ধর্ম ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৪ পিএম
আজকাল গালিগালাজ অনেকের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ায় প্রতিপক্ষ বা অপছন্দের মানুষকে গালি দেওয়া এখন স্বাভাবিক বিষয়। এছাড়াও অধীনস্থ বা নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলার সময়ও কিছু অশালীন শব্দ যোগ করেন অনেকে। অথচ এটি ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত কাজ।
বৈধ কিংবা অবৈধ—কোনও কারণেই কাউকে গালি দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এমনকি হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয় ও নিন্দনীয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব: ৫৮)
গালি দেওয়া মুনাফিকের একটি আলামত। হাদিসে এসেছে, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান, সে খাঁটি মুনাফিক। এর একটি হলো- ‘বিবাদে লিপ্ত হলে সে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩৪) বাকি তিনটি হলো- কথায় কথায় মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা (বুখারি, কিতাবুল ঈমান: ১/৮৯, ৫/২৮৯, ৩৭৫; সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান: ১/৭৮, হাদিস: ৫৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি: ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি: ১৯৮৩)
আরও পড়ুন: কাউকে ট্রল করার গুনাহ কেমন?
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘পরস্পর গাল-মন্দকারী উভয়েই শয়তান। তারা (গালিগালাজের মাধ্যমে মূলত) পরস্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৮৩৬)
কেউ গালিগালাজ করলে প্রত্যুত্তরে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। কারো গোপন বিষয় জানা থাকার পরও তাকে সেই বিষয়ের উল্লেখপূর্বক গালি না দেওয়ার অনেক সওয়াব রয়েছে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন কোনও ব্যক্তি তোমাকে তোমার সে বিষয় নিয়ে গালি দেয়— যা সে জানে, তখন তুমি সেই ব্যক্তিকে সেই বিষয় ধরে গালি দিয়ো না— যা ওর মধ্যে আছে এবং তুমি তা জানো। এতে তোমার পুণ্য লাভ হবে এবং তাকে নিতে হবে পাপের বোঝা। (সহিহুল জামে: ৫৯৪)
জাবের বিন সুলাইম হুজাইমি (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘...যদি কোনও ব্যক্তি তোমাকে গালি দেয় এবং যে ত্রুটি তোমার মধ্যে নেই— তা নিয়ে তোমাকে লজ্জা দেয়, তাহলে তুমি তাকে সেই ত্রুটি নিয়ে ওকে লজ্জা দিয়ো না, যা ওর মধ্যে আছে। তাকে উপেক্ষা করে চলো। তার পাপ তার উপর এবং তোমার পুণ্য তোমার জন্য। আর অবশ্যই কাউকে গালি দিয়ো না। (ইবনে হিব্বান: ৫২১, ত্বায়ালিসি: ১২০৮, সহিহুল জামে: ৯৮)
আরও পড়ুন: অন্যকে নিয়ে হাসাহাসি করার গুনাহ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হচ্ছে সমাজের সকল মানুষের প্ল্যাটফর্ম। এখানে কাউকে গালাগালি বা ব্যঙ্গ করা কঠিন গুনাহ। কারণ এই প্ল্যাটফর্মে সবকিছু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এখানে এক ভাই আরেক ভাইয়ের দোষচর্চা বা গালিগালাজ নয়, বরং কল্যাণ কামনা করা উচিত। মুমিন পরস্পরের কল্যাণকামী হবে—মূলত সেটাই নবীজির শিক্ষা। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমার কাছ থেকে তিনটি বিষয়ে ‘বাইআত’ নিয়েছেন।’ সালাত কায়েম করব, জাকাত আদায় করতে থাকব এবং প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করব।’ (বুখারি: ৫৫)
উল্টো যদি দোষচর্চা ও গালিগালাজ করা হয়, তা হবে সুন্নাহপরিপন্থী কাজ এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। অনেকে বিষয়টিকে ছোট গুনাহ মনে করে থাকেন। তাদের ধারণা- একটু গালাগালি করলাম, এ আর এমন কী! তাদের চিন্তা করা উচিত- মানুষকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়গুলো ছোট হলেও আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বড়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর: ১৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কথা কেউ কেউ বলে, অথচ সে জানে না এটা কতদূর গিয়ে গড়াবে (অর্থাৎ সে কোনও গুরুত্বের সঙ্গে বলেনি) অথচ এর কারণে সে জাহান্নামের আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও বেশি গভীরে পৌঁছবে।’ (বুখারি: ৬৪৭৮; মুসলিম: ২৯৮৮)
সুতরাং কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা সামনাসামনি কিংবা অবর্তমানে গালি দিয়ে থাকলে অবশ্যই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া জরুরি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার (কোনও মুসলিম) ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করেছে অথবা কোনও বিষয়ে জুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়— ওইদিন আসার আগে, যেদিন দিনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোনও নেক আমল থাকে, তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনও নেকি না থেকে, তবে তার সঙ্গীর পাপরাশি তার (জালেমের) ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২৪৪৯, ৬৫৩৪; মুসনাদ আহমদ: ৯৩৩২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কাউকে গালিগালাজ, কারো বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক শব্দপ্রয়োগ, গিবত, অপবাদ ইত্যাদি কঠিন গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।