ধর্ম ডেস্ক
০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১৩ পিএম
মানুষ সাধারণত পার্থিব সাফল্যকেই বড় সফলতা মনে করে। অথচ নেককার বান্দার কাছে প্রকৃত সফলতা হচ্ছে পরকালের সফলতা। এটিই নেককার বান্দার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হওয়ার মূল কারণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই হবে প্রকৃত সফল। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
একজন মুমিনকে প্রকৃত সফলতার জন্য যেসব গুণাবলি অর্জন করতে হয় তা পবিত্র কোরআনে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ওসব গুণ অর্জনের কারণে সবার মধ্যে তার বিশেষত্ব ফুটে ওঠে। যেমন—
শিরক থেকে মুক্ত থাকা
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা শিরক থেকে মুক্ত থাকার গুণে গুণান্বিত। কারণ শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ। যে গুনাহের ক্ষমা নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এটি ছাড়া সব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৭)
আরও পড়ুন: হাদিসে ৭টি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
রাত জেগে ইবাদত করা
রাত জেগে ইবাদত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আমল। কেননা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য রাতের ইবাদত বেশি উপযোগী। ইবাদতে রাত কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ সময়টি নিদ্রা ও আরামের। এতে সালাত ও ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া যেমন বিশেষ কষ্টকর, তেমনি এতে লোক দেখানো ও নাম-যশেরও আশঙ্কা নেই। এজন্য রাসুল (স.) তার প্রিয় সাহাবাদের রাতের ইবাদত (তাহাজ্জুদ) পড়ার জন্য তাগিদ দিতেন। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের পিঠ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, নিজেদের রবকে ডাকতে থাকে আশায় ও আশঙ্কায়।’ (সুরা সাজদাহ: ১৬)
মূর্খদের এড়িয়ে চলা
জাহেল মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, যদিও তারা আক্ষরিক অর্থে জ্ঞানী হয়। আল্লাহর বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করলে তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। হয়ত চুপ থাকে নয়তো মার্জিত ভাষায় উত্তর দেয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যখন তারা কোনো বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আমাদের কাজের ফল আমরা পাব এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সঙ্গে কথা বলি না।’ (সুরা কাসাস: ৫৫)
আরও পড়ুন: আলেমের মর্যাদা ও বিদ্বেষপোষণের পরিণতি
নম্রভাবে চলাফেরা করা
নেককার ব্যক্তিরা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। গর্বভরে চলে না, অহংকারীর মতো পা ফেলে না। বুক ফুলিয়ে চলে না। দুনিয়ার প্রথম গুনাহের সৃষ্টি এই অহংকারের মাধ্যমে। অহংকারের মাধ্যমেই ইবলিস চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে তিল পরিমাণ অহংকার থাকবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যার অন্তরে তিল পরিমাণ ঈমান রয়েছে সে জাহান্নামে যাবে না।’ (মুসলিম: ৯১)
সম্পদ ব্যয়ে পরিমিতিবোধ
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, আর কৃপণতাও করে না; এ দুইয়ের মধ্যবর্তী পন্থা গ্রহণ করে।’ (সুরা ফোরকান : ৬৭)। অপব্যয় ও কৃপণতা—এ দুটির মাঝে সমতা রক্ষা করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে ঘোষণা করেছেন। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও হ্রাস পায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)
খুন-খারাবি ও ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকা
মুমিন ব্যক্তি কখনও খুন-খারাবিতে লিপ্ত হতে পারে না এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। মানব হত্যা ও ব্যভিচার আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত পাপ। মানব হত্যার পরকালীন বিধান সম্বন্ধে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
আরও পড়ুন: হিংসা-বিদ্বেষ না থাকা জান্নাতিদের গুণ
রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহর চেয়ে রাগী আর কেউ নেই, তিনি রাগ করেন তাঁর সেই বান্দা-বান্দির প্রতি, যারা ব্যভিচার করে। আল্লাহর শপথ, আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, তাহলে অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে!’ (বুখারি: ১০৪৪)
মিথ্যা পরিহার করা
আল্লাহর সৎ বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা জেনে-শুনে সকল প্রকার মিথ্যা কথা বা এ ধরনের মজলিসে উপস্থিত হয় না এবং আজে-বাজে কথা ও কাজ দেখা বা শোনা অথবা তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। হাদিসে মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।
নেক আমলে মনোনিবেশ
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ শুধু নিজের নেক আমল ও নিজের সংশোধন নিয়েই তৃপ্ত থাকেন না। বরং তাদের পরিবার-পরিজনের সংশোধনের ব্যপারেও সচেষ্ট থাকেন। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা প্রার্থনা করে; হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেবে আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফোরকান: ৭৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেককার বান্দার সকল গুণাবলী অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।