নাম ভুল করে মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে গোলাম রাব্বানীর (২৭) নামে এক মসজিদের ইমামকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানার কয়েক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দিবাগত রাতে উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি শুক্রবার (৩ মে) সকালে জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী শুক্রবার (৩ মে) বিকাল পাঁচ টার দিকে অর্ধশতাধিক লোক ঘাটাইল থানার সামনে এসে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করতে নিলে শুরুতে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেলে পুলিশ আর বাধা দেয়নি।
জানা যায়, বিদ্যুৎ মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আমুয়াবইদ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। গ্রেফতার পরোয়ানা তামিল করতে রাত দেড়টার দিকে যান উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন, রুবেল রানা, রুহুল আমিন ও মিজানুর রহমান। রাজ্জাকের বাবার নাম ভুল করে পুলিশ প্রবেশ করে স্থানীয় মসজিদের ইমাম গোলাম রাব্বানীর ঘরে। রাব্বানীর বাবার নামও আব্দুর রাজ্জাক।
গোলাম রাব্বানী বলেন, রাত দেড়টার দিকে কারা যেন তার বসতঘরের দরজায় খটখট শব্দ করে। দরজা না খুললে দরজা ভেঙে কয়েকজন লোক তার বোনের কক্ষে প্রবেশ করে। ডাকাত ভেবে পাশের কক্ষে আমি খাটের নিচে পলায়ন করি। পরে লোকগুলো পরিচয় দেয় আমরা পুলিশ। থানা থেকে এসেছি।
এরপর খাটের নিচ থেকে আমাকে টেনে বের করে তারা। হাতে ধরে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসে একজন। পেছন থেকে অপরজন আমাকে লাথি মারেন। আমাকে কেন এভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন?
বিজ্ঞাপন
এ প্রশ্নের জবাবে তাদের মধ্যে একজন বলেন, তোর নামে মামলা আছে। তোর কারেন্ট বিল বাকি আছে। আমি বলি, ভাই আমারে মাইরেন না, আমি মসজিদের ইমাম, আমার কোনো কারেন্ট বিল বাকি নাই- এ কথা বলার পর পাশে থাকা তাদের একজন বলেন, তোরে ইমামতি শিখাইছে ক্যারা?
রাব্বানী বলেন, পরে আমি মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা বলে আগে থানায় চল, তারপর কাগজপত্র দেখামু। এভাবেই সময় পার হয় প্রায় বিশ মিনিট। হইচই শুনে আশপাশের লোকজন এসে জমায়েত হন। তারা মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে পুলিশ তাদের কাগজপত্র দেখায়।
রাব্বারী বলেন, দেখা যায় মামলায় আসামির নাম আব্দুর রাজ্জাক তার বাবার নাম। আমার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক মৃধা ঠিক আছে, কিন্তু আমার দাদার নাম লাল মাহমুদা মৃধা। আমার বাবার ভোটার আইডি কার্ড দেখালে এবং অনেক লোকজন চলে আসায় আমাকে রেখে ধীরে ধীরে পুলিশ চলে আসে। আমার নামে কোনো মামলা নেই, আমি একজন ইমাম পরিচয় দেওয়ার পরও আমাকে মারধর করার বিচার চাই।
রাব্বানীর ঘর সংলগ্ন আলতাফ হোসেন বলেন, রাতে কোলাহল শুনে সেখানে গিয়ে দেখি একজন লোক রাব্বানীকে ধরে আছেন। আর বলতেছেন তোর নামে বিদ্যুতের মামলা আছে। পরে ভোটার আইডি কার্ড দেখালে গোলাম রাব্বানীকে ছেড়ে দিয়ে লোকগুলো আস্তে আস্তে সরতে থাকে। পরে জানতে পারি ওই লোকগুলো পুলিশ ছিল।
এ বিষয়ে সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করলে রিসিভ করেন এবং সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে মিটিংয়ে আছি বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গ্রাম পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে থানা থেকে পুলিশ যান। ইমামকে মারধর করার বিষয়টি সত্য নয়। তবে উভয়ের মধ্যে কথাকাটি হতে পারে। এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ হয়নি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) মোহাম্মদ মোনাদির চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে থানায় বসে আমি কথা বলেছি। মূলত বাবার নামের সঙ্গে মিল না থাকায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে ইমামকে মারধরের বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি জানান। ওয়ারেন্ট তামলি করার ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস