ধর্ম ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম
সমাজে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, স্ত্রীকে স্বামীর বাম পাশে ঘুমানো ‘বাধ্যতামূলক’ বা ‘সুন্নত’। অনেক দম্পতি এ নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন, অনেকে সম্পর্কে অহেতুক জটিলতাও তৈরি হয়। আসল সত্য হলো, ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর ঘুমানোর নির্দিষ্ট পাশ (ডান-বাম) নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা বা সুন্নত বিধান নেই। এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা, যা শরিয়তের কোনো দলিল দ্বারা সমর্থিত নয়।
এই ধারণার পেছনে কোরআন-হাদিসের ভিত্তি নেই। এটি সম্ভবত কিছু সংস্কৃতি, লোককথা বা ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের মূলনীতি হলো- যা সহজ, যা স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং পারস্পরিক সম্মানজনক, তা-ই গ্রহণযোগ্য। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক সমঝোতা এবং ঘুমের সুবিধানুযায়ী যেকোনো পাশে ঘুমানো যেতে পারে।
প্রচলিত এই ‘বাম পাশ’ নিয়ে বাড়াবাড়ির পরিবর্তে, আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত নবীজি (স.) যেভাবে ঘুমানোর আদর্শ শিখিয়ে গেছেন। সেগুলো হলো-
১. ডান কাত হয়ে ঘুমানো: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে, নামাজের অজুর মতো অজু করবে, তারপর ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭১০)
বিঃ দ্রঃ এটি প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই ডান কাত হয়ে ঘুমানো মোস্তাহাব।
আরও পড়ুন: ঘুমানোর আগের ও পরের দোয়া
২. উপুড় হয়ে ঘুমানো নিষিদ্ধ: রাসুল (স.) বলেছেন- إِنَّهَا ضَجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ ‘এটি এমন একটি শয়ন পদ্ধতি, যা আল্লাহ্ তাআলা অপছন্দ করেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ৫০০১)
৩. কিবলার দিকে পা না করা: ইসলামি বিদ্বানদের মতে, ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলার দিকে পা প্রসারিত করা মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩১৯)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঘুমানোর পদ্ধতি নিয়ে যতটা না ফিকহি আলোচনা, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- পরস্পর সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া, একে অপরের আরাম ও ঘুমের ব্যাঘাত না করা এবং ঘুমানোর আগে পারস্পরিক হাসি-খুশি ও ভালোবাসার পরিবেশ বজায় রাখা।
নবীজি (স.) তাঁর স্ত্রীদের মধ্যেও এই স্বাচ্ছন্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চিত্র পাওয়া যায়। সাহাবায়ে কেরামও পরিবারের সাথে ঘুমানোর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও সহজ পন্থা অবলম্বন করতেন।
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম
পাশ নিয়ে বিভ্রান্তিতে সময় নষ্ট না করে, বরং এই সুন্নতগুলো জীবনে প্রয়োগ করা উচিত-
ইসলামে নেই—এমন অনেক ‘কথিত সুন্নত’ বা ‘লোকাচার’ সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এগুলো থেকে সতর্ক থাকা ঈমানি দায়িত্ব। ইসলাম একটি সহজ ও প্রাকৃতিক জীবনব্যবস্থা; এতে অহেতুক জটিলতা আরোপ করা বিদআতের শামিল।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এমনই পবিত্র ও সুন্দর একটি বন্ধন যেখানে আল্লাহ প্রদত্ত স্বাভাবিকতা ও সহজতা বজায় রাখাই ঈমানদারের কাজ। ‘কোন পাশে ঘুমাব?’—এই প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে ‘যে পাশে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর ঘুম ভালো হয়, আরামদায়ক হয় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় থাকে, সেই পাশেই ঘুমান।
আসুন, আমরা ভিত্তিহীন ধারণার পেছনে ছুটে শরিয়তের প্রকৃত সুন্নতগুলো নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করি। নবীজি (স.)-এর শেখানো ডান কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলি, পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখি এবং ঘুমকে ইবাদতের শক্তি অর্জনের মাধ্যম বানাই।