শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইফতারে ‘পাতলা খিচুড়ি’ ছাড়া তাদের চলেই না

পুলক পুরকায়স্থ
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০১:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ইফতারে ‘পাতলা খিচুড়ি’ ছাড়া তাদের চলেই না
হোটেলেও বিক্রি হচ্ছে পাতলা খিচুড়ি | শহরের কোর্টরোড থেকে তোলা | ছবি: পুলক পুরকায়স্থ

ইফতারে যতই মুখরোচক আইটেম থাকুক না কেন খিচুড়ি ছাড়া যেনো চলেই না মৌলভীবাজারবাসীর। এ কারণে প্রত্যেক ঘরে ঘরে ও বাণিজ্যিকভাবে হোটেল রেস্তোরাঁয় তৈরি হয় পাতলা খিচুড়ি। এটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত। ইফতারে মেহমান আপ্যায়নেও প্রাধান্য পায় এই খিচুড়ি।

পাতলা খিচুড়ি হলো চালের সাথে সমপরিমাণ ডালের মিশ্রণে তৈরি একটি মজাদার খাবার। এই খিচুড়ি এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি খাবার। এমনকি যেকোনো ধরনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও এর কদর রয়েছে। এই খিচুড়ি তৈরিতে মুগডাল, খেসারীডাল, মুসুরীডাল ও সুগন্ধি চালসহ নানাবিধ উপকরণ ব্যবহার করা হয়। নরম ও তরল জাতীয় এই খাবারের রান্না করার প্রণালীতে একেক জায়গাভেদে একটু আধটু ভিন্নতা পাওয়া যায়। তবে সাধারণ যে নিয়ম তা সব জায়গায় একই রকম।


বিজ্ঞাপন


মৌলভীবাজার শহরের হোটেল ব্যবসায়ী ও প্রবীণ নাগরিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিলেট অঞ্চলের সর্বত্র পাতলা খিচুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসের ইফতারিতে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের ঘরে ঘরে এই খিচুড়ির দেখা মেলে। বাসাবাড়িতে যেমন তৈরি হয় তেমনি বিভিন্ন হোটেল থেকেও অনেকে কিনে নিয়ে যান।
patla khichuriজানা গেছে, পাতলা খিচুড়ি খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। বানিজ্যিকভাবে শহরের বেশ কয়েকটি হোটেল রেস্তোরাঁয় স্বাদের ভিন্নতা আনতে এতে সুগন্ধি চাল ও তিন চার ধরনের ডাল ব্যবহার করেন। শহরের বড় বড় হোটেলগুলোতে দেখা যায়, বিশাল আকারের লালশালু মোড়া ডেকচিতে করে হোটেলের সামনে রমজান মাসে সাজিয়ে রেখেছেন এই খিচুড়ি। প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে প্রতিটি হোটেলে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পাতলা খিচুড়ি বিক্রি করতে পারেন বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

তাবাসসুম রিনি নামের এক গৃহীনি বলেন, ‘খিচুড়ির স্বাদ নির্ভর করে এর পারফেক্ট রান্নার উপর। এটি সঠিকভাবে রান্না হলে এর সুঘ্রাণে চারিদিকে ভেসে বেড়ায়। এটি স্পেশাল হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এতে ব্যবহৃত সুগন্ধি চাল। এর সঙ্গে নানান ধরনের ডাল এর আকর্ষণ যেনো আরও বাড়িয়ে দেয়। মোট কথা খিচুড়ি প্রেমীদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় রেসিপি।’

আরও পড়ুন: বাগেরহাটের ঐতিহ্য সেমাই পিঠার সঙ্গে হাঁসের মাংস

প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে পাতলা খিচুড়ি ইফতারিতে থাকবেই। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মুলত সারাদিন রোজা রেখে নরম কিছু খেলে শরীরের জন্য ভালো, শরীরে শান্তি আসে, চলাচলে সুবিধা। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ পাতলা খিচুড়ি ইফতারিতে বাধ্যতামুলক রাখেন।’


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘তেলের পরিমাণ কম থাকা, নরম ও চাল ডালের মিশ্র‌ণে তৈরি খিচুড়ি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। রমজানে আমার বাসার ইফতারের টেবিলে প্রতিদিনই এই খিচুড়ি থাকে।’
patla khichuriশহরের একটি হোটেলের কর্মচারী কয়েছ মিয়া বলেন, ‘খিচুড়ি চুলা থেকে নামানোর এক ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি খিচুড়ি আমরা বিক্রি করতে পারি। আমাদের হোটেলে পাতলা খিচুড়ি বেশি চলে। তাই এগুলো বেশি করে তৈরি করা হয়।’

হোটেল ম্যানেজার সাঈদ মোহাম্মদ বলেন, ‘মানুষ বাসাবাড়িতে নানা ধরনের ইফতারি তৈরি করে, পাতলা খিচুড়ি অনেকে তৈরি করে, কিন্তু আমাদের এখানে স্বাদ বেশি হয় বলে মানুষজন কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন খিচুড়ি সবার আগে শেষ হয়ে যায়।’

শহরের হোটেল মালিক মশিউর রহমান বলেন, আমরা ইফতারির জন্য ২০ থেকে ২৫ ধরনের আইটেম করে থাকি। এর মধ্যে অন্যতম হলো পাতলা খিচুড়ি। এক এক এলাকার এক একটা ঐতিহ্য, প্রথা বা অভ্যাস থাকে, এই অঞ্চলে ইফতারির জন্য পাতলা খিচুড়ি খুবই জনপ্রিয়। তাই এই আইটেম আমরা বেশি তৈরি করি এবং বিক্রিও ভালো হয়।

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর