১১ মে ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আশির দশকের শুরুটা ছিল পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য এক সন্ধিক্ষণ। দলে ছিল প্রতিভার ঝলক, কিন্তু অভাব ছিল নেতৃত্বের। ফলাফল পারফরম্যান্স, শৃঙ্খলার ঘাটতি আর সাফল্যের জন্য হাহাকার। ঠিক এমন এক সময়েই পাকিস্তান ক্রিকেটে উদিত হলেন এক নক্ষত্র। আর কেউ নন ইমরান খান। লাহোরে জন্ম, ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা এই মানুষটি শুধু একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডারই ছিলেন না, ছিলেন এক দৃষ্টিভঙ্গির স্থপতি, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেটকে চিনিয়েছিলেন নতুনভাবে, নতুন পরিচয়ে।
ইমরানের ব্যক্তিত্ব ছিল বিদ্যুৎচমকানো। মাঠের বাইরে তিনি ছিলেন রূপ ও রুচির প্রতীক। আর মাঠের ভেতরে এক অকুতোভয় নেতা। ১৯৮২ সালে জাতীয় দলের নেতৃত্ব পেয়ে তিনি যে বিপ্লব শুরু করেছিলেন, তার পরিণতি দেখা যায় এক দশক পর ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ে।
আরও পড়ুন-‘পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেবে ভারত’
আরও পড়ুন-‘পাকিস্তান যুদ্ধ বেছে নিয়েছে’
তবে বিশ্বকাপটা ছিল কেবল এক সাফল্যের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। তার অনেক আগেই ইমরান খান বদলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট সংস্কৃতি। তিনি বুঝেছিলেন, প্রতিভা যথেষ্ট নয়, দরকার পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস। সেই চিন্তাকে ভিত্তি করেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক নতুন প্রজন্ম ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম উল হক, আকিব জাভেদদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের।

তাদের কেবল দলে অন্তর্ভুক্তই করেননি, নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন কখনো মেন্টর হয়ে, কখনো বড় ভাইয়ের মতো। ইমরানের অনুপ্রেরণাই গড়ে তোলে এক মানসিক দেয়াল। ভিনদেশের মাঠে আর ভেঙে পড়ত না পাকিস্তানি দল, বরং দাঁতে দাঁত চেপে লড়ত শেষ বল পর্যন্ত। ক্রিকইনফোর এক সাক্ষাৎকারে উঠে আসে, তিনি ক্রিকেটারদের বলতেন ‘মাঠে নামলে মনে রেখো, তোমরা শুধু ক্রিকেটার নও, তোমরা পাকিস্তান।’
আরও পড়ুন-ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, পিএসএল হবে বাংলাদেশে!
আরও পড়ুন-‘কুত্তে কি দম তেদি কি তেদি রেহতি হ্যায়’—পাকিস্তানকে নিয়ে শেবাগ
১৯৯২ বিশ্বকাপ সেই বিশ্বাসেরই প্রতীক। কাঁধের চোট নিয়েও ফাইনালে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এবং শেষ পর্যন্ত, ‘কর্পোরেট জগৎ থেকে আসা সিংহদের’ মতো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েন। বিশ্বজয়ের পর ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন ইমরান খান।
এরপর হয়ে যান রাজনীতিবিদ। এমনকি একটা সময় বসেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের আসনেও। পাকিস্তানের হয়ে ৮৮ টেস্টে ইমরানের রান সংখ্যা ৩৮০৭ এবং উইকেট ৩৬২। এ ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৭৫ ম্যাচে ৩৭০৯ রানের পাশাপাশি উইকেট শিকার করেছিলেন ১৮২।

কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও কাঠামোই পরবর্তী প্রজন্মের রসদ হয়ে ওঠে। তার ছাত্ররা পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি, আর তাদের চোখে ইমরান আজও ‘ক্যাপ্টেন’ শুধু নামে নয়, অন্তরে।
ইমরান খান ছিলেন না কেবল একজন ক্রিকেটার। তিনি ছিলেন এক দিকনির্দেশক, একজন সংস্কারক, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা যিনি বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তান শুধু খেলতে পারে না, জিততেও পারে। তিনি সেই আত্মবিশ্বাসই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরো জাতিতে।