images

ইসলাম

ভালো কাজের পুরস্কার কারা কখন পায়?

ধর্ম ডেস্ক

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম

ভালো কাজের পুরস্কার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হয় না। কেউ দুনিয়ায় পুরস্কার পেয়ে যায়। কেউ আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও পায়। আবার কারো ভালোকাজের পুরস্কার শুধুমাত্র পরকালের জন্য সীমাবদ্ধ। 

যেসব মুমিন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলবে, তাদের প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময় আল্লাহ তাআলা পৃথকভাবে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। প্রতিটি পুরস্কারের স্বাদ, রং ও অনুভব বান্দাকে পুলকিত করবে। সেই পুরস্কারের আবেশে বান্দা বিমোহিত হয়ে থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারা হবে ওই সব জান্নাতের অধিবাসী, যার নিচ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরদিন বসবাস করবে। এটাই হলো বড় পুরস্কার।’ (সুরা বুরুজ: ১১)

আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সৎকাজের অগ্রভাগে থাকে ও যারা আগে পৌঁছে, তারাই জান্নাতে বিশেষ নৈকট্য লাভকারী হবে।’ (সুরা ওয়াকেয়া: ১১০-১১২)

দুনিয়াতে অনেক অমুসলিম আছেন, যারা ভালো কাজে অগ্রগামী। পরোপকার, সততা, সত্যবাদিতাসহ নানাবিধ গুণে গুণান্বিত এসব ব্যক্তিদের ভালো কাজের প্রতিদান কী—তা তাদের ঈমানের দাওয়াত পাওয়া, না পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। যেমন- কেউ ঈমানের দাওয়াত না পেয়ে মারা গেছেন। আবার কেউ দাওয়াত পেয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

আরও পড়ুন: কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান রক্ষার আমল

ঈমান অস্বীকারকারীর ভালো কাজের প্রতিদান
যারা দাওয়াত পাওয়ার পরও ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা প্রত্যাখ্যান করেছে, পরকালে তাদের দুনিয়াবি ভালো কাজগুলো মূ্ল্যহীন হয়ে যাবে। এটিই অধিকাংশ আলেমের মত। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (সুরা ফোরকান: ২৩)। কোরআনের ভাষায় এসব মানুষ পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ‘কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল হবে না এবং সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮৫)

তবে, পার্থিব প্রতিদান দেওয়া হবে তাদের। যেমন সুনাম, সুখ্যাতি, প্রাচুর্য, ক্ষমতা ইত্যাদি দিয়ে তাদের ইহকালীন জীবন সমৃদ্ধ করা হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন কোনো অবিশ্বাসী কোনো ভালো কাজ করে, তখন পার্থিব জীবনে তাদের প্রতিদান দিয়ে দেওয়া হয়। আর কোনো মুমিন ব্যক্তি যখন ভালো কাজ করে, তখন আল্লাহ পরকালে তার জন্য সওয়াব লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং পার্থিব জীবনে তার আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে উত্তম জীবিকা দান করেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮০৮)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ভালো কাজ করে আমি তাদের কাজের প্রতিদান নষ্ট করি না।’ (সুরা কাহাফ: ৩০) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের আমলকে দুনিয়া ও আখেরাতে নিষ্ফল করেন না। কিন্তু যারা শিরক করে, লোক দেখানো আমল করে, গোপন গুনাহে লিপ্ত থাকে এবং কাউকে কিছু দিয়ে খোটা দেয় এবং কথা-কাজে আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। পরকালে তারা ভালো কাজের প্রতিদান পাবে না। (সুরা জুমার: ৬৫; সুরা হুদ: ১৫, ১৬; সুরা বাকারা: ২৬৪; সুরা মুহাম্মদ: ৩৩)

এছাড়াও যারা ঈমান আনবে না পরকালের তাদের নেক আমল নিষ্ফল হবে। কিন্তু দুনিয়াতে তারা বিনিময় লাভ করবে। 

আরও পড়ুন: অন্তরে নেক আমলের ঝোঁক সৃষ্টি হওয়া কীসের আলামত?

ঈমানের দাওয়াত না পাওয়া মানুষের ভালো কাজের প্রতিদান
যাদের কাছে ঈমানের দাওয়াত পৌঁছেনি এবং যারা সত্য জানার সুযোগ পায়নি, একদল আলেমের মতে, তাদেরকে আল্লাহ সরাসরি জাহান্নামে দেবেন না; বরং তাদের থেকে তিনি আনুগত্যের পরীক্ষা নেবেন। যদি অবিশ্বাসী ব্যক্তি আনুগত্য প্রদর্শন করে তবে তাদের জান্নাতে দেবেন। নতুবা জাহান্নামই হবে তাদের ঠিকানা। তারা কোরআনের দুটি আয়াত দিয়ে এর স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করেন। তা হলো—‘আমি রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ১৫)

অন্য আয়াতটি হলো, ‘যখনই তাতে কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তাদের রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে, তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেনি? তারা বলবে, অবশ্যই আমাদের কাছে সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাদের মিথ্যাবাদী গণ্য করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা তো মহাবিভ্রান্তিতে আছো।’ (সুরা মুলক: ৮-৯)

যেভাবে হবে আনুগত্যের পরীক্ষা
আসওয়াদ ইবনে সারি (রা.) বর্ণিত হাদিসে ঈমানহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির থেকে আনুগত্যের পরীক্ষার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে চার ব্যক্তি অনুযোগ করবে। তারা হলো বধির—যে কিছুই শোনে না, নির্বোধ, বৃদ্ধ ও এমন ব্যক্তি যে ফিতরাতের ওপর মারা গেছে। বধির ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ, ইসলাম এসেছিল এবং আমি কিছুই শুনিনি। নির্বোধ বলবে, হে আমার প্রতিপালক, ইসলাম এসেছিল এবং (আমি নির্বোধ বলে) শিশুরা আমার গায়ে ময়লা নিক্ষেপ করছিল। 

বৃদ্ধ বলবে, হে আমার প্রতিপালক, ইসলাম এমন সময় এসেছিল যখন আমি কিছুই বুঝতাম না। আর যে ব্যক্তি ফিতরতের ওপর মারা গেছে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমার কাছে আপনার কোনো রাসুল আসেনি। তখন আল্লাহ তাদের থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকার নেবেন এবং তাদের নির্দেশ দেবেন জাহান্নামে প্রবেশ করতে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তারা যদি তাতে প্রবেশ করে তবে তা তাদের জন্য শীতল ও প্রশান্তিময় হবে। (সহিহ আল-জামে: ৮৮১)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে মুমিন হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। মুমিনদের বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।