ধর্ম ডেস্ক
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৫৬ পিএম
সত্যের পরিচয় জানতে যথাযথ পথ ও পদ্ধতির অনুসরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সত্য খুঁজে নেওয়া ছাড়া বাঁচার কোনো পথ নেই। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বে সত্যপথ খুঁজে নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশির ভাগ অনুমানেরই অনুসরণ করে। সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোনো কাজে আসে না। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা ইউনুস: ৩৬)
বর্তমান যুগের হাজারো বাতিল থেকে নিজেকে হেফাজত করা, সত্যকে আঁকড়ে ধরা দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এমন এক সময় অতিবাহিত করছি, যখন উম্মতের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর দ্বন্দ্ব। কেউ এদিকে টানছে, কেউ ওদিকে। কী করবে উম্মত? কেমনে খুঁজে পাবে সত্য কোথায়? নাজাতের পথ কোনটি? নবীজি (স.) বলেন, ‘(নাজাতের পথ সেটি) যে পথে আমি ও আমার সাহাবিরা আছি। (জামে তিরমিজি: ২৬৪৮) তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহি ও ভ্রষ্টতা।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭১৪২, ১৭১৪৫)
এখানে কোরআন সুন্নাহয় বর্ণিত সত্যের পরিচয় লাভের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।
১) নিজের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা
নিজের ভুলের ব্যাপারে সচেতন না হলে মানুষ অনেক সময় সত্যের দিশা থেকে বঞ্চিত হয়। মুমিন দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাদেরকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত না করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে করুণা দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)
২) জ্ঞানীদের সান্নিধ্য
জ্ঞানীদের সান্নিধ্য মানুষকে সত্যের পথ দেখায়। কেননা তখন সত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার অবকাশ পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি না জানো, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
আরও পড়ুন: পুণ্যবানদের সঙ্গে থাকার ফজিলত
৩) ইসলামের পথ অনুসরণ করা
আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনদের পথই সত্য পথ। সুতরাং কেউ সত্যের দিশা পেতে চাইলে তাদেরই অনুসরণ করতে হবে। নতুবা পথভ্রষ্ট হওয়ার তীব্র আশঙ্কা আছে। আল্লাহ বলেন, ‘কারো কাছে সুপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস।’ (সুরা নিসা: ১১৫)
৪) প্রতিপক্ষকে অবজ্ঞা না করা
প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও যথাযথ জ্ঞান না থাকলে ব্যক্তি সত্যের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হয়। যেমনটি ইহুদি-খ্রিস্টানরা করে থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদিরা বলে, খ্রিস্টানদের কোনো ভিত্তি নেই। খ্রিস্টানরা বলে, ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবে যারা কিছুই জানে না তারাও অনুরূপ কথা বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার মীমাংসা করবেন।’ (সুরা বাকারা: ১১৩)
৫) সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকা
পূর্ব ধারণা, সমাজে প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও সংস্কারের কারণে মানুষ অনেক সময় সত্য গ্রহণে প্রস্তুত থাকে না। ফলে সে সত্য থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি মানুষের জন্য এই কোরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ অস্বীকার করা ছাড়া ক্ষান্ত হলো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮৯)
আরও পড়ুন: ঈমানের স্বাদ পেতে হলে তিন গুণ জরুরি
৬) স্রোতে গা ভাসানো যাবে না
স্রোতে গা ভাসানোর কারণে অনেক সময় মানুষ সত্যের সন্ধান থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি তুমি বেশির ভাগ মানুষের কথামত চলো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।’ (সুরা আনআম: ১১৬)
৭) বাহ্যিক অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না
বাহ্যিক অবস্থার বিচার করলে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ সত্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কেননা বাহ্যিক অবস্থা ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘গ্রাম্য লোকেরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। বলো, তোমরা ঈমান আননি, বরং তোমরা বলো, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।’ (সুরা হুজরাত: ১৪)
৮) দলিল অনুসন্ধান করা
সত্যপথ খুঁজে পেতে দলিল অনুসন্ধান সবচেয়ে জরুরি বিষয়। তাই সত্যের অনুসন্ধানে অনুমান বা ধারণার অনুসরণ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘বলো, তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত করো যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা বাকারা: ১১১)
৯) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা
সত্য ও সুপথ লাভে ব্যক্তির মেধা, প্রচেষ্টা ও বাহ্যিক উপকরণ যথেষ্ট নয়। এগুলো থেকে বেশি প্রয়োজন আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। তাই সত্যের দিশা পেতে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যাকে ভালোবাস, ইচ্ছা করলেই তাঁকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসারীদের।’ (সুরা কাসাস: ৫৬)
১০) বড় ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে—এ কথার ওপর বিশ্বাস রাখা
বড় ব্যক্তিরও ভুল হতে পারে—এ কথা বিশ্বাসে রাখলে বাতিল থেকে বেঁচে যাওয়া সহজ হয়। এমনকি মানুষের বক্তব্যের একাংশ সঠিক, অন্যাংশ ভুল হতে পারে—সেই বিশ্বাসও রাখতে হবে। এই সচেতনতা হক-বাতিল চিনতে সাহায্য করবে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে স্বপ্নের কথা জানালে আবু বকর (রা.)-এর ব্যাখ্যা করলেন। নবী (স.) বললেন, ‘তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যায় কিছুটা ঠিক বলেছ এবং কিছুটা ভুল করেছ।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩২৬৮)। অতএব, ওস্তাদও যদি এমন কিছু বলেন যে ভুল-ভ্রান্তি দুটোরই অবকাশ রয়ে যায়, অর্থাৎ সুন্নাহয় এ কথার সমর্থনে বক্তব্য পাওয়া যায় না, তাহলে ওই কথা পুরোপুরি আমলে নেওয়া যাবে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক পথের দিশা দিন। সত্যপথ অনুসন্ধানে সহায়তা করুন। আমিন।