সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২২, ০৩:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম

মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। তবে তা হতে হবে ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে। তখন সবকিছুর মতো ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়। তাছাড়া ঘুম আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা সম্ভব নয়। যাদের ঘুমের সমস্যা তারাই কেবল জানেন ঘুম কত মূল্যবান নেয়ামত। ইসলামে সবকিছুর সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। ঘুমও এর ব্যতিক্রম নয়।

আমরা অনেকেই উপুড় হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করি। কিন্তু এই অভ্যাসটা ভালো নয়। এভাবে শোয়া সাময়িক আরামদায়ক মনে হলেও এ অভ্যাসের কারণে মেরুদণ্ড, শ্বাসপ্রশ্বাস, শরীরের বিশ্রাম ও ঘুমের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। 


বিজ্ঞাপন


রাসুল (স.) এভাবে শুতে নিষেধ করেছেন। এর কারণ হিসেবে হাদিসে দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১) মহান আল্লাহ এভাবে শোয়া পছন্দ করেন না। ২) এটি জাহান্নামিদের শোয়া। জাহান্নামিদের উপুড় করেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

ইবনে তিখফা আল-গিফারি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাঁকে অবহিত করেন যে, তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার সদস্য। তিনি বলেন, একদা শেষ রাতে আমি মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। আমি উপুড় হয়ে ঘুমে বিভোর অবস্থায় একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন। তিনি আমাকে তাঁর পায়ের সাহায্যে নাড়া দিয়ে বলেন, ওঠো! এই উপুড় হয়ে শুলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আমি মাথা তুলে দেখি যে রাসুল (স.) আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে। (আদবুল মুফরাদ: ১১৯৯)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু জর (রা.) বলেন, ‘আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী (স.) আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তাঁর পা দ্বারা খোঁচা মেরে বলেন, হে জুনাইদিব! এটা তো জাহান্নামের শয়ন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৭২৪)

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বাণী—‘এটা তো জাহান্নামের শয়ন’—এর পক্ষে পবিত্র কোরআনের আয়াতও পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; সেদিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো।’ (সুরা কমার : ৪৮)


বিজ্ঞাপন


চিত হয়ে শোয়াও জায়েজ রয়েছে কিন্তু লজ্জাস্থান যেন প্রকাশিত না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে, ঘুমের সুন্নত ও উত্তম পদ্ধতি হলো—ডান কাত হয়ে শোয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) ডান দিকে কাত হয়ে সবসময় বিশ্রাম নিতেন। হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের ওপর নিদ্রা যেতেন।’ (বুখারি: ৬৩১৫)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) রাতের শেষ দিকে ১১ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। যখন সুবহে সাদিক হতো, তখন তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এরপর তিনি নিজের ডান পাশে কাত হয়ে বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন এসে তাকে নামাজের খবর দিতেন।’ (বুখারি: ৬৩১০)

উল্লেখ্য, নির্জন বাড়ি-ঘরে এবং খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (স.) কোনো ঘরে নির্জন রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন’ (মুসনাদে আহমদ: ৫৬৫০)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কেউ যদি রাতে বেষ্টনীবিহীন ছাদে ঘুমায়, তাহলে (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার ব্যাপারে (আল্লাহর) কোনো দায়িত্ব নেই।’ (আবু দাউদ: ৫০৪১)

চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ডানপাশ হয়ে ঘুমানো ভালো। কারণ, পাকস্থলির খাদ্য শোষণের পথ হলো ডান দিকে। ডান দিকে কাত হয়ে শুইলে খাবার পরিপাকে সুবিধা হয়। খাবার একত্রে আর জমে থাকে না। মুম্বাই হাসপাতালের ডা. কৃষ্ণ লাল বর্মা গবেষণা করে বলেন, যেসব রোগীকে ডান দিকে কাত করে শয়ন করানো হয়েছে, তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে।

মূলত, সুন্নতের মাঝেই অসীম রহমত ও বরকত নীহিত। ডান কাত হয়ে ঘুমানোর পরে কেউ যদি ঘুমানোর অবস্থান পরিবর্তন করেন, তা হলে তার হিসাব আলাদা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমানোর পদ্ধতিসহ দীনের প্রতিটি বিধান সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর