আল্লাহ তাআলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। সকল বান্দার প্রতিই তাঁর দয়া অফুরন্ত। কোনো বান্দাকে তিনি বিশেষ কারণে খুব ভালোবাসেন। আল্লাহ যাদের কল্যাণের ইচ্ছা করেন এবং ভালোবাসেন তার কিছু আলামত রয়েছে। এর অন্যতম হলো- দীনের জ্ঞান অর্জন ও নেক আমলের অবারিত সুযোগ। অর্থাৎ কারো যদি নেক আমলের ঝোঁক ও সুযোগ সৃষ্টি হয়, বুঝতে হবে আল্লাহ তার কল্যাণ চান।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের প্রজ্ঞা দান করেন। আল্লাহই দানকারী আর আমি বণ্টনকারী।’ (বুখারি: ৭১; মুসলিম: ১০৩৭; মেশকাত: ২০০)
প্রজ্ঞা বা দীনি জ্ঞান মহান আল্লাহপ্রদত্ত অপার নেয়ামত। অমূল্য এই সম্পদ যাদের নসিব হয়, তারা পরম ভাগ্যবান। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো নসিহত গ্রহণ করে থাকে। (সুরা জুমার: ৯)
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়’ (বুখারি: ৫০২৭)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহর কিছু পরিবারভুক্ত লোক আছে।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন, ‘যারা কোরআনের ধারক-বাহক; এরা আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও তার বিশেষ লোক।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব: ০২/৩০৩)
আর নেক আমলের প্রাত্যহিক অনুশীলনের কারনে আমলকারী ব্যক্তি আল্লাহর মাকবুল বান্দাদের নিকটতম হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। তাই আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান তাকে নেক আমলের সুযোগ দেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকে মৃত্যুর আগে পবিত্র করেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, পবিত্র করেন কীভাবে? তিনি বললেন, মৃত্যুর আগে তাকে নেক আমলের তাওফিক দেন। অতঃপর তার ওপর তার মৃত্যু ঘটান’। (সহিহুল জামে: ৩০৬)
বিজ্ঞাপন
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর বান্দা সম্পর্কে কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে আমল করতে দেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! কীভাবে তিনি আমল করতে দেন? তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে তিনি তাকে নেক আমলের তাওফিক দান করেন’। (তিরমিজি: ২১৪২; মেশকাত: ৫২৮৮)
আল্লাহ তাআলাকে রাজিখুশি করতে হলে নেক আমলের বিকল্প নেই। বেশি বেশি নেক আমলের গুরুত্ব এতই বেশি যে, আল্লাহ তাআলা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নেক কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করো।’ (সূরা মায়েদা: ৪৮)
আরও পড়ুন: যে আমলের জন্য প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন মহানবী (স.)
তিনি আরও ইরশাদ করেন,‘নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, যারা তাদের পালনকর্তার সঙ্গে কাউকে শরিক করে না এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী। (সুরা আল মুমিনুন: ৫৭-৬১)
সুতরাং নেক আমলকারীরা ধন্য। হাদিসের ভাষায় সুমিষ্ট। ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন সে বান্দাকে সুমিষ্ট করেন। জিজ্ঞেস করা হলো সুমিষ্ট কী? তিনি বললেন, মৃত্যুর আগে ভালো কাজ তার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। অতঃপর এর ওপরই তার মৃত্যু হয়’। (আহমদ: ১৭৮১৯; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৪২; সহিহাহ: ১১১৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার মতো দীনি জ্ঞান অর্জন ও নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

