানান, তারা কিভাবে এসেছেন তা জানেন না। এ কথা বলেই তিনি সেখান থেকে উঠে চলে যান।
ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াসিম কুমার মালাকারের কাছে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য উপজেলা থেকে চাষি এনে প্রশিক্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার সঙ্গে বলে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করবেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আফছানা কাওছার জানান, অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অনিয়মের শাস্তি হিসেবে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার দেওয়ার তথ্যমতে, উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে উপজেলার ৩০০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত।
প্রতিনিধি/এসএস