images

ইসলাম

রিয়াজুল জান্নাহ: পৃথিবীতে এক টুকরো জান্নাত

ধর্ম ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৩ পিএম

নবীজির শহর মদিনা মুনাওয়ারা। এক স্বর্গীয় নগরী। এ নগরীর পরতে পরতে নবীজির স্মৃতি। মদিনার প্রাণকেন্দ্র হলো 'মসজিদে নববি। এখানে সবুজ গম্বুজের নিচে শায়িত দো-জাহানের মহান নেতা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স.)। নবীজির জীবদ্দশা এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়কাল পর্যন্ত মসজিদে নববিই ছিল তৎকালীন মুসলমানদের মূলকেন্দ্র। এখান থেকেই পরিচালিত হত মুসলিম বিশ্ব। ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা সবদিক থেকেই মুসলমানদের কাছে মসজিদে নববির গুরুত্ব অপরিসীম। 

এ সবের পাশাপাশি মসজিদে নববির মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের অংশ। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমার ঘর (বর্তমান দাফনের স্থান) ও মিম্বরের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগানগুলোর একটি আর আমার মিম্বর আমার হাউজের উপর অবস্থিত। (বুখারি:১১৯৬, ১১২০; মুসলিম: ২৪৬৩)

রিয়াজুল জান্নাতকে মসজিদে নববির মূল কেন্দ্র বিবেচনা করা হয়। জায়গাটি মসজিদে নববির সব থেকে মঙ্গলজনক জায়গা। বর্তমানে এই জায়গায় সবুজ-সাদা রঙের কার্পেট বিছানো। মসজিদের অন্য কার্পেটগুলো লাল রঙের। ভিন্ন রঙের কার্পেট দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না রিয়াজুল জান্নাতের সীমানা। ওপরে রয়েছে বাহারি লাইট ও ঝাড়বাতি।

আরও পড়ুন: মসজিদে নববির ইতিহাস

ফজিলতপূর্ণ এই জায়গাতে জিকির-আজকার, নামাজ ও ইবাদত করার আকাঙ্ক্ষা থাকে প্রত্যেক মুমিনের। তাই হজ-ওমরা করতে যাওয়া প্রত্যেকেই ছুটে যান মসজিদে নববিতে। রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়ে তারা জীবনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন। ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সালামা বিন আকওয়ার সঙ্গে আসতাম এবং মুসহাফের নিকটবর্তী পিলারের কাছে নামাজ পড়তাম। অর্থাৎ রিয়াজুল জান্নাতে। আমি বললাম, হে আবু মুসলিম, আপনাকে দেখি এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে বেশি আগ্রহী? তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে এ পিলারের কাছে নামাজ পড়তে আগ্রহী দেখেছি। (বুখারি: ৫০২; মুসলিম: ৫০৯)

রিয়াজুল জান্নাতের ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ বা খুঁটি রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বলে। এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে মুসলিম শাসকরা মসজিদে নববির দেখভাল ও পরিচর্যা করেন। উসমানি সুলতান ‍সেলিম রওজা শরিফের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। আরেক উসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সব বাদশাহর তুলনায় উৎকৃষ্ট পাথর দিয়ে রওজার এই খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওজার মেঝেতে দামি কার্পেট বিছিয়ে দেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ৬ মসজিদ

রিয়াজুল জান্নাতে অবস্থিত খুঁটিগুলো হলো-
১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা (রা.)-এর খুঁটি।
২. উসতুওয়ানাতুল-উফুদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি।
৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি।
৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি।
৫. উসতুওয়ানাতুস-সারির বা খাটের সঙ্গে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি।

রিয়াজুল জান্নাত দোয়া কবুলের স্থান। যে কারণে জায়গাটি সবসময় লোকারণ্য হয়ে থাকে। মুসলিমরা সবসময় ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এখানে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন। রিয়াজুল জান্নাত সম্পর্কে কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে। ইবনে হাজাম (রা.) বলেন, রিয়াজুল জান্নাতকে জান্নাতের বাগান বলা হয়েছে রূপকভাবে। ওলামায়ে কেরামদের মতে, এখানে জিকির করলে রহমত ও সৌভাগ্য লাভ করা যায়। নুরুদ্দিন সামহুদির লেখা অফা আল অফার দ্বিতীয় খণ্ডে বর্ণিত, রিয়াজুল জান্নাতে ইবাদত বেহেশতের বাগানে পৌঁছায় এই অর্থে ও তা রূপক অর্থবোধক। আল্লাহ এই স্থানটুকু হুবহু বেহেশতে স্থানান্তর করবেন। এই অংশ অন্যান্য জমিনের মতো নয়। পবিত্র স্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ রাখি।

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি

রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের জন্য নারী-পুরুষদের আলাদা আলাদা প্রবেশদ্বার রয়েছে। পুরুষদের জন্য স্থানটি সাধারণত তাহাজ্জুদের সময় খোলা হয়, পরে আবার সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে যাওয়া যায়। নারীরা সেখানে যেতে পারেন ফজর, জোহর ও এশার নামাজের পর।

রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ আদায় হজ কিংবা ওমরা পালনের কোনো শর্ত নয়। অতএব, প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে যদি আপনি সেখানে যেতে ব্যর্থ হন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। শুধু দোয়া করুন, যেন আপনি সেখানে যাওয়ার সুযোগ পান। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ এখানে তাড়াহুড়ো করে, ধাক্কাধাক্কি করে। এর ফলে অনেক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে দুনিয়ার জান্নাতের বাগান দেখার ও তাতে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।