শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের পরে হত্যা মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা 
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কুমিল্লায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের পরে হত্যা মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমাকে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন


মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান এর নাতি মো. জাকারিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী বাপ্পী ।

মামলার বিবরণে জানাযায়—২০১৯ সালের ১৫ মার্চ বিকেলে ৩ টার পর গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাওহীদা ইসলাম ইলমাকে (৯) খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে মাইকিং করে পরিবারের লোকজন। এদিনে তার কোনো খোঁজ মেলেনি। পরদিন  আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পি (২১) নিজেই অটোরিকশা ও মাইক ভাড়া করে এলাকায় মাইকিং শুরু করে। এতে বাদীর সন্দেহ সৃষ্টি হয় এবং আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে কোনো তথ্য না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন স্থানীয় লোকজন। 

আরও পড়ুন

কুমিল্লায় প্রেমের ঘটনায় তরুণকে হত্যায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড

এর কিছুক্ষণ পর ১৬ মার্চ সকালে ডাকাতিয়া নদীতে ভিকটিম তাওহীদা ইসলাম ইলমা’র মৃতদেহ কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় মাসুকা বেগম নামের এক মহিলা দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় স্থানীয়রা এসে লাশ উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশকে খবর দেন। 


বিজ্ঞাপন


পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে পুনরায় আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বাপ্পি। এ সময় সে জানায়, যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য তেঁতুল খাওয়ানো কথা বলে তাঁর ঘরে নিয়ে মুখে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। 

এ ব্যাপারে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ ভিকটিমের বাবা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গজারিয়া গ্রামের আব্দুল করিম এর ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে একই গ্রামের মো. জাকারিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/০৩) এর ৯ (২) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় মামলা করেন। 

এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই ইকবার মনিরের ওপর। তিনি ২০১৯ সালের ২ জুন বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এখানে তিনি বাপ্পীসহ একই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো. মিজানকে (২২) ঘটনার সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করেন। 

আরও পড়ুন

শিশু ধর্ষণের পর হত্যা, যুবকের মৃত্যুদণ্ড

 

মামলাটির বিচার কার্য শুরু হলে ২০২০ সালের ৮ মার্চ আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষ  ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে  আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অপর আসামি মো. মিজান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। 

রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসির রুজু দ্বারা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যু কার্যকর করার নির্দেশ দেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি রায় প্রচারের তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারিবেন।

রায় ঘোষণাকালে আসামিদ্বয় আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। 

আরও পড়ুন

মানিকগঞ্জে প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

দুই ছেলেসহ খালাকে হত্যার দায়ে ভাগিনার মৃত্যুদণ্ড

 

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত ও এপিপি এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।

আসামি পক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এডভোকেট মো. আতিকুল ইসলাম (আতিক) বলেন, এ রায়ে আসামিপক্ষ অসন্তুষ্ট ও ক্ষুদ্ধ। রায়ের কপি হাতে পেলে শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপীল করবো। আমি আশাবাদী উচ্চ আদালত আসামি মোহাম্মদ আলী বাপ্পীকে খালাস প্রদান করিবেন।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর