সালমান ইসলাম, স্পোর্টস ডেস্ক
২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৮ এএম
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলায়। যে কোনো সময় ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ছড়িয়েছে নানা রং। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে যেমন ছিল বেদনার নীল রঙ, তেমন ছিল সাফল্যের ছড়াছড়ি। পুরো আসর জুড়ে ক্রিকেটাররা যেভাবে উঠেছেন সফলতার চূড়ায়, সময় পাল্টে তারাই জড়িয়েছেন নানা আলোচনা-সমালোচনায়। এমন উত্থান-পতন দিয়েই শেষ হয়েছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর।
চার-ছক্কা ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপ শুরু হয় ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়। অপরদিরকে ১৫ বছর পর প্রথমবার বিশ্বকাপের আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়া। ১৬ অক্টোবর থেকে শ্রীলঙ্কা-নামিবিয়ার উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া এবারের বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বে নামিবিয়ার নাটকীয় জয়ের পরদিন আরেক সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে চমক দেয় স্কটল্যান্ড।
আরও পড়ুন- এমবাপে নয় গোল্ডেন বুটের ‘মালিক’ হতো মেসি, বেরিয়ে এলো আসল রহস্য
প্রথম পর্ব শেষে সুপার টুয়েলভ রাউন্ড শুরু হয় ২২ অক্টোবর থেকে। আটাশ দিন ধরে একটা ট্রফির জন্য লড়ে বাংলাদেশসহ ১৬ দল, ৪৫টি ম্যাচ আয়োজন হয় অস্ট্রেলিয়ার ৭টি ভিন্ন শহরে।
সুপার টুয়েলভে তো অবশ্যই, এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় অঘটন বলা যায় নেদারল্যান্ডস-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচকে। ডু অর ডাই ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় প্রথম পর্ব পার করে আসা কমলা শিবির।
যার ফলে ডাচদের বীরত্বে গ্রুপ-২ এর সমীকরণই বদলে যায়। নেদারল্যান্ডসও বিদায় নেয় নিজেদের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে।
অপরদিকে ডাচদের মতোই অঘটনের জন্ম দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির আরেক সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ড। প্রতিবেশী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জমিয়ে তোলে গ্রুপ-১ এর সমীকরণ। অবশ্য বিশ্বকাপ মঞ্চে আইরিশদের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম নয় ইংলিশদের। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপেও এমন অঘটনের নজির রয়েছে।
আরও পড়ুন- স্বপ্ন জয়ের স্মৃতিকে গায়ে জড়ালেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক
অন্যদিকে সুপার টুয়েলভের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ ছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইটা ছিল নামের মতোই ভারী। বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ইনিংসে ভর করে পাক বধ কেবল এবারের আসরেই নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
এছাড়া এই আসরের চমক দেওয়া ভারতের কাছে শেষ বলের হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই আরেক ধাক্কা খায় বাবর আজমদের। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হারের স্বাদ নিতে হয় জিম্বাবুয়ের কাছে। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই সিকান্দার রাজাদের এমন অর্জন প্রশংসা কুড়ায় ক্রিকেট বিশ্বে।
এদিকে অঘটনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সুপার টুয়েলভের উদ্বোধনী ম্যাচটি। ঘরের মাঠে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এমন অসহায়ত্বকে অঘটন না বলে কি আর উপায় আছে? একচেটিয়া সেই ম্যাচটিই কপাল পোড়ায় অস্ট্রেলিয়ার।
নেট রান রেটের হিসেবে যে ধাক্কাটা খায় অ্যারন ফিঞ্চদের দল, তা আর কাটিয়ে উঠা হয়নি গোটা আসরে। সমান পয়েন্ট থেকেও নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে বিদায় নিতে হয় আসর থেকে।
তবে নাটকীয় বিশ্বকাপে এক পর্যায়ে পাকিস্তানের ভাগ্য ছিল ডাচ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের উপর। নেদারল্যান্ডস দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দলের সম্ভবনা জাগে সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু টাইগাররা সেই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলেও বাবর আজমরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেমিতে চলে যায়।
আরও পড়ুন- ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবে না পাকিস্তান!
অপরদিকে তিরিশ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি পাকিস্তান-ইংল্যান্ড। সেই একই দেশ অস্ট্রেলিয়ায়, সেই একই ভেন্যু মেলবোর্নে— ফিরে এসেছে ৯২-এর বিশ্বকাপ! যারা ওই বিশ্বকাপটি দেখেছেন, তাদের কাছে রোমাঞ্চকর ছিল এইবারের বিশ্বকাপটি।
তবে বাবর আজমরা ৯২'এর পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি ২০২২ সালে এসে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ বোলারদের তোপে ১৩৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন হেলস।
এরপর রানের চাকা সচল রাখতে জস বাটলার হাল ধরলেও পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দ্রুত দুই উইকেট হারালে চাপে পরে ইংলিশরা। কিন্তু এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বেন স্টোকস আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলে ইংলিশদের ১২ বছর পর টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় শিরোপা নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এসটি