images

ইসলাম

টানা ৩ জুমা ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি

ধর্ম ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২৯ এএম

জুমার নামাজ সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, জুমার দিন যখন তোমাদের নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও।’ (সুরা জুমা: ৯)

জুমা আরবি শব্দ। অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ আদায় করে, সেজন্য এই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’ বলা হয়। 

আরও পড়ুন: ইতিহাসের প্রথম জুমা ও খুতবা

জুমার নামাজ আদায়ের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। আবার এই নামাজ অনাদায়ে কঠিন পরিণতির কথা বলা হয়েছে হাদিসে। টানা তিন জুমা আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে মহানবী (স.) এক হাদিসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পরপর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি: ১০৫২; তিরমিজি: ৫০২; মুসলিম: ১৯৯৯)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।

শরিয়তসম্মত ওজর ছাড়া জুমা পরিত্যাগ করার সুযোগ ইসলামে নেই। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)

আরও পড়ুন: টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত

কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল, মুকিম পুরুষের জন্য জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। ৫ ওয়াক্ত নামাজই মুসলিমদের একটি নিদর্শন ও ইসলামের অন্যতম রোকন। যারা নামাজ ত্যাগ করে তাদের ব্যাপারে ইসলামে কঠিন কথা বলা আছে। হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)।  নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। তাই জুমা ও যেকোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

মনে রাখতে হবে, জুমার দিন খুবই মর্যাদাপূর্ণ দিন। জুমার দিনের অনেক ফজিলতপূর্ণ আমলের কথা বিভিন্ন হাদিসে আলোচিত হয়েছে। জুমার দিন গোসল করা, নামাজে উপস্থিত হওয়া ও খুতবা শোনার ফজিলতের ব্যাপারে আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে, এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৫)

আরও পড়ুন: নফল ইবাদত কোনটার পর কোনটার বেশি সওয়াব?

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন—‘আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পৃথিবীর দিবসগুলোকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুমার দিনকে আলোকোজ্জ্বল ও দীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুমা আদায়কারীরা আলো দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে। এটি তাকে প্রিয় ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তারা আলোবেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মতো উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কর্পূরের পর্বত থেকে সঞ্চিত মিশকের (বিশেষ সুরভি) মতো। তাদের দিকে জ্বিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফেরাতে না ফেরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সঙ্গে একনিষ্ঠ সওয়াব প্রত্যাশী মুয়াজ্জিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ১০২৭; সহিহ ইবনে খুজায়মা: ১৭৩০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়ার তাওফিক দান করুন। জুমা কিংবা ওয়াক্তিয়া নামাজ ছেড়ে দেওয়ার মতো আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।