রোববার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পুণ্যবানদের সঙ্গে থাকার ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৫:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

পুণ্যবানদের সঙ্গে থাকার ফজিলত

কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নেককার ও পুণ্যবানদের সঙ্গী হতে বলা হয়েছে। এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)

সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়ার মাধ্যমে সৎপথে চলার তাওফিক লাভ হয় এবং এর মাধ্যমে হেদায়াতের পথে চলা সহজ হয়। এ বিষয়ে হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা জিকিরকারীদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন। যখন কোনো জাতিকে আল্লাহর জিকিরে মশগুল দেখেন তারা একে অন্যকে আহ্বান করেন- তোমাদের লক্ষ্যের দিকে এসো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তারা তাদের নিজেদের ডানার মাধ্যমে দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত ঢেকে নেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাদের রব তাদের জিজ্ঞেস করেন—অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জানেন—আমার বান্দারা কী বলে? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা ও মর্যাদা ঘোষণা করছে। তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেশতারা বলেন, না, আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: চার তাসবিহ ১০০ বার করে পড়ার বিস্ময়কর ফজিলত

অতঃপর আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও কঠিন ইবাদত করত, অধিক মর্যাদা ও প্রশংসার ঘোষণা করত, অধিক তাসবিহ পাঠ করত। আল্লাহ বলেন, তারা আমার কাছে কী চায়? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলেন, না, হে রব তারা জান্নাত দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার জন্য আরও অধিক আগ্রহী হতো, অধিক অনুসন্ধানকারী হতো এবং অধিক আশাপোষণ করত। আল্লাহ বলেন, তারা কী থেকে আশ্রয় চায়? ফেরেশতারা বলেন, জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফেরেশতারা বলেন, না, আল্লাহর কসম, হে রব তারা জাহান্নাম দেখেনি। আল্লাহ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে তার থেকে অধিক পলায়ন করত, তাকে অধিক ভয় করত। আল্লাহ বলেন, তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তাদের মধ্যে এক ফেরেশতা বলেন, তাদের মধ্যে অমুক রয়েছে যে তাদের দলভুক্ত নয়, বরং সে অন্য কাজে এখানে এসেছে (তাদের সঙ্গী হয়েছে)। আল্লাহ বলেন, তারা এমন দল, যাদের কারণে তাদের সঙ্গীরাও বঞ্চিত হয় না। (মেশকাত: ২২৬৭; সহিহ বুখারি: ৬৪০৮, সহিহ আত তারগিব: ১৫০২)

আরও পড়ুন: আল্লাহর প্রশংসায় গোটা সৃষ্টিজগত, তাসবিহ দিয়ে শুরু ৭ সুরা 

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার অতিরিক্ত একদল পর্যটক ফেরেশতা রয়েছেন। তারা আল্লাহর জিকিরকারীদের মাজলিস খুঁজে বেড়ান। কোনো মাজলিস পেয়ে গেলে তাদের সঙ্গে বসে পড়েন। একে অন্যের সঙ্গে পাখা মিলিয়ে জিকিরকারীদের হতে নিকটতম আসমান পর্যন্ত সব জায়গাকে ঘিরে নেন। মাজলিস ছেড়ে জিকিরকারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ফেরেশতারা আকাশের দিকে এবং আরও উপরের দিকে উঠে যান। তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, অথচ ব্যাপারটি তিনি জানেন, তোমরা কোথা হতে এলে? তারা উত্তরে বলেন, আমরা আপনার এমন বান্দাদের কাছ থেকে এসেছি যারা জমিনে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, মহত্ব ও একত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, আপনার প্রশংসা করছে, আপনার কাছে দোয়া করছে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা আমার কাছে কী চায়? ফেরেশতারা বলেন, আপনার জান্নাত চায়। তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তারা বলেন না, দেখেনি হে রব! তখন আল্লাহ বলেন, কেমন হত যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: জান্নাতের প্রাসাদ কেমন হবে?

তারপর ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার কাছে মুক্তিও চায়। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, তারা কোন জিনিস হতে মুক্তি চায়? তারা বলেন, আপনার জাহান্নাম থেকে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না হে আল্লাহ! তখন তিনি বলেন, কেমন হত যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতে পেত। তারপর তারা বলেন, তারা আপনার কাছে ক্ষমাও চায়। তখন আল্লাহ বলেন, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তাদেরকে আমি দান করলাম যা তারা আমার কাছে চায়। আর যে জিনিস হতে তারা মুক্তি চায় তার থেকে আমি তাদেরকে মুক্ত করে দিলাম। ফেরেশতা তখন বলেন, হে রব! তাদের অমুক ব্যক্তি তো খুবই পাপী। সে তো পথ দিয়ে যাবার সময় তাদের সঙ্গে বসে গেছে। তখন আল্লাহ বলেন, তাকেও আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারা এমন একদল যাদের সঙ্গী-সাথীরাও বঞ্চিত হয় না। (মেশকাত: ২২৬৭)

আরও পড়ুন: বন্ধু নির্বাচনে ভুল আখেরাতে আফসোসের কারণ

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, পুণ্যবানদের সঙ্গী হওয়ার মাধ্যমেও পুণ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বস্তুত সত্যবাদী ও সৎকর্মশীলদের সংস্পর্শ মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে, সঠিক পথ দেখায়। ভালো মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। বর্তমান পরিবেশে পাপাচার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই কঠিন। তাই এ পরিবেশে তাকওয়া অবলম্বনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো আল্লাহভীরু লোকদের সোহবত ও সাহচর্যে থাকা। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নেক আমল করার এবং নেক আমলকারীদের সঙ্গী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর