কাউকে নিয়ে মজা করা বা হাসাহাসি করা নিন্দনীয় কাজ। ইসলামে এমন আচরণের সুযোগ রাখা হয়নি। মুমিন কখনো তার অপর ভাইকে হাসাহাসি, মজা করতে পারে না। যাকে নিয়ে মজা করা হয়, তিনি কষ্ট পেতে পারেন। আর কাউকে কষ্ট দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি মারাত্মক গুনাহের কাজ। সামান্য একটু কষ্টদায়ক কথার পরিমাণ ও উত্তম কথার বিনিময় কী হতে পারে, তা নিচের হাদিস থেকেই বুঝা যায়। আবু আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন—
‘মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তাআলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মুসনাদে আহমদ: ১৫৮৫২; তিরমিজি: ২৩১৯; ইবনে মাজাহ: ৩৯৬৯)
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও স্মরণ রাখা উচিত যে, আপনি যাকে নিয়ে মজা করছেন, তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে আপনার চেয়ে বেশি পছন্দনীয় বান্দা হতে পারেন। কিন্তু আপনি সেটি জানেন না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীনিদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা রো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।’ (সুরা হুজরাত: ১১)
সুতরাং মুমিন মাত্রই কথাবার্তায় সংযত থাকতে হবে। একজন মুমিন কাউকে ইশারা-ইঙ্গিতে বা কথার মাধ্যমে আহত করতে পারেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৮৪)
তাছাড়া, অর্থহীন কথা পরিহার করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’(সহিহ মুসলিম: ৪৭)
বিজ্ঞাপন
মানুষকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যেও অনর্থক কথা বলার অনুমতি নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা সেগুলোকে হাসিঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (সুরা লুকমান : ৬)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, কাউকে নিয়ে মজা করা তো দূরের কথা, মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যও অনর্থক কথা জাহান্নামে নিয়ে যাবে। সুতরাং মানুষকে নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে না। বরং, সম্ভব হলে সুন্দর আচরণ করতে হবে। কেননা উত্তম ও সুন্দর কথাকে সদকার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিনেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর সদকা দেওয়া আবশ্যক। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকাস্বরূপ। সুন্দর কথা বলা সদকাস্বরূপ। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকাস্বরূপ। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকাস্বরূপ।’ (সহিহ মুসলিম: ১০০৯)
এমনকি সুন্দর কথা ও উত্তম ব্যবহার মানুষকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদি ইবনে হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো, যদিও তা খণ্ডিত খেজুরের বিনিময়েও হয়। কেউ যদি তা করতেও সক্ষম না হয়, সে যেন অন্তত ভালো ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে হলেও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচায়। (সহিহ বুখারি: ৬৫৪০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অযথা হাসি-তামাশার গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। উত্তম আচরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

