images

ইসলাম

হজ ও ওমরা পালনকারীরা যেসব প্রতিদান পাবেন

ধর্ম ডেস্ক

১৬ মে ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম

হজ ইসলামি শরিয়তের অন্যতম স্তম্ভ। আর্থিক ও দৈহিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭) 

ইসলামে হজ খুবই মর্যাদাপূর্ণ এক আমল। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে- قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِه قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো সর্বোত্তম আমল কোনটি? জবাবে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন-‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। এরপর জিজ্ঞাসা করা হলো- তারপর কোন আমল? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ আবার জিজ্ঞাসা করা হলো- এরপর কোন আমল? জবাবে তিনি বললেন, ‘মাবরূর হজ’ (কবুল হজ)।’ (বুখারি: ১৫১৯)

হজ ও ওমরা আদায়কারীদের বিভিন্ন প্রতিদানের কথা এসেছে হাদিসে। সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—

নিষ্পাপ হওয়ার মাধ্যম
রাসুল (স.) বলেন- مَنْ حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ করল এবং এসময় অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল, সে যেন নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল।’ (বুখারি: ১৫২১)

আমর ইবনুল আস (রা.)-কে নবীজি (স.) বলেছেন- أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ‘তুমি কি জানো না ইসলাম গ্রহণ করলে আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়? তদ্রূপ হিজরতকারীর আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং হজ পালনকারীও আগের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।’ (মুসলিম: ১২১)

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‘তোমরা হজ ও ওমরা পালন কর। কেননা হজ ও ওমরা উভয়টি দারিদ্রতা ও পাপরাশিকে দূর করে দেয়; যেমনিভাবে রেত সোনা, রুপা ও লোহার মরিচা দূর করে দেয়। আর মাবরূর হজের বদলা হল জান্নাত।’ (তিরমিজি: ৮০৮, ইফা)

আরও পড়ুন: হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ

হজের বিনিময় জান্নাত
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ ‘এক ওমরা আরেক ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫) 

হজে খরচ করার ফজিলত
হজরত বুরাইদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- النَّفَقَةُ فِي الْحَجِّ كَالنَّفَقَةِ فِي سَبِيلِ اللهِ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ ‘হজে খরচ করা আল্লাহর পথে (জিহাদে) খরচ করার সমতূল্য সওয়াব। হজে খরচকৃত সম্পদকে সাতশত গুণ বাড়িয়ে এর প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৪৯১)

হাজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান
ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَفْدُ اللهِ دَعَاهُمْ فَأَجَابُوهُ وَسَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ ‘আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং ওমরা ও হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে যা চাইছে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দিচ্ছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩)

নাসয়ির এক বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর মেহমান হলো তিনটি দল—আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজকারী ও ওমরাহকারী।’ (নাসায়ি: ২৬২৫)

আরও পড়ুন: হাজিরা যেসব ভুল করেন শুদ্ধ ভেবে

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ ‘ওমরা ও হজ পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা দোয়া করলে তা কবুল হয়ে যায় এবং গুনাহ মাফ চাইলে তা মাফ করে দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)

নারী ও দুর্বলের হজ
তাবারানির এক বর্ণনায় হাসান ইবনু আলি (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবী (স.)-এর কাছে এসে আরজ করল-إني جبان، وإني ضعيف، فقال : هلم إلى جهاد لا شوكة فيه ‘আমি একজন ভীতু ও দুর্বল ব্যক্তি। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি এমন একটি জিহাদে চলো; যা কণ্টকাকীর্ণ নয় (অর্থাৎ হজ পালন করতে চলো।) আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- جِهَادُ الْكَبِيرِ وَالصَّغِيرِ وَالضَّعِيفِ وَالْمَرْأَةِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ ‘বয়স্ক, শিশু, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো ওমরা এবং হজ পালন করা।’ (নাসয়ি: ২৬২৬)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) আনহু বর্ণনা করেছেন- يَا رَسُوْلَ اللهِ، تري الجهادَ أَفْضَلُ الْعَمَلِ، أَفَلاَ نُجَاهِدُ، لَكُنَّ أَفْضَلُ الْجِهَادِ : حَجِّ مَبْرُوْرِ ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করেন। আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করতে পারব না? উত্তরে নবীজি (স.) বললেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো মাবরূর হজ (কবুল হজ)। (সহিহ বুখারি: ২৭৮৪)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لاَ قِتَالَ فِيهِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ ‘হ্যাঁ’, নারীদের উপর জিহাদ ফরজ। তবে এ জিহাদে কোনো মারামারি ও সংঘাত নেই। আর সেটা হলো- হজ ও ওমরা পালন করা।’ (সুনান ইবনে মাজাহ: ২৯০১)

হজযাত্রায় মৃত্যু হলে কেয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- من خرج حاجا فمات كتب له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرا فمات كتب له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيا فمات كتب له أجر الغازي إلى يوم القيامة ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কেয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হল, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব, লেখা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হল এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মুজাহিদের সওয়াব লেখা হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৬৩৫৭; তবারানি আউসাত: ৫৪৮০; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৫২৭৪)

এছাড়াও হজ-ওমরার সময় বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন ফজিলতের কথা এসেছে হাদিসে। 

উল্লেখ্য, পাঁচটি শর্তসাপেক্ষে হজ ফরজ হয়। ১) মুসলিম হওয়া ২) আকল থাকা বা বিবেকবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া ৩) বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া অর্থাৎ কারো গোলাম না হওয়া এবং ৫) দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটি হলো- সঙ্গে ‘মাহরাম’ (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত জায়েজ) থাকা।

আরও পড়ুন: হজ ফরজ হওয়ার শর্ত, গুরুত্ব ও ফজিলত

স্মরণ রাখতে হবে, হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫২; আহসানুল ফতোয়া: ৪/৫১৬)

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম: ২/১৫৩)

মুসলিম সমাজে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটি হলো- আগে মাতা-পিতার হজ করাবে, পরে নিজের কথা চিন্তা করবে; এটি সঠিক চিন্তা নয়, বরং সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া: ৮/২৮২)

আবার অনেকে মনে করেন, সন্তানের বিয়ে দেওয়ার পর হজ আদায় করতে হয়। এ কথাও ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়ে জরুরি ঠিক আছে, তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া: ৮/২৭৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ ও ওমরা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলতগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত, হজ্জের সামাজিক গুরুত্ব, ওমরা হজের ফজিলত, হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, হজ্জের ইতিহাস, হজ্জ না করার শাস্তি, হজ্জের ফরজ কয়টি, হজের গুরুত্ব, হজের শর্ত ও ওয়াজিব সমূহ, কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়, হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি, হজের ফরজ কয়টি, হজের ফরজ কোনটি, হজ্জ কাদের উপর ফরজ নয়, হজের ফরজ কয়টি ও কি কি, হজ্জের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি